E-Paper

কাঁটাতারে পুজোর আনন্দ আটকায় না গোবিন্দপুরে

করিমগঞ্জ জেলায় এই সময়ে মোট আটটি গ্রাম রয়েছে কাঁটাতারের ও পারে। সীমান্ত থেকে দেড়শো গজ দূরে কাঁটাতারের বেড়া বসানোর দরুন এরা মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন।

উত্তম সাহা

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:৫৮
durga puja.

—প্রতীকী ছবি।

কাঁটাতারের ও-পার থেকে বেরিয়ে পুজো দেখায় নানা ঝক্কি। অসময়ে বেরোতে বিএসএফের অনুমতি নেওয়া, ঘড়ির কাঁটা ধরে ৩৬ নং গেটে হাজির হওয়া, মহার্ঘ দরে গাড়ির ব্যবস্থা করা, আরও কত কী! বাংলাদেশের সঙ্গে অবশ্য অসমের করিমগঞ্জ জেলার গোবিন্দপুরে কোনও বেড়া নেই। কিন্তু ভারত-বাংলাদেশ সীমানাসূচক পিলার পেরিয়েই বিয়ানিবাজারের শারোপা মুসলমান প্রধান গ্রাম। এ ছাড়া, বেশ কয়েক বছর ধরে বিএসএফের মতোই কঠোর বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড। সে দেশে গিয়েও পুজো দেখার কোনও সুযোগ নেই৷

তাই জৌলুস না থাকলেও গুরুত্ব হারায়নি গোবিন্দপুরের পুজো। বরং তা দিন দিন বাড়ছে বলেই জানালেন সত্তরোর্ধ্ব জিতেন্দ্র নমঃশূদ্র, আটচল্লিশের সুনীল নমঃশূদ্র। বিধবা সুলেখা নমঃশূদ্র, তরুণী ফাল্গুনীও বললেন, ছেলেরা তবু পুজোর এক দিন দল বেঁধে বিএসএফের
অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। কিশোরী কি বৃদ্ধা, মহিলাদের আনন্দে রাখে পাড়ার পুজোই।

করিমগঞ্জ জেলায় এই সময়ে মোট আটটি গ্রাম রয়েছে কাঁটাতারের ও পারে। সীমান্ত থেকে দেড়শো গজ দূরে কাঁটাতারের বেড়া বসানোর দরুন এরা মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। গ্রামে গ্রামে গেট রয়েছে। সকাল ৭টায় খোলা হয়, সন্ধ্যা ৭টায় ফের বন্ধ। আগে এমন গ্রামের সংখ্যা আরও অনেক ছিল। কাঁটাতারের যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে অনেকে এ পারে জমি
কিনেছেন, বাড়ি গড়েছেন। কেউ কেউ সরকারি সহায়তা পেয়ে মূল ভূখণ্ডের বাসিন্দা হয়েছেন।

গোবিন্দপুরেও কয়েক বছর আগে ৭৫টি পরিবার বসবাস করত। তোতা মিঞা ও মোজাইদ আলি পরিবারের সবাইকে নিয়ে পাকাপাকি ভাবে বাংলাদেশে চলে গিয়েছেন।
বিভিন্ন সময়ে ৩২টি হিন্দু পরিবার কাঁটাতারের বাঁধন থেকে বেরিয়ে এসেছেন। এখন সেখানে ৪১টি পরিবার। দু’টি পরিবার মুসলমান, বাকিরা হিন্দু এবং সবাই বাঙালি।

প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য বদরুল হক জানান, তাঁদের মূল বাড়ি ছিল পাশের গ্রাম কুড়িখলায়। দেশভাগের কয়েক বছর আগে তাঁর বাবা গোবিন্দপুরে জমি কিনে বাড়ি করেন। তাঁর কথায়, “তখন কে আর জানত, কুড়িখলা স্বাধীন হলে গোবিন্দপুর কাঁটাতারে আটকে পড়বে!” তবে রাস্তাঘাট, কর্মহীনতা ইত্যাদি নানা সমস্যা থাকলেও পাড়ায় সম্প্রীতির পরিবেশ অটুট বলেই দাবি তাঁর। বললেন, দুর্গাপূজার তিন দিন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মণ্ডপেই সময় কাটান। সকলের সঙ্গে আনন্দ-ফুর্তি করেন।

কবে শুরু হয়েছিল পাড়ার শারদ-বন্দনা, বলতে পারেন না প্রবীণেরাও। সকলের এককথা, “ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি। বাবা-ঠাকুর্দার মুখেও শুনেছি এই পুজোর নানা গল্প।” তখন দুর্গামায়ের গোবিন্দপুরে প্রবেশে গেট পেরোনোর বিষয় ছিল না। এখনও মায়ের সপরিবারে আসা-যাওয়ায় অবশ্য গেট প্রতিবন্ধক নয়, জানালেন নিখিল নমঃশূদ্র, বিনন্দ নমঃশূদ্ররা। করিমগঞ্জ শহর থেকে মূর্তি আনা হয়। বিসর্জনও বেড়ার এ পারে, লাতু সেতুর ধারে কুশিয়ারা নদীতে। “প্রতিমা নিয়ে ঢুকতে-বেরোতে ছাড় দেয় বিএসএফ।

পুজোর নানা কাজেই সীমান্ত রক্ষীদের সাহায্য মেলে,” কৃতজ্ঞতার সঙ্গেই জানালেন গ্রামবাসী।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja 2023 Bangladesh India

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy