সোনামুড়ার গণনাকেন্দ্রে মানিক সরকার। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী
জড়়োসড়়ো হয়ে দাঁড়়িয়ে আছেন রিটার্নিং অফিসার। বাঁ হাতের তর্জনী তুলে বিজেপি প্রার্থী প্রতিমা ভৌমিক ধমকাচ্ছেন, ‘‘কী ভেবেছেন কী আপনারা? উনি মুখ্যমন্ত্রী নেই এখন আর!’’
প্রতিমার ঠিক পাশের চেয়ারটায় বসে তিনি। বিজেপি প্রার্থী যা-ই বলুন, সাংবিধানিক নিয়মে তখনও তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী! প্রতিদ্বন্দ্বীর হম্বিতম্বি দেখে তিনি হেসে ফেলছেন!
টানা ২০ বছর উত্তর-পূর্বের ছোট্ট এই রাজ্য শাসন করার অধিকার হারানোর দিনটাতেই বসে বসে দেখছেন, মাত্র কয়েক ঘণ্টায় কী ভাবে বদলে যায় চারপাশের সব কিছু। হাতে গড়়া দুর্গ তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়়ার খবর পেয়ে কি দার্শনিক হয়ে গেলেন? নাকি রাজ্য শাসনের ভার নেমে যাওয়ায় একটু স্বস্তিও বোধ হচ্ছে?
জানার উপায় নেই। সোনামুড়়ার গণনা-কেন্দ্রের দো’তলায় কাউন্টিং হলের ভিতরে তিনি। পিছনে জাল ঘেরা কাউন্টিং টেবলের আশপাশ থেকে ভেসে আসছে রাজ্য বিজয়ের অহঙ্কার এবং শ্লেষ! ঘাড়় ঘুরিয়ে তিনি শুধু মাঝে মাঝে দেখছেন আর জলের বোতলটা নাড়়াচাড়়া করছেন। চোখাচোখি হতে হাসলেনই শুধু।
দশরথ দেবের আমলে এক বারই শুধু গণনার দিন না গিয়ে হেরেছিলেন! সকাল সকাল আজ গণনা-কেন্দ্রে পৌঁছে ধনপুরে যখন তিনি প্রায় ৪০০০ ভোটে এগিয়ে, দাবি উঠেছে বিজেপি-কে জয়ীর শংসাপত্র দিয়ে দেওয়ার। এক বারই শুধু রিটার্নিং অফিসারকে জিজ্ঞেস করেছেন, কত ক্ষণ চলবে এই অসভ্যতা!
আরও পড়ুন: এক লাফে ত্রিপুরার সিংহাসনে বিজেপি
সূর্যাস্তের পরে সিপিএমের এজেন্টদেরও তুলে দেওয়া হয়েছে। বাইরে গর্জন করছে হিংস্র মেজাজের গেরুয়া রংধারী জনতা! ভিতরে তিনি সাদা কাগজে প্রতিবাদপত্র লিখে দিয়েছেন আরও-র হাতে। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপে রাতে আবার ভি ভি প্যাট স্লিপ গোনা শুরু হয়েছে। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে গোটা বাম শিবির।
সোনামুড়়ায় চেয়ারটায় তবু একাই অবিচল তিনি। শেষ দেখবেন! আজ তাঁর একলা হওয়ারই দিন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy