অভিযুক্ত এমজি গোকুল।
নিজের স্ত্রীকে খুন করলেন! বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে গড়লেন বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক! এর পর চুরি করলেন সেই প্রেমিকার স্বামীর পাসপোর্ট! তাঁর মোবাইলের সিম কার্ড হাতালেন! এখানেই থেমে থাকলেন না। এর পর সেই পাসপোর্টের ছবি এবং তথ্য নিয়ে বন্ধুর নামে খুললেন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। সিম কার্ড মোবাইলে ভরে বহুজাতিক সংস্থার চেয়ারম্যানকে ফোন করে আইএসের নামে ১০ কোটি টাকা দাবি করলেন। তার পর দিল্লি এবং বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরে সেই নম্বর থেকেই ফোন করে হুমকি দিলেন। কয়েক ঘণ্টার জন্য ওই দুই বিমানবন্দরে থমকে গেল উড়ান।
আর এ সমস্ত ঘটনায় যিনি অভিযুক্ত, সোমবার সকালে তাঁকে গ্রেফতার করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। তাঁর নাম এমজি গোকুল। আদতে কেরলের নাগরিক। তবে, বর্তমানে বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা। পুলিশের জালে ধরা পড়ে আপাতত হাজতবাসী এই তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী।
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার। দিল্লি বিমানবন্দরে একটি ভুয়ো ফোন আসে। সেই হুমকি ফোনের সূত্র ধরেই এ দিন পুলিশের জালে ধরা পড়েন গোকুল। তার পর তদন্তে যা উঠে এসেছে, তাতে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় হয়েছে তদন্তকারীদের।
পুলিশ সূত্রে খবর, কয়েক মাস আগে গোকুলের স্ত্রীর অস্বাভাবিক ভাবে মৃত্যু হয়। তখনই জানা যায়, বন্ধু সাজু জোসেফের স্ত্রীর সঙ্গে গোকুলের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, সাজুর নামে ফেসবুকে একটি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছে গোকুল। সেখানে ছবি, জন্ম তারিখ-সহ সকল তথ্যই সাজুর। আর সাজুর নামে সেই প্রোফাইলটি নিয়ন্ত্রণ করতেন গোকুল। আশ্চর্যের আরও বাকি ছিল! তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই প্রোফাইল অনুযায়ী ‘সাজু’ আইএস-এর এক জন সমর্থনকারী।
এর পর সাজুর সিম কার্ড একটি মোবাইলে ভরে ভারতী এয়ারটেলের চেয়ারম্যান সুনীল ভারতী মিত্তলকে হোয়াট্সঅ্যাপ করেন গোকুল। নিজেকে আইএস-এর কর্মী পরিচয় দিয়ে সাজুর নাম করে ১০ কোটি টাকা দাবি করা হয়। পুলিশের দাবি, এ সব করে আসলে পুলিশের সাইবার সেলের কাছে সাজুকে অপরাধী হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন গোকুল।
এখানেই থেমে যাননি তিনি। গত শনিবার সকালে বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরে বেশ কয়েক বার ফোন করেন তিনি। কিন্তু, কোনও কারণে সেই ফোন বারংবার বেজে যায়, কেউ ধরেননি। এর পর দিল্লি বিমানবন্দরে ফোন করে গোকুল হুমকি দেন। এর ফলে তিনটি বিমানের উড়তে দেরি হয়। সব দিক খতিয়ে দেখে ভাল করে তল্লাশি চালানোর পর বিমান তিনটিকে উড়তে দেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। দিল্লির কর্তৃপক্ষ এর পর বেঙ্গালুরুকে সতর্ক করে। সেখানেও বিমান চলাচলে কড়া নজরদারী চালানো হয়। দেরিতে ওড়ে বেশ কয়েকটি বিমান।
আর সেই ফোন নম্বরের সূত্র ধরেই প্রথমে সাজু জোসেফকে গ্রেফতার করে বেঙ্গালুরু পুলিশ। পরে গ্রেফতার করা হয় গোকুলকে। পুলিশি জেরার মুখে নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন ওই যুবক। বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার এম এস মেঘারিখ বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে যেটুকু জানা গিয়েছে, তাতে এই ঘটনার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের কোনও যোগ নেই। সব কিছুর পাশাপাশি ধৃত গোকুলের স্ত্রীর মৃত্যুর রহস্য নিয়েও আমরা তদন্ত শুরু করেছি।’’
অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক সূত্রে খবর, জাতীয় সংস্থাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে গোকুলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy