সুপ্রিম কোর্টের ছাড়পত্র পাওয়ার পরে এ বার বিহারে জাতসমীক্ষার দ্বিতীয় রিপোর্ট প্রকাশ করল নীতীশ কুমার সরকার। মঙ্গলবার প্রকাশিত সেই রিপোর্টে বিহারের বাসিন্দাদের জাতভিত্তিক আর্থিক অবস্থার তুলনামূলক পরিসংখ্যান পেশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সে রাজ্যের ৩৩ শতাংশ অনগ্রসর (ওবিসি) এবং অতি অনগ্রসরের (ইবিসি) অর্থনৈতিক অবস্থান দারিদ্রসীমার নীচে। অন্য দিকে, তফসিলি জাতির (এসসি) মধ্যে গরিব ৪২ শতাংশেরও বেশি।
ওই রিপোর্টে বিহারের তথাকথিত উচ্চবর্ণ অর্থাৎ অসংরক্ষিত (জেনারেল) শ্রেণির আর্থিক হালও উঠে এসেছে। জানানো হয়েছে, দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী ‘জেনারেল কাস্ট’-এর মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৬ শতাংশ। চার জনের পরিবারের মাসিক আয় ৬,০০০ টাকার কম হলে সেই পরিবারকে ‘দরিদ্র’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। গত ২ অক্টোবর জাতভিত্তিক সমীক্ষা সংক্রান্ত প্রথম রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল বিহার সরকার। এর পরে সুপ্রিম কোর্টে পরবর্তী রিপোর্ট প্রকাশের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন জানানো হলেও গত ৬ অক্টোবর শীর্ষ আদালত তা খারিজ করে দিয়েছিল।
আরও পড়ুন:
বস্তুত, ২০২২ সালের নভেম্বরে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের জন্য সরকারি চাকরি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের জন্য সুপ্রিম কোর্ট সিলমোহর দেওয়ার পরেই দেশ জুড়ে জাতভিত্তিক জনগণনার দাবি তুলেছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ। বিহারে জেডি(ইউ)-আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের ‘মহাগঠবন্ধন’ সরকার দ্রুত শুরু করে জাতগণনা। গত ৬ জুন নীতীশ সরকার জাতগণনার বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। এর পর বিহার সরকারের সেই পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা দায়ের হয়েছিল পটনা হাই কোর্টে।
আরও পড়ুন:
বিহারে জাতগণনার প্রথম পর্ব ৭ থেকে ২১ জানুয়ারি হয়েছিল। ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় পর্ব ১৫ মে পর্যন্ত চলার কথা ছিল৷ কিন্তু তার আগেই গত ৪ মে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল পটনা হাই কোর্ট। কিন্তু গত ১ অগস্ট জাতসমীক্ষার বিরুদ্ধে পটনা হাই কোর্টে যে জনস্বার্থ মামলাগুলি দায়ের হয়েছিল, তা খারিজ করে দেয় প্রধান বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রন এবং বিচারপতি পার্থ সারথির বেঞ্চ। এর পরেই শুরু হয় জাতগণনার দ্বিতীয় পর্ব। গত ২ অক্টোবর তার প্রথম দফার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
সেই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বিহারে ওবিসি জনগোষ্ঠী মোট ৬৩ শতাংশ। তার মধ্যে ৩৬ শতাংশ অতি অনগ্রসর (ইবিসি) এবং ২৭ শতাংশের সামান্য বেশি সাধারণ অনগ্রসর গোষ্ঠীর। এ ছাড়া বিহারে প্রায় সাড়ে ১৯ শতাংশ তফসিলি জাতি এবং ১.৬৮ শতাংশ তফসিলি জনজাতি গোষ্ঠীর মানুষ রয়েছেন বলে ওই রিপোর্ট জানাচ্ছে। অসংরক্ষিত (জেনারেল) শ্রেণির বাসিন্দা সাড়ে ১৫ শতাংশের সামান্য বেশি। লোকসভা ভোটে বিষয়টি বিহারের জেডিইউ-আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের মহাগঠবন্ধনের প্রচারের অন্যতম বিষয় হয়ে উঠতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা। কারণ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফে সরকারি চাকরি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ওবিসি কোটা বৃদ্ধি করার দাবি উঠেছে।