E-Paper

‘দুর্বল প্রধানমন্ত্রী’, বিরোধীদের কটাক্ষে জবাব নেই বিজেপির

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে সবথেকে বেশি অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। ভিসা নীতি ঘোষণার পরে গোটা বিজেপি নেতৃত্ব কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন। বিজেপির কয়েক জন মুখপাত্র বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, ভারতের মেধাসম্পদ দেশে ফিরলে আখেরে লাভ হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:৫১

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

চার দিন আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পই সকলের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ‘আমার বন্ধু’ বলেছিলেন। আর আজ সেই ট্রাম্প ভারত থেকে আমেরিকায় কাজ করতে যাওয়া তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী, ইঞ্জিনিয়ারদের ভিসা ফি ১ লক্ষ ডলার করে দেওয়ায় বিরোধীরা নরেন্দ্র মোদীকে ‘দুর্বল প্রধানমন্ত্রী’ বলে নিশানা করলেন।

ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে মোদীকে ‘জন্মদিনের উপহার’ বলে বিরোধীদের অভিযোগ, এই উপহারে গোটা দেশের যন্ত্রণা বাড়ল। নরেন্দ্র মোদী আমেরিকায় গিয়ে ‘অব কি বার ট্রাম্প সরকার’ বলে স্লোগান তুলেছিলেন। তার প্রতিদানের খেসারত এখন ভারতের শিক্ষিত পেশাদারদের দিতে হবে। বিরোধীদের প্রশ্ন, যদি ট্রাম্পের ভিসা নীতির চাপে আমেরিকায় কর্মরত ভারতীয়দের দেশে ফিরে আসতে হয়, তা হলে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ট্রাম্পের বন্ধুত্বে লাভ কী হল?

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে সবথেকে বেশি অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। ভিসা নীতি ঘোষণার পরে গোটা বিজেপি নেতৃত্ব কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন। বিজেপির কয়েক জন মুখপাত্র বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, ভারতের মেধাসম্পদ দেশে ফিরলে আখেরে লাভ হবে। কিন্তু তাঁরা কোথায় উপযুক্ত চাকরি পাবেন, সেই প্রশ্নের মুখে বিজেপির যুক্তি ধোপে টেকেনি। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েও ভিসা নীতি নিয়ে কড়াকড়ি শুরু করেছিলেন। সে সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৭ সালে আমেরিকা সফরে গেলেও ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে ভিসার প্রসঙ্গ তোলেননি। তারপরে রাহুল গান্ধী মোদীকে ‘দুর্বল প্রধানমন্ত্রী’ বলে নিশানা করেছিলেন।

এ বার ট্রাম্প দ্বিতীয় বার প্রেসিডেন্ট হয়ে কার্যত এইচ-১বি ভিসা তুলে দেওয়ার নীতি নেওয়ায় আমেরিকায় কর্মরত ৫ লক্ষ ভারতীয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল আজ বলেছেন, ‘‘আমি ফের বলছি, প্রধানমন্ত্রী দুর্বল।’’ রাহুল-সহ বিরোধী শিবির মোদীকে নিশানা করলেও বিজেপি নেতৃত্ব পাল্টা আক্রমণে যাওয়ার পন্থা খুঁজে পাননি। বিজেপিকে কটাক্ষ করে তৃণমূলের সাংসদ সাগরিকা ঘোষ বলেন, ‘‘ওঁরাই ট্রাম্প ফের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে যজ্ঞ করেছিল। নরেন্দ্র মোদী ‘মাই ফ্রেন্ড ডোলান্ড’ বলে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলেন। এ দেশের ডানপন্থীরা আর কখনও এমন অস্বস্তিতে পড়েননি।’’

বিরোধীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০২৩-এর জুন মাসে নরেন্দ্র মোদী আমেরিকায় গিয়ে অনাবাসী ভারতীয়দের সামনে গর্ব করে বলেছিলেন, ভিসা নবীকরণের জন্য আর আমেরিকার বাইরে যেতে হবে না। আমেরিকায় বসেই ভিসা ‘রিনিউ’ হয়ে যাবে। বিরোধীদের কটাক্ষ, নরেন্দ্র মোদীর বন্ধুর সুবাদে এখন ভিসার জন্য বছরে ৬ লক্ষ টাকার বদলে প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা দিতে হবে। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবের মতে, আমেরিকা এই প্রথম ভারতের সঙ্গে এমন আচরণ করছে না। এর কারণ হল সরকারের দুর্বল বিদেশনীতি। যদি অন্য দেশও একই পদক্ষেপ করে, তার জন্য কি ভারত তৈরি? মোদীর জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রীকে শুধু নাম ধরে সম্বোধন করে ট্রাম্প সমাজ মাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘আপনি দারুণ কাজ করছেন, নরেন্দ্র’। রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন ও ইজ়রায়েলের বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ছাড়া আর কাউকে ট্রাম্প এমন শুধু নাম ধরে সম্বোধন করেন না। কিন্তু সেই বন্ধুত্ব যে বিদেশনীতির বিকল্প নয়, তা মনে করিয়ে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘কোলাকুলি করা, স্লোগান তোলা, বিদেশে গিয়ে জলসা করা, লোক জোগাড় করে ‘মোদী, মোদী’ বলে চিৎকার করানো বিদেশ নীতি হতে পারে না। বিদেশ নীতি হল দেশের স্বার্থ রক্ষা করা। ভারতের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Donald Trump PM Narendra Modi H1B Visa BJP

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy