Advertisement
E-Paper

নেতা আসে যায়, আলোও আসে আর যায় বিরসা মুণ্ডার গ্রামে

বার বার উপেক্ষিত হয়েও এ বার ফের অমিত শাহের আগমনকে কেন্দ্র করে বুক বেঁধেছেন গ্রামবাসীরা। বুধুয়া মুণ্ডা নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘আমরা সবাই মিলে অমিত শাহের কাছে আমাদের অসুবিধার কথা বলব। শুনেছি উনি খুব বড় নেতা। বলব, কী ভাবে দিনের পর দিন লোডশেডিং থাকা সত্বেও আমাদের বাড়িতে বিদ্যুতের বিল আসে পাঁচশো-সাতশো টাকা?

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১৫:৪৬
অমিত শাহের আগমন ঘিরে সেজে উঠছে বিরসা মুণ্ডার জন্মস্থান।

অমিত শাহের আগমন ঘিরে সেজে উঠছে বিরসা মুণ্ডার জন্মস্থান।

নেতারা আসেন। ঝুরি ঝুরি প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কিন্তু আর পাঁচটা আদিবাসী গ্রামের মতোই ‘ভগবানের’ গ্রাম উলিহাতু সেই অন্ধকারেই ডুবে থাকে। সেই অন্ধকারে ডুবে থাকা ‘ভগবান’ বিরসা মুণ্ডার জন্মস্থান উলিহাতুতে এখন সাজ সাজ রব। রাস্তায় আলো লাগানো হয়েছে। গ্রামবাসীদের দাওয়ায় নতুন বাল্ব ঝোলানো হয়েছে। এমনকী, যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সারা বছরই প্রায় তালা ঝোলে, সেখানেও এখন চিকিৎসকেরা বসে রয়েছেন।

খুঁটি শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর আসাকে কেন্দ্র করে উলিহাতু গ্রামকে সাজানোর প্রস্তুতি চলছে। মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস জানিয়েছেন, ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সরকারের ১ হাজার দিন পূর্তি উপলক্ষে অমিত আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর তিন দিনের রাঁচী সফরে আসছেন। ১৭ তারিখ তিনি রাঁচী থেকে সোজা আসবেন বিরসা মুণ্ডার গ্রামে। সেখানে বিরসা মুণ্ডার বংশধর কানু মুণ্ডার বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সারবেন। গ্রামের মানুষের সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনবেন।

আরও পড়ুন: অতিথি অমিত, বিরসার ঘরে বসছে টাইলস

বিজেপি সভাপতি আসবেন ১৭-য়। কিন্তু, তার তিন দিন আগে থেকেই জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের ভিড় লেগে আছে উলিহাতুতে। এসপি থেকে শুরু করে জেলাশাসক— সবাই গ্রাম সাজার কাজের তদারকি করছেন। বিরসা মুণ্ডা যে ঘরে জন্মেছিলেন, সেখানে নতুন করে রঙের পোচ পড়ছে। ঘরের মেঝে থেকে শুরু করে দেওয়াল— একবারে পাল্টে ফেলা হচ্ছে। কানু মুণ্ডার ঘরের মেঝেতেও লাগানো হচ্ছে দামি টাইল্‌স।

চলছে সাফাইয়ের কাজ।

এ সব দেখে অবশ্য মুচকি হাসছেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা জানালেন ভিআইপিরা এলেই তাদের এই ভগবানের গ্রামের ওপর নজর পড়ে। ভিআইপি চলে গেলেই আবার উপেক্ষিত হয়ে যায় গ্রাম। সূরজ মুণ্ডা নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘নেতা মন্ত্রীরাও বিরসা মুণ্ডার নাম উচ্চারনের আগে ‘ভগবান’ শব্দটা বলেন। ভগবান বিরসা মুণ্ডার নামে রাঁচীতে এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, স্টেডিয়াম, বাসস্ট্যান্ড, পার্ক কী নেই। বিরসা মুণ্ডার জন্মভূমি যাকে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীরা পবিত্র জন্মভূমি বলে থাকেন, সেটা কী ভাবে দিনের পর দিন উপেক্ষিত থেকে যায়?’’

আরও পড়ুন: রাহুলের তির, মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে মোদী

গ্রামের মুখিয়া রেজন মুণ্ডা বলেন ‘‘গত বছরের অগস্টে এখানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এসেছিলেন। তখন আমাদের এখানে আলো এসেছিল। মন্ত্রী চলে গিয়েছেন। আলোও তার পর চলে গিয়েছে। মাসে দু’এক বার আলো আসে এখানে। এখন আবার গত দু’দিন ধরে গ্রামে আলো আছে। কারণ, বিজেপি সভাপতি আসবেন। বিদ্যুতের কোনও স্থায়ী সমাধান এখনও পর্যন্ত হল না। পানীয় জলের লাইন বসেছে, কিন্তু জল বেশির ভাগ সময়েই থাকে না। শৌচালয় তৈরি হচ্ছে, কিন্তু শৌচাগারে ব্যবহারের জন্য জল কোথা থেকে পাবেন তার উত্তর নেই।’’

অমিত শাহ আসবেন বলে সাজছে বিরসা মুণ্ডার গ্রাম। দেখুন ভিডিও:

গ্রামবাসীরা জানালেন, উন্নতি যে একদম কিছু হয়নি তা নয়। খুঁটি শহর থেকে ঝকঝকে দু’লেনের রাস্তা তৈরি হয়ে গিয়েছে উলিহাতু পর্যন্ত। কিন্তু সেই রাস্তায় সাধারণ মানুষের যাতায়াতের জন্য বাস নেই। এখনও এখানে সকালে একটা ট্রেকার ছাড়ে। ওই ট্রেকার ফের সন্ধ্যায় গ্রামে ফেরে। বাদ বাকি সময় সাইকেল অথবা পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হয়।

বার বার উপেক্ষিত হয়েও এ বার ফের অমিত শাহের আগমনকে কেন্দ্র করে বুক বেঁধেছেন গ্রামবাসীরা। বুধুয়া মুণ্ডা নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘আমরা সবাই মিলে অমিত শাহের কাছে আমাদের অসুবিধার কথা বলব। শুনেছি উনি খুব বড় নেতা। বলব, কী ভাবে দিনের পর দিন লোডশেডিং থাকা সত্বেও আমাদের বাড়িতে বিদ্যুতের বিল আসে পাঁচশো-সাতশো টাকা? আমরা গরিব মানুষ। এত টাকা কোথায় পাব? আমাদের বিল মকুব করা হোক।’’

যখন বিহার-ঝাড়খণ্ড ভাগ হয়নি, সেই নয়ের দশক থেকেই এখানে নেতারা আসছেন। এক প্রবীণ গ্রামবাসী জানালেন, তৎকালীন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবও এই গ্রামে এসে বিরসা মুণ্ডার পবিত্র জন্মভূমিতে দাঁড়িয়ে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিছুই হয়নি।

লালু থেকে অমিত শাহ। দেখা যাক কিছু বদলায় কিনা!

—নিজস্ব চিত্র।

Jharkhand Amit Shah Birsa Munda BJP অমিত শাহ বিরসা মুণ্ডা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy