কনুইয়ের কাছে থেকে হাত কাটা। রাস্তা দিয়ে হাঁটছে এক কিশোর। পরনের পোশাকও ছিন্ন। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল একটা আতঙ্ক তাড়া করছে তাঁকে। আর সেই আতঙ্কে কাটা হাতের যন্ত্রণা সহ্য করেই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল সে। এ ভাবেই ১৫০ কিলোমিটার হাঁটার পর দুই সহৃদয় ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তাঁর। কিশোরকে আহত অবস্থায় দেখে তাকে দাঁড় করান দুই শিক্ষক। কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, কোথায় যাচ্ছে ইত্যাদি জানার পর চমকে উঠেছিলেন তাঁরা।
দুই শিক্ষক প্রথমে কিশোরের খাবারের ব্যবস্থা করেন। তার পর তাকে থানায় নিয়ে যান। সেখানে পুলিশকর্মীরা তার মুখে গোটা বিবরণ শোনেন। তাঁর পোশাক এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করান। তার পর কিশোরের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়। তারা এসে কিশোরকে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করান। এমনই এক দৃশ্যের সাক্ষী থাকল হরিয়ানার রোহতক।
ওই কিশোর বিহারের বাসিন্দা। ১০ হাজার টাকার বেতনের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে এবং তার ভাইকে নিয়ে আসা হয়েছিল হরিয়ানার রোহতকে। সেখান থেকে তাদের জিন্দে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি ডেয়ারি ফার্মে তাদের কাজে লাগানো হয়। আহত কিশোরের ভাই সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছে, তাদের জোর করে একটি ঘরে আটকে রাখা হত। ঠিক মতো খেতে দেওয়া হত না। দিনের পর দিন অত্যাচার চলত। খামারে গবাদি পশুদের খাবার দেওয়ার সময় ঘাস কাটার যন্ত্রে কিশোরের কনুই থেকে হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রথমে তাকে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নামমাত্র চিকিৎসা হয় বলে অভিযোগ।
কিশোরের ভাইয়ের দাবি, দাদাকে আহত অবস্থাতেই আবার খামারে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই অবস্থাতেই কাজের জন্য জোরাজুরি করা হয়। শেষমেশ নিজেকে বাঁচাতে খামরা থেকে পালিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় তারা দু’জনেই। তার পর শুরু হয় হাঁটা। তাঁদের কাছে টাকা ছিল না। তাই জিন্দ থেকে বিহারের উদ্দেশে হাঁটা শুরু করে। ১০০০ কিলোমিটার হেঁটে বিহারে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। কিন্তু নুহতে পৌঁছোতেই রাস্তায় দুই শিক্ষক তাদের দেখতে পেয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তার পর দুই কিশোরকে উদ্ধার করে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আহত কিশোরের চিকিৎসা চলছে রোহতকের হাসপাতালে। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছে পুলিশ।