আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর মণিপুর সফরে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তার আগেই বৃহস্পতিবার কুকিদের দু’টি সংগঠনের সঙ্গে চুক্তি সেরে ফেলেছে কেন্দ্র। তার পরেই কুকি-জ়ো কাউন্সিল ঘোষণা করেছে যে, এ বার থেকে যাত্রী ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অবাধ চলাচলের জন্য ২ নম্বর জাতীয় সড়ক খুলে দেওয়া হবে। নিরাপত্তা বাহিনী যাতে শান্তি বজায় রাখতে পারে, সেই প্রচেষ্টায় তারা পূর্ণ সহযোগিতা করবে। তবে কুকিরা সংঘাতের পথ থেকে সরে এলেও এখন কেন্দ্রের চিন্তার কারণ নাগা জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। কারণ নাগাদের সংগঠন সংযুক্ত নাগা কাউন্সিল (ইউএনসি) ৮ সেপ্টেম্বর (সোমবার) থেকে বাণিজ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে।
২ নম্বর জাতীয় সড়ক মণিপুরের নাগা অধ্যুষিত এলাকাগুলির উপর দিয়েও গিয়েছে। মেইতেই অধ্যুষিত ইম্ফল উপত্যকাকে রাজ্যের বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত করেছে যে রাস্তাগুলি, সেগুলির অধিকাংশই সেনাপতি, উখরুলের মধ্যে নাগা অধ্যুষিত এলাকার উপর দিয়ে গিয়েছে। ফলে নাগাদের বাণিজ্য বয়কটের ডাক নিয়ে চিন্তিত প্রশাসন। সে ক্ষেত্রে পণ্য পরিবহণ তো বটেই, স্বাভাবিক যান চলাচলও স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে। নাগাদের বক্তব্য, ভারত-মায়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া তুলে ফের অবাধ যাতাযাতের ব্যবস্থা (ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম) চালু করতে হবে।
‘ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম’ কী?
একটা সময় পর্যন্ত ভারত-মায়ানমার আন্তর্জাতিক সীমান্তের উভয় দিকে ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারীদের এপার ওপার হতে কোনও ভিসা লাগত না। দুই দেশের সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারেই ‘ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম’-এর সুবিধা দেওয়া হয়েছিল৷ কুকি-জো জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে মায়ানমারে বসবাস করা কয়েকটি জাতিগোষ্ঠীর জাতিগত সম্পর্ক রয়েছে। সে কথা মাথায় রেখেই দুই দেশের সরকার এই বন্দোবস্ত করেছিল। যদিও মেইতেইরা বরাবরই ‘ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম’ বন্ধ করার দাবি জানিয়ে অভিযোগ করেছে যে, এর ফলে মণিপুরে অনুপ্রবেশ বাড়ছে এবং সে রাজ্যের জনবিন্যাস বদলে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার স্বার্থে এই বন্দোবস্ত বন্ধ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
নাগারা অবশ্য বার বারই সীমান্তে কাঁটাতার বসানোর বিরোধিতা করেছে। তবে কুকিদের আলোচনার টেবিলে বসানো গেলেও নাগা-সমস্যার সমাধান না-হলে মণিপুরে শান্তি এবং সুস্থিতির বার্তা দেওয়া যাবে না বলেই মনে করছে কেন্দ্র এবং মণিপুর প্রশাসন। নাগা অধ্যুষিত এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ওই জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাইছে প্রশাসন। নাগাদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানসূত্র বার করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আইবি-র প্রাক্তন অতিরিক্ত ডিরেক্টর একে মিশ্রকে।
গত প্রায় দু’বছর ধরে তপ্ত রয়েছে মণিপুর। ২০২৩ সালের মে মাসে প্রথম মেইতেই এবং কুকি-জো সম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসা ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সে রাজ্যের পরিস্থিতি। মাঝে কিছু দিন বিরতির পর আবার মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বহু বাড়িঘর। দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে মণিপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি রাজ্যের বেশ কয়েক জন বিধায়কের বাড়িতেও হামলা চালায় উন্মত্ত জনতা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মণিপুরে জারি হয় রাষ্ট্রপতির শাসন। অশান্ত মণিপুরের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কেন প্রধানমন্ত্রী উত্তর-পূর্ব ভারতের ওই রাজ্যে যাচ্ছেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধী দলগুলি।
প্রধানমন্ত্রী সর্বশেষ মণিপুর সফর করেছিলেন ৪ জানুয়ারি, ২০১৯। ২০২৩ সালের মে মাস থেকে মণিপুরে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পরে বার বার প্রধানমন্ত্রীকে মণিপুরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি যাননি, এমনকি মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনাতেও বসেননি। ২০২৪ সালের ৩ জুলাই রাজ্যসভায় মণিপুর নিয়ে দু’মিনিটের বক্তব্য রেখে মোদী দাবি করেছিলেন, মণিপুরে হিংসা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
তবে তার পর, আরও সময় গড়িয়েছে। গত জুলাইয়েও মোদীর মণিপুর সফর নিয়ে জল্পনা দেখা গিয়েছিল। তবে সে বার তিনি যাননি। এ বারও মোদীর সফর নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু বলা হয়নি। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর মিজ়োরামে একাধিক কর্মসূচি রয়েছে মোদীর। নানা মহলের জল্পনা, মিজ়োরাম হয়ে মণিপুর যাবেন প্রধানমন্ত্রী। তবে সেই খবর এখনও নিশ্চিত করেনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এমনকি, এ প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ এঁটেছে মণিপুরের রাজ্য বিজেপিও। যদিও সম্প্রতি, মণিপুরের মুখ্যসচিব দফায় দফায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করার পর প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে জল্পনা কয়েক গুণ বেড়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, ভিভিআইপি সফরের তৎপরতা চলছে মণিপুরে।