Advertisement
১১ মে ২০২৪
mahatma gandhi

Gandhi: প্রতিবাদী মঞ্চে গাঁধীর খোঁজ বাঙালি শিল্পীর

ভেবেছিলেন মাসখানেক ধরে ধীরেসুস্থে কাজটা করবেন। কিন্তু প্রতিবাদী-শিবিরের বুজুর্গদের আবদার, ২৬ জানুয়ারির আগে করে দে বেটা!

প্রতিবাদী মঞ্চে গাঁধীর খোঁজ বাঙালি শিল্পীর

প্রতিবাদী মঞ্চে গাঁধীর খোঁজ বাঙালি শিল্পীর

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২১ ০৫:৪০
Share: Save:

ভেবেছিলেন মাসখানেক ধরে ধীরেসুস্থে কাজটা করবেন। কিন্তু প্রতিবাদী-শিবিরের বুজুর্গদের আবদার, ২৬ জানুয়ারির আগে করে দে বেটা! অতএব দিন দশেক হাতে রেখেই কাজে হাত দেন মধ্যমগ্রামের দেবাঞ্জন রায়। টিকরিতে কৃষক আন্দোলনের ঐতিহাসিক জয়ের ময়দানে সেই শিল্প-স্মারকের মধ্যে এখন তিনিও রয়েছেন।
গত দু’দিন ধরে ফোনের ছড়াছড়ি। মধ্য চল্লিশের দেবাঞ্জন বললেন, “আমি তো টিকরির তাউজির ফোনেই খবরটা পেলাম। বললেন, বেটা তু কাঁহা! থোড়া লাড্ডু তো খাকে যা!” তাউজি (স্থানীয় ভাষায় জেঠু)-র নাম সুখবিন্দর সিংহ। গত জানুয়ারির এক সন্ধ্যায় স্মরণীয় আন্দোলনের শরিক হতে টিকরিতে পৌঁছে ওঁর অভিভাবকত্বেই নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন শিল্পী।

কলকাতা, নিউ ইয়র্কের কয়েকটি আর্ট গ্যালারিতে ভাস্কর্যের কাজ করেন দেবাঞ্জন। নিজের তাগিদেই কৃষকদের আন্দোলনে যান। “আমি আর কী পারি, মূর্তি গড়া ছাড়া! মনে হল ভাস্কর্যের মধ্যে দিয়েই যদি ওদের পাশে থাকতে পারি।” ভাস্কর্য গড়ায় গাঁধীকে নিয়ে এক ধরনের নেশা আছে এই বঙ্গসন্তানের। ‘টয়িং উইথ গাঁধী’ বলে একটি প্রকল্পেও কাজ করেছেন। এ দেশের নানা প্রান্তের পুতুল ঘরানার আঙ্গিকে নানা রকমের গাঁধী গড়েছেন। “আমার চোখে গাঁধী একজন সাধারণ ভারতীয় বা মানুষ! যেখানে সেখানে তাঁর ছায়া দেখি।" তবে পঞ্জাব, হরিয়ানার চাষিদের মাঝে গাঁধী মূর্তির বদলে অবিভক্ত পঞ্জাবের পাগড়িধারী জাঠ কৃষক নেতা ছোটু রামকে গড়েছেন দেবাঞ্জন। হাতে লাঙল। কিন্তু পথের কাঁটা রক্তমাখা চরণতলে দ’লে হাঁটার ভঙ্গিতে তিনি আবার গাঁধীও। ভাস্কর্যটিতে ছোটু রামের কাঁধে একটি দেহভার। তাতে কৃষক আন্দোলনের প্রথম শহিদ সিংঘু সীমানায় আত্মঘাতী বাবা রাম সিংহের আদল। রাম সিংহের আত্মবলিদানের আগুন অনেক দূরে কলকাতায় শিল্পীর মনেও গভীর ছাপ ফেলেছিল। ফাইবারের মূর্তি গড়তে দেবাঞ্জনকে সহায়তা করেন তাঁর বন্ধু আর্য ওরাঁও, মধুসূদন নস্কর এবং বিজু থাপাও। মূর্তিটা শিল্পী প্রতিবাদীদেরই দিয়ে এসেছেন।

টিকরিতে দু’দফায় মাস দেড়েক কাটিয়ে বঙ্গসন্তানের কাছে প্রতিবাদীরা অনেকেই এখন প্রাণের আত্মীয়। বাংলার শিখ সহ-নাগরিক বা রাজনৈতিক কর্মীরা অনেকেই কৃষক আন্দোলনের উত্তাপে গা সেঁকেছেন। কিন্তু এই বাঙালি ছেলেটা বনের মোষ তাড়িয়ে দেড়, দু’লক্ষ টাকা খরচ করে মূর্তি গড়ছেন দেখে আজব ঠেকছিল প্রতিবাদীদের কাছেও। আর দেবাঞ্জনের কথায়, “আদর-যত্নের চোটে রোজ তিন বেলা তিন লিটার করে দুধ, খান পনেরো ঘি জ্যাবজেবে রুটি খেয়ে কাজ করাটাই চ্যালেঞ্জ ছিল! খাওয়া নিয়ে ওজর ওঁরা শুনবেন না, আর কাজও আমায় শেষ করতেই হবে।” আট কেজি ওজন এবং রক্তে শর্করা কিছুটা বাড়িয়েই ঘরের ছেলে ঘরে ফেরেন।

এখন তাউজি ছাড়াও অসমবয়সি বন্ধু সদ্যযুবা রাহুল শেঠিয়া, লাভলি, প্রধানজি অনেকের মুখগুলো চোখে ভাসছে। এমন অজস্র মুখের স্কেচ এখন শিল্পীর খাতায়। দফায় দফায় তাঁদের সঙ্গে কথাও হচ্ছে। কৃষক পরিবারের ছেলে রাহুলের বাড়ির একটা বিয়েতে শিগগিরই যাবেনও দেবাঞ্জন। থেকে থেকে মনে পড়ছে, প্রজাতন্ত্র দিবসে ট্রাকে যেতে যেতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদীদের গায়েও নির্বিচারে শাসকের লাঠি। এখনও বুঁদ হয়ে আছেন, প্রায় স্বাধীনতার যুদ্ধের মতো গণ আন্দোলনের রেশ ছুঁয়ে। আর মাঝেমধ্যেই বাঙালি টানে হরিয়ানভি সুর গুনগুনিয়ে উঠছেন, ‘‘মোদীজি থাড়ি তোব কড়ে, হম দিল্লি আগে...।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mahatma gandhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE