E-Paper

লন্ঠনের তিরে কমিশন, উত্তেজনার পারদ বিহারে

ফল কার পক্ষে যাচ্ছে, সেই প্রশ্নে টানাপড়েনের মধ্যেই দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে শেষ লগ্নে অভিযোগের বড়সড় ঝাঁপি খুলে বসেছে প্রধান বিরোধী দল আরজেডি।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:৪৫
দ্বিতীয় দফার জন্য তৈরি ভোট-কেন্দ্র। জহানাবাদে।

দ্বিতীয় দফার জন্য তৈরি ভোট-কেন্দ্র। জহানাবাদে। —নিজস্ব চিত্র।

প্রথম দফার ভোটের পরেই দু’পক্ষের বিজয় ভেরী বাজানো হয়ে গিয়েছে! তার পরে জারি আছে স্নায়ুষুদ্ধে পরস্পরকে চাপে রাখার কৌশল। আর তারই সঙ্গে যোগ হয়েছে সন্দেহের চোরা স্রোত! এই তুঙ্গ উত্তেজনা গায়ে মেখেই দ্বিতীয় ও শেষ দফার ভোট দিতে চলেছে বিহার।

বিহারের এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে সব চেয়ে চর্চিত শব্দ ‘বদল’। বিরোধীদের মহাগঠবন্ধনের দাবি, রাজ্যে কুড়ি বছরের নীতীশ-রাজ এ বার বদলাবে। নয় নয় করে ন’বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া নীতীশ কুমারের দাবি, বিহার বদলাতে শুরু করেছে আগেই এবং সেই যাত্রায় আরও গতি আসবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আবার প্রথম পর্বের ভোটে উৎসাহ দেখেই পড়ে ফেলেছেন, এনডিএ-কে ফেরানোর জন্যই মানুষ বুথে যাচ্ছেন। নতুন দল জন সুরাজের নেতা প্রশান্ত কিশোর তাঁর তিন বছরব্যাপী ‘বিহার বদলাও যাত্রা’ শেষ করে সোমবার পশ্চিম চম্পারনের ভিতিহরওয়া গান্ধী আশ্রমে ফিরে গিয়ে প্রার্থনা সেরে এসেছেন। কার প্রার্থনায় ফল মিলবে, তার উত্তর জানা যাবে আগামী ১৪ নভেম্বর।

ফল কার পক্ষে যাচ্ছে, সেই প্রশ্নে টানাপড়েনের মধ্যেই দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে শেষ লগ্নে অভিযোগের বড়সড় ঝাঁপি খুলে বসেছে প্রধান বিরোধী দল আরজেডি। বিরোধী শিবিরের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী যাদব নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করে নানা প্রশ্ন তুলেছেন, বেনিয়মের অভিযোগ করেছেন। সেই সঙ্গেই দলের কর্মী-সমর্থক ও আম জনতার প্রতি তেজস্বীর তরফে আবেদন করা হয়েছে, ভোটের আগের বিকেল থেকে মহল্লায় মহল্লায় সতর্ক নজর রাখুন। বাইরের লোক বা গাড়ি ঢুকলে অনুসন্ধান করুন। নিজের ভোট আগলে রাখুন, কোনও প্রচারে প্রভাবিত হবেন না। ভোট শেষ হওয়ার পরে বৈদ্যুতিন ভোট-যন্ত্র (ইভিএম) ‘সিল’ হয়ে স্ট্রং রুমে না-যাওয়া পর্যন্ত ময়দান ছেড়ে না-আসার বার্তাও দেওয়া হয়েছে বুথের এজেন্টদের। দ্বিতীয় দফায় এসে তেজস্বীদের এই উচ্চ গ্রামের তৎপরতাকে ‘পরাজয়ের আতঙ্ক’ বলে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিজেপি। কমিশন অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই দাবি করেছে, সব নিয়মে চলছে। অনিয়মের প্রশ্ন নেই।

ভোটদানের আহ্বান জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রচার। বিহারের জহানাবাদে।

ভোটদানের আহ্বান জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রচার। বিহারের জহানাবাদে। —নিজস্ব চিত্র।

পরিসংখ্যান ধরে বলতে গেলে, বিহারের ২০টি জেলায় ছড়িয়ে থাকা ১২২টি বিধানসভা আসনে ভোট আজ, মঙ্গলবার। মোট ৪৫ হাজার ৩৯৯টি ভোট-কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা তিন কোটি ৭০ লক্ষ। এর মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার ভোট-কেন্দ্রই গ্রামীণ এলাকায়। কমিশন সূত্রের খবর, ভোটের দিন মোতায়েন করা হচ্ছে ১৬২৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী, সেই সঙ্গে থাকছে বিভিন্ন রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশ। দ্বিতীয় দফায় নেপাল সীমান্ত এবং ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের সীমানা লাগোয়া বেশ কিছু জেলায় ভোট রয়েছে বলে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে। সাধারণ ভাবে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চললেও ‘অতি স্পর্শকাতর’ এলাকার বুথে বিকেল ৩টে এবং ‘স্পর্শকাতর’ এলাকায় বিকেল ৪টের মধ্যে ভোট শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নেপাল-বিহার সীমান্ত ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছে সোমবার বিকেলেই।

কমিশনের ব্যবস্থাপনা নিয়েই অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন বিদায়ী বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তেজস্বী। তাঁর প্রশ্ন, বিজেপি-শাসিত রাজ্য থেকেই কেন ভোটের দায়িত্বে পুলিশ আনা হয়েছে? পর্যবেক্ষকদের ৬৮%-ই কেন বিজেপি-শাসিত রাজ্যের? তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘হারের ভয়ে স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (অমিত শাহ) আধিকারিকদের ডেকে এবং ফোনে ধমকেছেন। মুখ্যমন্ত্রী নিবাস থেকে অনেক জায়গায় ফোন গিয়েছে। নানা জায়গায় সিসিটিভি বিকল করে দেওয়া হয়েছে।’’ কমিশনের তরফে অবশ্য বলা হয়েছে, বিহারে ভোটের দায়িত্বে ৮০%-ই কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। বাকি ২০% নেওয়া হয়েছে যে রাজ্যে যেমন পাওয়া গিয়েছে, তার ভিত্তিতে। এই তালিকায় ঝাড়খণ্ড, তেলঙ্গানা, কেরল, হিমাচল বা পঞ্জাবও রয়েছে। একই সূত্র মেনে পর্যবেক্ষকও নিয়োগ হয়েছে। সিসিটিভি-ও সর্বত্র কাজ করছে, নজরদারি চলছে। আর তেজস্বীর জবাবে বিজেপি সাংসদ সঞ্জয় জায়সওয়ালের কটাক্ষ, ‘‘হারের আতঙ্কে ওঁদের ঘুম ছুটে গিয়েছে! প্রথম দফাতেই ওঁরা বুঝে গিয়েছেন খেলা হাতের বাইরে চলে গিয়েছে, এখন বাজার গরম করছেন।’’

সীমাঞ্চলের কাটিহার, পূর্ণিয়া, অররিয়া, কিসানগঞ্জ, এক কালের মাওবাদী-প্রভাবিত জহানাবাদ, জামুই, অরওয়ল, ঔরঙ্গাবাদ বা মগধাঞ্চলের গয়া, রাজগীরে ভোটআজই। লড়াই অনেক ক্ষেত্রেই সেয়ানে সেয়ানে। তারই মধ্যে বিহারের নানা প্রান্তে গুঞ্জন ছড়িয়েছে ‘লালটেন হি তির হ্যায়, তির হি লালটেন হ্যায়’ মন্ত্রে! জল্পনা চলছে, বিজেপি এবং চিরাগ পাসোয়ানের রাষ্ট্রীয় লোক জনশক্তি পার্টিকে সবক শেখাতে আরজেডি (লন্ঠন চিহ্ন) এবং জেডিইউ-এর (তির চিহ্ন) সমর্থকেরা এলাকা ও প্রার্থী বুঝে পরস্পরকে ভোট হস্তান্তর করতে পারেন শেষ লগ্নে যা আরও ইন্ধন দিচ্ছে উত্তেজনায়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bihar Assembly Poll Bihar Bihar Assembly Election 2025

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy