Advertisement
E-Paper

জাতীয়তাবাদের জিগিরেই জোর দিতে মরিয়া বিজেপি

রোহিত ভেমুলা বা কানহাইয়া কুমারের ঘটনায় নাগরিক সমাজে যতই তোলপাড় হোক বা বিরোধীরা যতই সমালোচনায় মুখর হোন, বিজেপি কোনও মতেই তার সুর নরম করতে রাজি নয়। রবিবার দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে গৃহীত রাজনৈতিক প্রস্তাবে স্পষ্ট বলা হল, বাক্‌স্বাধীনতার যুক্তিতে দেশবিরোধী, জাতি-বিরোধী বক্তব্যকে কোনও ভাবে রেয়াত করা হবে না।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০৪:০৮

রোহিত ভেমুলা বা কানহাইয়া কুমারের ঘটনায় নাগরিক সমাজে যতই তোলপাড় হোক বা বিরোধীরা যতই সমালোচনায় মুখর হোন, বিজেপি কোনও মতেই তার সুর নরম করতে রাজি নয়। রবিবার দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে গৃহীত রাজনৈতিক প্রস্তাবে স্পষ্ট বলা হল, বাক্‌স্বাধীনতার যুক্তিতে দেশবিরোধী, জাতি-বিরোধী বক্তব্যকে কোনও ভাবে রেয়াত করা হবে না।

অসহিষ্ণুতা এবং উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে সংসদের ভিতরে ও বাইরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নীরবতা নিয়ে বারবার কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা। এ দিনের বৈঠকে সেই মোদীই কিন্তু দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিয়েছেন, ‘‘দেশ বা জাতির কোনও রকম সমালোচনা বরদাস্ত করা হবে না।’’ এই রণং দেহি মনোভাব সামনে আসায় বিরোধীরা মনে করছেন, রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতাকে এ বার খোলাখুলি দলীয় লাইন বলে স্বীকার করে নিল বিজেপি। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এ দিন বলেন, ‘‘জাতীয়তাবাদ নিয়ে বিজেপির গলায় যেন জর্জ বুশেরই কণ্ঠস্বর! হয় তুমি আমাদের বন্ধু না-হলে তুমি জঙ্গি! এখানে হয় তুমি বিজেপি সমর্থক, না হলেই তুমি দেশবিরোধী!’’

প্রশ্ন হল, আক্রমণের মুখে পড়বেন জেনেও বিজেপি নেতৃত্ব এই লাইন নিচ্ছেন কেন? দলীয় সূত্রের খবর, নেতৃত্ব মনে করছেন, জাতীয়তাবাদ নিয়ে এই বিতর্ক যত গড়াবে, ততই লাভ। জাতীয়তাবাদের হাওয়া এক ধরনের সরকার-সমর্থন তৈরি করবে। সরকারের আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে অসন্তোষ থেকে নজর ঘোরাবে। সঙ্ঘের মতবাদ প্রচারের পক্ষেও এই আবহাওয়া অনুকূল হবে। দলের অন্যতম কৌশলপ্রণেতা অরুণ জেটলি এ দিন বৈঠকে বলেই দিয়েছেন, ‘‘আমাদের বিশ্বাস বা দর্শন, সবেরই ভিত্তি জাতীয়তাবাদ।’’

জেটলির এই কথার ঘোষিত প্রেক্ষিতটি ছিল ‘ভারতমাতা কি জয়’ স্লোগান নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক। জেটলির মতে, এই স্লোগান নিয়ে কোনও বিতর্ক উঠতেই পারে না। যদিও আসাদউদ্দিন ওয়াইসি-রা দাবি করছিলেন, সংবিধানে এমন কোনও বাক্যের জায়গা নেই। মোদী-জেটলিরা এর উত্তরে সংবিধানকে টেনে এনেই বাকস্বাধীনতার সীমা নির্দিষ্ট করে দিলেন। জেটলি বললেন, ‘‘সংবিধানে বাক‌্স্বাধীনতা ও জাতীয়তাবাদের সহাবস্থান রয়েছে ঠিকই। কিন্তু বাক‌্স্বাধীনতার সুযোগে কেউ দেশকে ধ্বংস করার কথা বলতে পারেন না।’’

রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বিজেপির এই অবস্থান মোটেই একটি স্লোগানের গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়। বরং রোহিতের আত্মহত্যা থেকে শুরু করে জেএনইউ-এর ঘটনায় সামগ্রিক ভাবে দেশপ্রেম, দেশদ্রোহ, জাতীয়তাবাদ, আজাদি-র ধারণা নিয়ে নতুন করে তর্কবিতর্ক শুরু হয়েছে। জেএনইউ-এর ছাত্রদের যখন ধরপাকড় করেছে পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বড় অংশই পাশে দাঁড়িয়েছেন। জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা নিয়েই কাটাছেঁড়া করে লাগাতার বক্তৃতার আয়োজন করেছেন। এ বার তাঁরা আজাদি নিয়েও একই ধরনের অনুষ্ঠান করতে চলেছেন। দেশে-বিদেশে মোদী সরকারের এই ভূমিকার তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। অনেকে একে ফ্যাসিবাদী মনোভাব বলতেও ছাড়ছেন না। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি কিন্তু পিছু হঠা তো দূর, আরও বেশি করে কট্টর অবস্থান নিচ্ছে। কারণ জাতিপ্রেমের জিগির তুলে আমজনতার ভাবাবেগকে খুঁচিয়ে তোলাই তাদের লক্ষ্য।

শনিবারের ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচে অমিতাভ বচ্চনের গলায় জাতীয় সঙ্গীত এবং সচিন তেন্ডুলকরের জাতীয় পতাকা নাড়িয়ে জয় উদযাপনও দেশে জাতীয়তাবাদের নতুন জোয়ার তুলেছে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। জেটলি এ দিন এই অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখও করেন। দলের সিদ্ধান্ত, বারে বারে এই অনুষ্ঠানকে প্রচারে নিয়ে আসা হবে।

emphasize bjp nationalism
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy