E-Paper

সিঁদুর-সাফল্য তুলে ধরল ‘ফর্মেশন বরাক’

ব্রহ্মপুত্রের বুকে শরাইঘাট যুদ্ধের আহোম সেনাপতি লাচিত বরফুকনের মূর্তির পিছনে উত্তর-গুয়াহাটির পাহাড়। সেদিক থেকে উড়ে আসা ‘সারং’ কপ্টার বাহিনী আর ‘সূর্যকিরণ’ বিমানের দল কখনও আকাশ সাজিয়ে দিল তেরঙায়, কখনও দুই পাশে সাদা ধোঁয়ার মধ্যিখানে, নীল আকাশ রাঙিয়ে দিল লাল সিঁদুরে।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৫ ১০:২০
অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য উদ্‌যাপন ও সৈন্যদের বীরত্বকে শ্রদ্ধা জানাতে সারং কপ্টার বাহিনীর বিশেষ প্রদর্শনী।

অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য উদ্‌যাপন ও সৈন্যদের বীরত্বকে শ্রদ্ধা জানাতে সারং কপ্টার বাহিনীর বিশেষ প্রদর্শনী। —নিজস্ব চিত্র।

‘ফর্মেশন বরাক’! একসঙ্গে উড়ে আসছে চার পরাক্রমী। বাঁয়ে রাশিয়ান সুখোইয়ের পেটে উঁকি দিচ্ছে ব্রহ্মস। তার পাশেই ফরাসি রাফালের ডানার নীচে উঁকি দিচ্ছে স্ক্যাল্প ক্ষেপণাস্ত্র। লাইনে তৃতীয় দেশীয় তেজস, শেষে ফরাসি মিরাজ-২০০০। চার জনের ডানার ডাইনে-বাঁয়ে আরও রয়েছে আর-২৭, আর-২৩ ক্ষেপণাস্ত্র।

ব্রহ্মপুত্রের বুকে শরাইঘাট যুদ্ধের আহোম সেনাপতি লাচিত বরফুকনের মূর্তির পিছনে উত্তর-গুয়াহাটির পাহাড়। সেদিক থেকে উড়ে আসা ‘সারং’ কপ্টার বাহিনী আর ‘সূর্যকিরণ’ বিমানের দল কখনও আকাশ সাজিয়ে দিল তেরঙায়, কখনও দুই পাশে সাদা ধোঁয়ার মধ্যিখানে, নীল আকাশ রাঙিয়ে দিল লাল সিঁদুরে। মে মাসে হওয়া ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে এটাই ভারতীয় বায়ুসেনার প্রতিষ্ঠা দিবসের প্রথম অনুষ্ঠান। তাই ৯৩ তম প্রতিষ্ঠা দিবসকে অপারেশন সিঁদুরের সাফল্যের বিজ্ঞাপন হিসেবেই তুলে ধরা হল। শুধু দেশের দর্শকদের কাছে নয়, প্রায় ৩০টি দেশের সেনাকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল গুয়াহাটির বিমান প্রদর্শনীতে। তাঁদের সামনেই বিশেষ ও ব্যতিক্রমী ‘বরাক ফর্মেশন’ হাজির করল বায়ুসেনা। সাধারণত, শান্তিকালীন সময়ে প্রদর্শনীর বিমানে কখনও ‘পেলোড’ বা বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্র বহন করা হয় না। কিন্তু ইস্টার্ন এয়ার কমান্ডের কমান্ডার এয়ার মার্শাল সুরত সিংহ স্পষ্ট জানালেন, অপারেশন সিঁদুরে যে সব বিমান ও অস্ত্র ব্যবহার করে সাফল্য মিলেছিল, এ বারের প্রদর্শনীতে ইচ্ছে করেই সেই সব বিমানে সেই সব অস্ত্র লাগিয়ে সকলের সামনে ওড়ানো হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন নজিরবিহীন শক্তি প্রদর্শনের জন্য উত্তর-পূর্বকে বেছে নেওয়ার মাধ্যমে এক দিকে চিন ও অন্য দিকে বাংলাদেশকেও কড়া বার্তা দেওয়া হল। বিশেষত বাংলাদেশের একটি গ্রাফিক্স বইয়ের মানচিত্রে উত্তর-পূর্বকে অন্তর্ভুক্ত করে সে দেশের মানচিত্র আঁকা ও বাংলাদেশে ক্রমাগত পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ প্রভাব বৃদ্ধির ফলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে এখন টানাপড়েনের রেশ চলছে। তার উপরে, ভারত সীমান্তের কাছে লালমণিরহাটে বাংলাদেশ চিনের সাহায্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার বিমানঘাঁটি নতুন করে গড়ে তুলছে।

এই প্রেক্ষাপটে, শুধু যুদ্ধবিমানই নয়, আমেরিকা থেকে কেনা সর্বাধুনিক অ্যাটাক হেলিকপ্টার অ্যাপাচেও রবিবার গুয়াহাটির আকাশ কাঁপাল। উল্লেখযোগ্য ভাবে বিমান মহড়ায় বরাবরের ‘মেগাস্টার’ সুখোই আর নয়া ‘হার্টথ্রব’ রাফালের পাশাপাশি এ দিন সবচেয়ে বেশি হাততালি কুড়িয়েছে দেশে তৈরি তেজসের উড়ান-কসরৎ। বায়ুসেনার জন্য নতুন কেনা সি-২৯৫ ট্যাকটিক্যাল ট্রান্সপোর্ট বিমানও অংশ নিল প্রদর্শনীতে। এ ছাড়াও ছিল রাশিয়ান মিগ-২৯, ব্রিটিশ জাগুয়ার, মার্কিন সি ১৩০ হারকিউলিস বিমান, সি-১৭ গ্লোবমাস্টার বিরাট পরিবহণ বিমান, আকাশে জ্বালানি ভরার ট্যাঙ্কার রাশিয়ান আইএল ৭৮।

ওয়াকিবহাল শিবিরের মতে, এতগুলি দেশের প্রতিনিধিকে বিমান প্রদর্শনীতে ডেকে তেজসের রফতানি সম্ভাবনা বাড়ানোর পাশাপাশি বায়ুসেনার বিমান ও সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রেও আলোচনার রাস্তা খুলতে চাইছে ভারত।

বায়ুসেনার প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিংহ বলেন, “উত্তর-পূর্বের মানুষ যে উৎসাহ দেখিয়েছেন তা আশাব্যঞ্জক। আশা করি, এখানকার মানুষ আরও বেশি করে বায়ুসেনায় যোগ দেবেন।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Operation Sindoor guwahati

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy