দেশ ভেজাল খাদ্যে ছেয়ে যাচ্ছে। ধর্মস্থানের প্রসাদে মিশছে বিষ। বিদেশ থেকে আসা খাদ্যপণ্যেও নজরদারিতে শৈথিল্য। সিএজি রিপোর্টের ভিত্তিতে আজ সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব এবং দেশের ‘খাদ্য সুরক্ষা ও মান কর্তৃপক্ষের’ (এফএসএসএআই) কর্তাকে বিরোধী এবং বিজেপি-র সাংসদরা একযোগে এই মর্মে কার্যত তোপ দাগলেন। রাজনৈতিক সূত্রে এ খবর জানা গিয়েছে।
বিরোধী সাংসদদের মধ্যে থেকে এই প্রশ্নও বৈঠকে তোলা হয়েছে: আদানি, অম্বানী-র মতো সংস্থা খাদ্য ব্যবসায় নেমেছে, কিন্তু তাদের খাবারের গুণগত মান পরীক্ষা হচ্ছে কি? সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপি-র অনুরাগ ঠাকুর, রবিশঙ্কর প্রসাদ, নিশিকান্ত দুবের মতো সাংসদরা সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন আজকের বৈঠকে। যত দ্রুত সম্ভব পিএসি-র সদস্যদের তোলা প্রশ্নের জবাব দিতে বলা হয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে।
খাদ্য সুরক্ষার এই নিয়ামক সংস্থার গাফিলতি নিয়ে দীর্ঘদিন আগেই সিএজি প্রশ্ন তোলে। সেই প্রশ্নের ভিত্তিতে পিএসি খাদ্য সুরক্ষার সূচকের সংশোধন সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রস্তুত করে। সেই রিপোর্ট নিয়ে আজ সংশ্লিষ্ট কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে পিএসি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিদেশ থেকে খাদ্য ভারতে ঢোকার ১৬৬টি প্রবেশ পথ (বিমানবন্দর, স্টেশন, বন্দর, স্থলপথ) রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ৭৮টিতে খাদ্যের মান পরীক্ষায় এফএসএসএআই-এর অফিসার রয়েছেন। বাকি ৮৮টিতে পরীক্ষার ব্যাপারই নেই। এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এফএসএসএআই-এর জবাব, শুল্ক বিভাগ বাকিগুলো দেখে নেয়। সাংসদদের পাল্টা প্রশ্ন, খাদ্যের মান পরীক্ষার জন্য যে প্রযুক্তিগত জ্ঞান প্রয়োজন, তা শুল্ক বিভাগের কর্মীদের থাকার কথা নয়।
সূত্রের খবর, বৈঠকে অনুরাগ ঠাকুর সমাজমাধ্যম থেকে পাওয়া কিছু ক্লিপিং দেখিয়ে বলেন, বিদেশের পণ্যের গায়ে খাদ্যগুণের হিসাবসেঁটে দেওয়া থাকে। দেশের খাদ্যপণ্যের মান আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে মানানসই হচ্ছে না। নিশিকান্তদুবে দেওঘরে শ্রাবণী মেলার উদাহরণ তুলে বলেন, ওই এক মাসে আড়াই কোটি মানুষের জন্য প্যাঁড়া প্রসাদ তৈরি হয়। কিন্তু সেই শুকনো ক্ষীরে ভেজালের অভিযোগ উঠছে বার বার। কেন্দ্রীয় সংস্থাটি এত দিনেও খতিয়ে দেখেনি। তৃণমূলের সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় তিরুপতি তিরুমালাইয়ের ৬৮ লাখ কেজি লাড্ডু প্রসাদের ঘিয়ে ভেজালের অভিযোগের প্রসঙ্গ তোলেন। ওই লাড্ডুর ঘি পশুর চর্বি ও রাসায়নিক দিয়ে তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ। এ ক্ষেত্রেও উদাসীন এফএসএসএআই।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বিজেপি সাংসদরাই বৈঠকে বলেন, আগে এই কর্তাদের বহুজাতিক সংস্থারা প্রভাবিত করত, এখন দেশের কর্পোরেট সংস্থারা করে। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বৈঠকে প্রশ্ন তোলেন, আদানি, অম্বানীর মতো আরও কিছু সংস্থা খাদ্যের ব্যবসায় নেমেছে। তাদের খাবারে গুণগত মান কেমন, তা নিয়মিত পরীক্ষা করা হয় কি?
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)