Advertisement
০৩ মে ২০২৪

হাতি-মৃত্যু ঠেকাতে মৌ-গুঞ্জন অস্ত্র করছে রেল

রেল লাইনে ট্রেনের ধাক্কায় হাতি-মৃত্যু ঠেকাতে বনকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা করছেন রেলকর্তারা।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:৩৬
Share: Save:

তার বপু বিশাল হলেও এক রত্তি মৌমাছিকে হাতি প্রায় যমের মতোই ভয় পায়। মৌমাছির হুল তো পরের কথা, মৌমাছির গুঞ্জনেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে হাতিরা! ভাবে, এই বুঝি ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি এসে হুল ফোটাবে দেহে! হস্তি-মনস্তত্ত্বের এই দিকটিকে কাজে লাগিয়েই এ বার হাতিদের ট্রেনে কাটা পড়া ঠেকানোর চেষ্টা শুরু করল উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল। অসমের রঙিয়া ডিভিশনে পরীক্ষামূলক ভাবে এই কাজ শুরু হয়েছে।

রেল লাইনে ট্রেনের ধাক্কায় হাতি-মৃত্যু ঠেকাতে বনকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা করছেন রেলকর্তারা। কথায়-কথায় হাতি বিশেষজ্ঞরা জানান, মৌমাছির কামড়কে হাতিরা ভয় পায়। সে কারণেই ঝাঁক বাধা মৌমাছির গুঞ্জন কানে এলেই তারা নিরাপদ দূরত্বে পালাতে থাকে। আর এর পরেই ইন্টারনেট ঘেঁটে ঝাঁক ঝাঁক মৌমাছির মিলিত গুঞ্জনের শব্দ ডাউনলোড করেন রঙিয়ার ডিআরএম রভিলেশ কুমার। এরপরেই গুঞ্জন-ধ্বনি আজারা থেকে কামাখ্যা রেল রুটের মধ্যে, ‘এলিফ্যান্ট করিডর’-এর কাছে অ্যাম্পলিফায়ারের মাধ্যমে জোরে বাজানোর ব্যবস্থা করা হয়। কুমার জানান, ‘‘পরীক্ষামূলক ভাবে হাতির পাল রেল লাইনের কাছাকাছি আসছে দেখে ওই মৌমাছি-গুঞ্জন জোরে বাজানোয় প্রায় চারশো মিটার দূরে থমকে গিয়েছে তারা। তারপরেই হয় অ্যাবাউট টার্ন করেছে, নয়তো অন্য পথ ধরেছে।’’

উল্লেখ্য, রঙিয়া ডিভিশনের ‘দীপর বিল’ সংলগ্ন রেলপথে ট্রেনের ধাক্কায় হাতি মৃত্যুর বহু ঘটনা ঘটেছে। আপাতত সেখানে‌ পাকাপোক্ত ভাবে হাতির করিডর ও রেল লাইনের সংযোগ স্থলে পাকাপাকি ভাবে এই ‘অপারেশন বা‌জ়িং’ চালু করা হবে। তেজপুরের রাঙাপাড়ায় হাতি করিডরের বুক চিরে যাওয়া লাইনের আশপাশেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরীক্ষায় আরও সাফল্য এলে বন দফতর ও উত্তর-পূর্ব রেলের সব ডিভিশনেই ওই শব্দ ব্যবহার করা হতে পারে। অতি বলশালী হাতি কেন সামান্য মৌমাছিকে এত ভয় পায়? হুলকে ভয় পাওয়ার কারণ তাও বোঝা যায়। গুঞ্জনকে কেন? হস্তি-বিশেষজ্ঞ পার্বতী বরুয়ার কথায়, “মৌচাক ভাঙলে ক্ষিপ্ত মৌমাছিদের কামড়ে হাতিরাও সমান অস্থির হয়। আসলে ঝাঁক বেঁধে মৌমাছিরা যখন আক্রমণ করে তখন হাতির সর্বাঙ্গ তারা ছেয়ে ফেলে। চোখ, মুখ, বুক,পিঠ—সারা গায়ে এক সঙ্গে মৌমাছির দল হুল ফোটায়। অনেক সময়ে কানেও ঢুকে যায়।’’ পার্বতীদেবী মনে করেন, সেই তীব্র জ্বলনের সঙ্গে মৌমাছির ঝাঁক-বাঁধা গুঞ্জনের ‘বোধ’ হাতির মনে গেঁথে যায়। হুলের সঙ্গে গুঞ্জনকে সে কারণেই হাতি সরাসরি ‘রিলেট’ করে। রেলের এই প্রয়াসের কথা শুনে তিনি বলেন, ‘‘এমন ভাবে যদি হাতির কাটা পড়া ঠেকানো যায়, তবে তো খুবই ভাল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bee's humming Bee Elephant Death Railways
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE