E-Paper

দূরত্ব ঘুচে সক্রিয় সঙ্ঘ, ভোটে আশায় পদ্ম শিবির 

লোকসভা নির্বাচনের আগে সঙ্ঘ সম্পর্কে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার নেতিবাচক মন্তব্যের পরেই দু’পক্ষের মনোমালিন্যের সূত্রপাত হয়। পরিস্থিতি এমন হয় যে, লোকসভা ভোট চলাকালীন কার্যত বসে যান আরএসএস নেতৃত্ব।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৩৪

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

নিশ্চিত ছিল হার। অতি বড় বিজেপি সমর্থকও ভাবেননি, হরিয়ানায় বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতা ধরে রাখা যাবে। কিন্তু অসাধ্যসাধন করে ভোটের আগের দু’মাসে আরএসএস নেতৃত্বের পথসভা ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, তাঁদের ও সঙ্ঘের মধ্যে লোকসভা ভোটের সময়কার শীতলতা এখন অতীত। ফলে ঝাড়খণ্ড ও মহারাষ্ট্রে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন এবং উত্তরপ্রদেশের ৯টি-সহ বিভিন্ন বিধানসভা আসনে হতে চলা উপনির্বাচনেও আরএসএসের সক্রিয় ভূমিকায় লাভবান হওয়ার আশা পদ্ম শিবিরের।

লোকসভা নির্বাচনের আগে সঙ্ঘ সম্পর্কে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার নেতিবাচক মন্তব্যের পরেই দু’পক্ষের মনোমালিন্যের সূত্রপাত হয়। পরিস্থিতি এমন হয় যে, লোকসভা ভোট চলাকালীন কার্যত বসে যান আরএসএস নেতৃত্ব। তার ফলে উত্তরপ্রদেশ–সহ গোটা দেশের নানা প্রান্তে আশানুরূপ ফল হয়নি বিজেপির। কার্যত লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই আরএসএসের মানভঞ্জনে নামতে হয় স্বয়ং নরেন্দ্র মোদীকে। উত্তরপ্রদেশে মুখ থুবড়ে পড়ে বিজেপি। বিপাকে পড়েন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও।

বিধানসভা উপনির্বাচনেও খারাপ ফল হলে যে তাঁর গদি ছাড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে, তা বিলক্ষণ জানেন যোগী। তাই লোকসভার পর থেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে কয়েকটি বৈঠক করে পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে তৎপর হন তিনি। সূত্রের মতে, সেই কাজে যোগী অনেকটাই সফল। দূরত্ব কমাতে আরএসএস নেতৃত্বের সঙ্গে একাধিক বার বৈঠক করেছেন নড্ডা। এর ফল দেখা গিয়েছে বাস্তবের জমিতে। লোকসভা নির্বাচনে যে আরএসএস নেতৃত্ব বসে গিয়েছিলেন, তাঁরাই উত্তরপ্রদেশে বিজেপির প্রার্থীদের হয়ে পথে নেমেছেন। সূত্রের মতে, হরিয়ানার মতো এ ক্ষেত্রেও আরএসএস কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করছেন। এ যাত্রায় উত্তরপ্রদেশে যে ৯টি বিধানসভায় উপনির্বাচন হচ্ছে, তার মধ্যে চারটিতে জিতেছিল সমাজবাদী পার্টি। সেই জয়ের নেপথ্যে মুসলিম ভোটের বড় অবদান ছিল। সূত্রের মতে, মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে হিন্দু ভোটের মেরুকরণের উদ্দেশ্যে প্রবল ভাবে সক্রিয় সঙ্ঘ। উত্তরপ্রদেশে লোকসভায় ওবিসি ও দলিত ভোটের বড় অংশ বিজেপির থেকে সরে গিয়েছিল। আরএসএসের হস্তক্ষেপে সেই ভোট আবার গেরুয়া শিবিরের ছাতার তলায় ফিরবে বলেই আশা বিজেপির।

মহারাষ্ট্রে সঙ্ঘের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলেছেন উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। নাগপুরে আরএসএসের সদর দফতর। আর এই নাগপুর থেকেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি দেবেন্দ্রর। তাই মহারাষ্ট্রে লোকসভায় খারাপ ফলের পর থেকেই ধারাবাহিক ভাবে আরএসএস নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেন দেবেন্দ্র। বিজেপি সূত্রের মতে, গত কয়েক মাসে অন্তত দু’বার করে বৈঠক করে তিনি পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক করেছেন। মহারাষ্ট্রে বিজেপির যে সঙ্ঘ-সহায়তা প্রয়োজন, তা স্বীকারও করেছেন দেবেন্দ্র। আরএসএস কর্মীদের বার্তা দিতে তিনি জানিয়েছেন, বিজেপির লড়াই কংগ্রেস-সহ ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ শক্তির সঙ্গে। দেশের স্বার্থে হওয়া এই লড়াইয়ে আরএসএসের সাহায্য প্রয়োজন এবং তারা তা করেও চলেছে।

সূত্রের মতে, জনভিত্তি বাড়াতে মহারাষ্ট্রেও এলাকাভিত্তিক তথা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারে জোর দেওয়া হয়েছে। পথসভা, ‘নুক্কড়’ নাটক আয়োজনের পাশাপাশি হিন্দু ভোট মেরুকরণের লক্ষ্যে প্রচারে তৎপর রয়েছে সঙ্ঘ। মহারাষ্ট্রে ওবিসি ও দলিত ভোটের সঙ্গে তফসিলি জাতি-জনজাতি ভোটকে পাখির চোখ করেছে আরএসএস। বিরোধী কংগ্রেস যখন দলিত ‘মাহার’ গোষ্ঠীর ভোট টানতে ব্যস্ত, তখন আরএসএস দলিতদেরই ‘মাতঙ্গ’ গোষ্ঠীতে জনভিত্তি বাড়াতে তৎপর।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

RSS Maharashtra Assembly Election 2024 BJP

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy