উত্তর-পূর্বের সবচেয়ে বড় সাহিত্য সমাবেশ ‘ব্রহ্মপুত্র সাহিত্য উৎসব’-এর উদ্বোধন হল গুয়াহাটিতে।
এর আগে উত্তর-পূর্বে এত বড় মাপের সাহিত্য-আসর বসেনি। প্রথম ‘ব্রহ্মপুত্র সাহিত্য উৎসব’-এ অংশ নিচ্ছেন ২২টি দেশের ১৮৫ জন সাহিত্যিক। গুয়াহাটির শ্রীমন্ত শঙ্করদেব কলাক্ষেত্রে প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসবের সূচনা করেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর ও মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। ‘ব্রহ্মপুত্র সাহিত্য উৎসব’ যৌথভাবে আয়োজন করছে ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট ও রাজ্য সরকার।
তিন দিনের ‘ব্রহ্মপুত্র সাহিত্য উৎসব’-এ এক চত্বরে সাহিত্য পাঠ, সাহিত্য আলোচনার পাশাপাশি চলবে রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা সভা। তুলে ধরা হবে উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন সংস্কৃতি। থাকবে নাচ-গান-সিনেমার প্রদর্শনী।
ন্যাশনাল বুক ট্রাস্টের চেয়ারম্যান তথা সাহিত্যিক রীতা চৌধুরি জানান, দেশের ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের নামকরা সাহিত্যিকদের এক চত্বরে এ ভাবে আগে পায়নি অসম ও উত্তর-পূর্ব। এর ফলে মত-বিনিময়ের মাধ্যমে যেমন সমৃদ্ধ হবে সাহিত্য, তেমনই উত্তর-পূর্বের সমাজ-সাহিত্য-সংস্কৃতির স্বাদ পাবেন ভিন দেশ ও রাজ্য থেকে আসা সাহিত্যিকরা।
দশটি দেশ থেকে ১৬ জন বিদেশি সাহিত্যিক এসেছেন এখানে। ‘ব্রহ্মপুত্র সাহিত্য উৎসব’-এ অংশ নেওয়া বিদেশি সাহিত্যিকদের মধ্যে আছেন জাপানের রানদি তাগুচি, ইতালির কার্লো পিজাতি, জিয়ামপাওলো সিমি ও আলেকসান্দ্রা বার্তিনি। ফ্রান্স থেকে এসেছেন ফ্রঁকোয় গ্যুতিয়ের ও নিকোলোই ইদিয়ের। দামোদর মাউজো, সুভাষ কশ্যপ, মকরন্দ পরাঞ্জপে, নরেন্দ্র কোহলীদের মতো ভারতের যশস্বী সাহিত্যিকরাও উৎসবে হাজির হচ্ছেন।
কলাক্ষেত্রের ছ’টি মঞ্চ টেগোর হল, পণ্ডিত রামাবাই হল, প্রেমচন্দ হল, সুব্রহ্মনিয়ম ভারতী হল, নলিনীবালা দেবী হল ও বেজবরুয়া হলে পালা করে চলবে বিভিন্ন আলোচনাচক্র,
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক ও ছবি দেখানো। অনুষ্ঠানের সূচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বই-ই সমাজের আয়না। সাহিত্যে ফুটে ওঠে সমাজের শক্তি ও দুর্বলতা। অস্থির সময়ে সাহিত্যের কাছেই দিশা খুঁজি আমরা। এই উৎসব বিভিন্ন রাজ্য ও দেশের সাহিত্যিকদের মত বিনিময়ের এক অমূল্য মঞ্চ হয়ে উঠবে।
সৃজনশীলতার বিস্তর উৎসাহ ও পাথেয় হিসেবে পাবেন নব্য সাহিত্যিকরা।” কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর মতে, এই উৎসব এক সাংস্কৃতিক বিনিয়োগ। যা ভবিষ্যতে সুদে-আসলে মিলিয়ে
সমৃদ্ধতর দেশ গড়তে সাহায্য করবে। যুব সম্প্রদায়কে সাহিত্যে আগ্রহী করে তুলতে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ করছে। বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে দেশীয় ভাষার সাহিত্য চর্চায়।
এ দিনের সাহিত্য আলোচনার বিষয়গুলি ছিল অক্ষরের গণভিত্তি, প্রান্তিক ও সীমান্ত সাহিত্য, হিন্দির আন্তর্জাতিক পরিসর ও সমকালীন হিন্দি সাহিত্য, প্রচলিত রূপকথা বনাম আধুনিক ফিকশন, মহিলা সাহিত্য, শিশুদের লেখচিত্র সাহিত্য, কবিতার সঙ্গীত, ব্যক্তি প্রতিভা ও যুব কন্ঠ, গনতন্ত্রের
কন্ঠ, কল্পবিজ্ঞান ও রোমাঞ্চ উপন্যাস লেখার শৈলী এবং সমকালীন অসমিয়া সাহিত্য ও উত্তর-পূর্বের সাহিত্য চর্চা। খালেদ মহম্মদ ও দীপা চৌধুরির সঙ্গে আলাপচারিতায় ছিলেন আশা পারেখ।
আলোচনা চলে মহম্মদ রফির জীবন ও সঙ্গীতকে ঘিরেও। অংশ নেন, সুজাতা দেব ও শাহিদ রফি।