Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Tripura

সাজছে মঞ্চ, শপথ কে নেবেন, ভাবছে বিজেপি

মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভা বাছাই নিয়ে শাসক শিবিরে টানাপড়েনের মধ্যে রাজ্য জুড়ে ভোট-পরবর্তী হিংসার অভিযোগ বাড়ছে।

picture of BJP leaders.

শপথ অনুষ্ঠানের জন্য বিজেপির প্রস্তুতি বৈঠকে সম্বিত পাত্র, মানিক সাহা, রাজীব ভট্টাচার্য ও প্রতিমা ভৌমিক। ছবি: বাপী রায়চৌধুরী।

সন্দীপন চক্রবর্তী
আগরতলা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৩ ০৮:১৬
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহদের উপস্থিতিতে রাজ্যের নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের মঞ্চ বাঁধা শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই মঞ্চে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন কে, সে প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর এখনও অমিল বিজেপি শিবিরে!

আগের সরকারের চার বছরের মাথায় বিপ্লব দেবকে সরিয়ে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী করেছিল দন্ত চিকিৎসার অধ্যাপক মানিক সাহাকে। তাঁকে সামনে রেখে দ্বিতীয় বারের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরে মানিকের ফের মুখ্যমন্ত্রী হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক বিধানসভা ভোটে দাঁড়িয়ে ধনপুরের মতো বাম দুর্গ থেকে জিতে আসার পরে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করার দাবিও জোরালো হয়েছে দলের অন্দরে। এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে সবুজ সঙ্কেত পেলে পরিষদীয় দলের বৈঠক ডেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে নেতা নির্বাচন করা হবে। যে বৈঠক এখনও ডাকা হয়নি। উপ-মুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা হেরে যাওয়ায় সরকারের জনজাতি ‘মুখ’ কে হবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। সূ্ত্রের খবর, মন্ত্রিসভায় আরও কিছু নতুন মুখ আসতে পারে।

মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভা বাছাই নিয়ে শাসক শিবিরে টানাপড়েনের মধ্যে রাজ্য জুড়ে ভোট-পরবর্তী হিংসার অভিযোগ বাড়ছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল রবিবার রাজ্যের মুখ্যসচিব জিতেন্দ্র কুমার সিন্‌হার সঙ্গে দেখা মহকুমা ধরে ধরে ঘটনার তথ্য দিয়ে অভিযোগ করেছে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার পাশাপাশি সর্বদল বৈঠক ডাকার দাবি জানিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মানিক যে বলেছেন, অপরাধীরা যে দলেরই হোক, কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে, তাতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না বলে পাল্টা অভিযোগ সিপিএমের জিতেন্দ্রের। বাম নেতারা আরও বলছেন, অ-বিজেপি শাসিত কোনও রাজ্যে হিংসা বা গোলমালের অভিযোগ উঠলেই কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হয়। বিজেপি ক্ষমতায় থাকলে তেমন পদক্ষেপ করা হয় না!

হিংসার অভিযোগ বাড়তে থাকলেও দল না দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা মুখে বলে ভারপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রী মানিক তাঁর ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তি’ রক্ষা করার চেষ্টা করছেন, এমনই অভিমত রাজনৈতিক শিবিরের। বস্তুত, বিজেপি শিবিরেও অনেকের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবের বদলে তাঁকে সামনে আনার ফলেই শাসক দলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ও ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও ভোট-যুদ্ধে জয় এসেছে। তাঁরা আরও বলছেন, ভোটের প্রচারে এসে শাহ বলে গিয়েছিলেন, ফের সরকার হলে মানিকই মুখ্যমন্ত্রী হবেন। কাজেই এখন তার অন্যথা করা উচিত নয়। কিন্তু গেরুয়া শিবিরেই অন্য অংশের যুক্তি, কৃষক পরিবারের মেয়ে প্রতিমা ধনপুরের মতো কেন্দ্র থেকে জিতে এসেছেন। এ বার বিজেপির ৭ জন মহিলা বিধায়ক (সব দল মিলিয়ে ৯) হয়েছেন, যা এই রাজ্যে সর্বাধিক। প্রতিমাকে মুখ্যমন্ত্রী করলে এক দিকে সাধারণ ঘরের প্রতিনিধি এবং তারই সঙ্গে মহিলা মুখ সামনে আনা যায়। অনেকটা বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো।

মানিককেই মুখ্যমন্ত্রী রেখে প্রতিমাকে উপ-মুখ্যমন্ত্রী করা যায় কি না, সেই সম্ভাব্য সূত্রও চর্চায় আছে। কিন্তু এই জুটিকে রাখলে মন্ত্রিসভার শীর্ষ দুই পদে জনজাতি মুখ থাকবে না। জিষ্ণুর পরাজয়ের পরে জনজাতি মুখ হিসেবে কাকে এগিয়ে দেওয়া হবে, তা-ও ভাবতে হচ্ছে বিজেপিকে। তবে মন্ত্রিসভায় মহিলা মুখ বাড়তে পারে বলেই দলীয় সূত্রের ইঙ্গিত।

বিজেপি শিবিরের হালচাল তদারকি করতে এসেছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী এবং পূর্বাঞ্চলে দলের ‘মুশকিল আসান’ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তাঁর পাশে পাশেই দেখা গিয়েছে প্রতিমাকে। আগরতলায় বিজেপির নির্বাচনী কার্যালয়ে এ দিন প্রধানমন্ত্রীর ৮ তারিখের অনুষ্ঠানের জন্য দলের প্রস্তুতি বৈঠকে ছিলেন বেশ কিছু বিধায়ক এবং পদাধিকারীরা। মঞ্চে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক, দলের রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য এবং উত্তর-পূর্বের কো-অর্ডিনেটর সম্বিত পাত্র। বিধায়কদের সঙ্গে প্রতিমা বসেছিলেন নীচে। বৈঠক শুরুর সময়ে তাঁকে মঞ্চে ডেকে নেওয়া হয়। তবে বৈঠক শেষ হতেই তিনি বেরিয়ে যান। মানিক, রাজীব, সম্বিতেরা একসঙ্গে বিবেকানন্দ ময়দানে শপথের মঞ্চ দেখতে গেলেও প্রতিমাকে সেখানে দেখা যায়নি।

বিজেপির এক বিধায়কের কথায়, ‘‘এমনও হতে পারে, রাজ্যে বড় কোনও পদ না পেলে প্রতিমা সাংসদই থেকে গেলেন। বিধায়ক-পদ ছেড়েই দিলেন। তখন আবার ধনপুরে বিধানসভা উপ-নির্বাচন করতে হবে। আর সাংসদ-পদ ছাড়লে একটা লোকসভা কেন্দ্র খালি হবে।’’ প্রসঙ্গত, আটের দশকে অসমে কংগ্রেসের আনোয়ারা তৈমুর কয়েক মাসের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। তার পরে উত্তর-পূর্বের কোনও রাজ্যে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী কেউ হননি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাজীব অবশ্য জানিয়েছেন, এ দিনের বৈঠক ছিল শুধুই শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির জন্য। অন্য কিছু আলোচ্য ছিল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tripura BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE