পটনা শহরের অন্যতম উচ্চবিত্ত ও অভিজাত কলোনি হল বোরিং রোড। পটনায় ওটিই একাধারে বালিগঞ্জ প্লেস বা ডিফেন্স কলোনি কিংবা মালাবার হিলস। রাজধানী পটনার ‘মোস্ট হ্যাপেনিং প্লেস’! বোরিং রোড কলোনিতে ঢোকার মুখে যে রাস্তাটি পটনার এই অভিজাত এলাকাটিকে আড়াআড়ি কেটে যায়, তার নাম বোরিং ক্যানাল রোড। সেই রাস্তায় মন্দির, ষাঁড়, ফুল-বেলপাতা, জট লাগানো ট্রাফিক, দ্বিধাগ্রস্ত পথচারী আর আশপাশের জাগতিক ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিস্পৃহ, উদাসীন সন্ন্যাসী-পুলিশ।
তারকা খচিত এই বোরিং রোড চৌরাহা থেকে বাঁয়ে মুড়ে অল্প এগোলেই এস কে পুরী কলোনি। আর সেই কলোনিতে ঢোকার মুখেই ‘ছিল’ পটনা শহরের সবচেয়ে বড় মদের দোকানটি। একমাত্র এখানেই সমস্ত ব্র্যান্ড বলা মাত্র পাওয়া যেত। পটনার মানুষ বিশ্বাস করে এখানে এক কথায় যাকে বলে ‘খাঁটি মাল’ পাওয়া যেত। সেই বন্ধ দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক দল মানুষ। গত কাল আদালতের রায়ের পরে তাঁদের চোখেমুখে তৃপ্তির হাসি।
মনে তাঁদের আশাও আছে, আশঙ্কাও আছে। আসলে শুধু তাঁরাই নন, গোটা বিহারের সুরাপ্রেমিদের আশা-আশঙ্কায় কেটে গেল ২৪ ঘণ্টা, একটি দিন। দীর্ঘ ছ’মাসের ‘শুখা মরসুম’ কাটিয়ে আনন্দে গলা ভেজালেন অনেকেই। আগামী দিনে এমন অনেক রাত তাঁদের জীবনে ফের আসতে চলেছে এমন আশায় কাটিয়ে দিলেন তাঁরা। অনেকে আবার পুলিশি হয়রানির আশঙ্কায় ‘আরও কয়েকটা দিন’ দেখেই গলা ভেজানোর সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন। তবে হাইকোর্ট গত কাল মদ নিষেধ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিকে ‘সংবিধান-বিরোধী’ বলায় কিছুটা ব্যাকফুটে নীতীশ সরকার। দেখেশুনে এগোনর পরামর্শ দিচ্ছেন সরকারের অন্যতম শরিক দলের নেতা লালুপ্রসাদ।
এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আগামী কাল, গাঁধী জয়ন্তীর দিন থেকেই ‘বিহার রাজ্য মদ নিষেধ এবং আবগারি অধিনিয়ম (রুলস্) ২০১৬’ বলবৎ হওয়ার কথা রয়েছে। আজ বিকেল পর্যন্ত তা নিয়ে কোনও সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি। যদিও জেডিইউয়ের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী কাল থেকে বিহারে মদ নিষেধ আইন বলবৎ হবেই। কোনও পরিস্থিতিতেই তার পরিবর্তন হবে না। তবে আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, আবগারি আইন বলে সরকারের আগের বিজ্ঞপ্তিটি যে ভাবে হাইকোর্ট ‘সংবিধান-বিরোধী’ এবং ‘বেআইনি’ বলেছে, তাতে নতুন সংশোধিত আইনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। কারণ আগের আইনটির ভিতের উপরে দাঁড়িয়েই তৈরি হয়েছে নতুন আইন। স্বাভাবিক ভাবেই পুরনো আইনে সংশোধন যদি ‘সংবিধান-বিরোধী’ হয়, নতুন আইনের ক্ষেত্রে আদালতের সেই সিদ্ধান্ত বদলের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে হাইকোর্টের রায় নিয়ে সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা চলছে। রাজ্যের মুখ্যসচিব অঞ্জনীকুমার সিংহ সে কথা জানিয়ে বলেছেন, সরকার আইনজীবীদের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছে।
এস কে পুরী কলোনির সেই বন্ধ হওয়া দোকানের সামনে গত কাল প্রায় ১০০ বোতল বিদেশি মদ বিক্রি করেছেন তাতোনি কুমার। কোথা থেকে জোগাড় করলেন এতগুলি বোতল, গ্যারান্টি আছে কিনা তা নিয়ে ক্রেতারা কেউ প্রশ্ন তোলেননি। তাতোনির কথাতেই, ‘‘ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই সব বিক্রি হয়ে গিয়েছে। আজ থেকে তো আর মদে বাধা নেই। তবে কাল কী হবে কে জানে!’’ উৎসবের মরসুমে গলা ভেজাতে উৎসাহী অনেকেই। তাতোনি কুমাররা সেই মানুষদের ‘সেবায়’ তৎপর। বাধা শুধু সরকারি নিষেধাজ্ঞা। তবে তা নিয়েও ধন্দ রয়েছে। বোরিং রোডের বাসিন্দা অজিত সিংহ রীতিমতো দার্শনিক হয়ে গেলেন, বললেন, ‘‘ভবিষ্যত কে দেখেছে! যা আছে তা হল বর্তমান। আপাতত তাতেই বাঁচতে চাই।’’ অর্থাৎ মদ-অন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy