Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

ফুঁসছে কাশ্মীর, ৩৭০ বাতিলের পর বাড়ি ফেরার হিড়িক

বুধবার ইন্ডিগোর উড়ানটিতে এক জন পর্যটক বা অমরনাথ যাত্রীও ছিলেন না। আধাসামরিক বাহিনীর অফিসার জনা কয়েক, বাকি সবাই ঘরমুখো কাশ্মীরি।

ছবি: এপি।

ছবি: এপি।

সংবাদ সংস্থা
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৩৮
Share: Save:

দিল্লি পৌঁছে শ্রীনগরের উড়ানে কোনও ক্রমে টিকিট জোগাড় করে উঠে বসেছিলেন চণ্ডীগড়ের ছাত্র কামরান। চোখেমুখে উদ্বেগ। কয়েক দিন বার বার চেষ্টা করেও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। কেমন আছেন অসুস্থ মা!

বুধবার ইন্ডিগোর উড়ানটিতে এক জন পর্যটক বা অমরনাথ যাত্রীও ছিলেন না। আধাসামরিক বাহিনীর অফিসার জনা কয়েক, বাকি সবাই ঘরমুখো কাশ্মীরি। কেউ থাকেন দিল্লিতে, কেউ দেশের অন্য কোনও শহরে। শুধু কি মায়ের জন্য উদ্বেগের কারণেই শ্রীনগরে ফিরলেন বছর বাইশের কামরান? দৃঢ় ভাবে জানালেন, ‘না!’ চণ্ডীগড়ের যে হস্টেলে তিনি ছিলেন, সেখানে কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল ঘোষণা করার পরেই বাকিদের নজর কেমন বদলে গেল। কামরানের কথায়, ‘‘এসএসপি নিজে এসে কাশ্মীরি ছাত্রদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে গেলেন। তার পরেও চণ্ডীগড়ে থাকাটা ঝুঁকির মনে হচ্ছিল। তাই বাড়ি চলে আসা।’’

পামপোরের ব্যবসায়ী ইমরান আশরাফও একই বিমানে শ্রীনগর ফিরলেন। উঠেছিলেন দিল্লির পাহাড়গঞ্জের একটি হোটেলে। বুকিং বাতিল করে তাঁকে হোটেল ছাড়তে বলা হয়। ক্ষোভে ফেটে পড়ে আশরাফ বলেন, ‘‘বলা হল— তুমি কাশ্মীরি, তোমরা সবাই সন্ত্রাসবাদী। সোজা বিমানবন্দরে পৌঁছে ১২ ঘণ্টার চেষ্টায় টিকিট পেয়ে বিমানে উঠি!’’

মুখতার ওয়ানির বাড়ি রয়েছে দিল্লিতে। স্ত্রী ও বছর দুয়েকের ছেলের হাত ধরে শ্রীনগরে এসে পৌঁছেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দিল্লিতে আর থাকা যাচ্ছিল না। পরিবারের বাকিরা শ্রীনগরে। ঠিক করলাম, যা হবে সবাই মিলে কাশ্মীরে বসেই মোকাবিলা করব।’’ বুধবার দুপুরে শ্রীনগরে নামার পরে নতুন হ্যাপা। বাইরে তো কার্ফু, বিমানবন্দর থেকে বাড়ি যাওয়ার কী উপায়! যাত্রীরা উত্তেজিত। ৩৭০ বিলোপের বিরুদ্ধে সরব সবাই। এক বৃদ্ধের স্বগতোক্তি, ‘‘ইদটাই মাটি করে দিল!’’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কাল লোকসভায় বলেছেন, ‘‘এত দিন গণ্ডগোলের জন্য কাশ্মীরে কার্ফু জারি হতো, এ বার গণ্ডগোল এড়াতে। কোথাও কোনও বিক্ষোভের খবর নেই!’’ এক পুলিশ কর্তা সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, অন্তত ৫০০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁরা কেউ রাজনৈতিক নেতা, কেউ নাগরিক আন্দোলনের কর্মী। তবে কার্ফুর মধ্যেও মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির মেয়ে ইরতিকা ইকবাল এ দিন একটি অডিয়ো বার্তা প্রচার করে জানিয়েছেন, তিন দিন ‘হরি নিবাস’-এ বন্দি করে রাখার পরে সকালে তাঁর মাকে একটি অজ্ঞাত জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁরাও জানেন না, মা কোথায় আছেন, কেমন আছেন। তাঁর বয়স্ক ও অসুস্থ ঠাকুরমা খুবই উদ্বেগে রয়েছেন। তাঁদের বাড়ির কর্মীদেরও চলে যেতে বলেছে প্রশাসন।

আমলার চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে নামা শাহ ফয়জ়ল বিবৃতিতে কাশ্মীরের পরিস্থিতি জানিয়ে বলেছেন, ৮০ লক্ষ মানুষকে যেন দাবিয়ে রাখা হয়েছে। কী যে হতে চলেছে, কেউ বুঝতে পারছেন না। ৩৭০ বিলোপের চেয়েও মানুষ বেশি ক্ষুব্ধ রাজ্যের মর্যাদা চলে যাওয়ায়।

কার্গিলে এ দিন হরতাল হয়। কুপওয়ারায় বিক্ষোভের পাথরে জখম হন এক পুলিশ। টহলদার বাহিনী অন্য দিকে সরে যেতেই বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়ে পাথর ছুড়ছিলেন শ্রীনগরের প্রাণকেন্দ্রের অদূরে পুরনো বারজ়ুল্লা এলাকায়। বাহিনী ফিরলেই সবাই আড়ালে। একটা সময়ে আধাসেনা ঘিরে ফেলে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে শ’খানেক তরুণকে।

তবে শ্রীনগর সুনসান। কয়েকটি ওষুধের দোকান ছাড়া শহরের সব দোকানপাট, বাজার বন্ধ। বিমানবন্দরমুখী রাস্তায় কিছু গাড়িতে যাত্রীদের আনাগোনা ছাড়া শহরের বাকি রাস্তা ফাঁকা। সোশ্যাল সাইটে যদিও কিছু ভিডিয়ো ছড়িয়েছে, যাতে দেখানো হয়েছে— মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। দোকানপাট খুলেছে। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে তার মিল নেই।

কাশ্মীর অবশ্য এ সব ভিডিয়ো দেখতে পাচ্ছে না। টানা চার দিন নেট আর মোবাইল সংযোগ বন্ধ যে সেখানে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE