Advertisement
E-Paper

মাল্য-তির বিজেপির, যুদ্ধের মেজাজে রাহুল

মহারাষ্ট্রে ভিওয়ন্ডী আদালতের বাইরে দাঁড়িয়েই আজ সকালে রাহুল গাঁধী স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, কাল থেকে সংসদের বাজেট অধিবেশনে ছেড়ে কথা বলবেন না নরেন্দ্র মোদীকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪৯

মহারাষ্ট্রে ভিওয়ন্ডী আদালতের বাইরে দাঁড়িয়েই আজ সকালে রাহুল গাঁধী স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, কাল থেকে সংসদের বাজেট অধিবেশনে ছেড়ে কথা বলবেন না নরেন্দ্র মোদীকে। দুপুর গড়াতে মনমোহন সিংহ, চিদম্বরমকেও বেনজির ভাবে নামিয়ে দিলেন মোদীর বাজেটের ভিতের গরমিল নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিতে। এমনকী, বিজয় মাল্যকে ঋণ দেওয়া নিয়ে সকাল থেকে বিজেপি যে ভাবে মনমোহন সিংহ এব‌ং পি চিদম্বরমের ‘দুর্নীতি’ নিয়ে সরব হয়ে কংগ্রেসকে একঘরে করার চেষ্টা করছিল, সেই আক্রমণও ভোঁতা করে দিতে মাঠে নামালেন দলের এই দুই হেভিওয়েটকেই। যাতে বাজেট অধিবেশনের আগে বিজেপির যাবতীয় চাল ভেস্তে দেওয়া যায়।

আজ ছিল মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর প্রয়াণ দিবস। তাঁর হত্যার জন্য আরএসএসকে দায়ী করার মামলায় এ দিনই ভিওয়ন্ডী আদালতে হাজিরা দেন রাহুল। পরের শুনানি মার্চের ৩ তারিখ। আদালত থেকে বেরিয়েই রাহুল মুখর হন মোদী ও সঙ্ঘের সমালোচনায়। জানান, তাঁর লড়াই আরএসএসের বিচারধারার বিরুদ্ধে। যে বিচারধারা গাঁধীকে হত্যা করেছে, যে বিচারধারা খাদির পোস্টার থেকে গাঁধীর ছবি মুছেছে। পরে গোয়ার সভায় রাহুল প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধে বলেন ‘‘কারও কথাই শোনেন না, মোদীজি শুধু বলেন, আমার ‘মন কি বাত’ শুনুন। শুধু নিজের পছন্দের লোকদেরই দেখেন তিনি।’’

পাঁচ রাজ্যে ভোটের মুখে কাল থেকে শুরু হচ্ছে বাজেট অধিবেশন। তার আগে আজ সকালে সর্বদল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আবেদন করেন, ভোটের সময় মতান্তর থাকলেও সংসদের ‘মহাপঞ্চায়েত’ যেন সচল থাকে। যদিও মোদী জানেন, এ বারেও উত্তাল হবে সংসদ। কিন্তু বিরোধীরা যাতে গত বারের মতো সংসদে এককাট্টা হতে না পারে, তার জন্য অধিবেশনের এক দিন আগে মোদীর দল ঝুলি থেকে বার করে আনে বিজয় মাল্যের প্রসঙ্গ। যাতে দুর্নীতির প্রশ্নে কংগ্রেসকে এমন ভাবে কোণঠাসা করা যায় যে, বাকি বিরোধীরা তাদের পাশে দাঁড়ানোর আগে দু’বার ভাবে। বিজেপি এ দিন অভিযোগ করে, মাল্যর লেখা চিঠিতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, তাঁর সংস্থা ডুবে যাওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে মনমোহন সিংহ ও তৎকালীন অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম কী রকম বদান্যতা দেখিয়ে ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। বিজেপির-র দাবি, ব্যাঙ্ককে শাসিয়ে এই কাজ করেছিলেন চিদম্বরম। আর মনমোহনও ‘দয়াবান’ হয়ে বিষয়টি নিজের সচিবকে দেখতে বলেন। বিষয়টিকে গাঁধী পরিবারের সঙ্গে জুড়ে দিতে টেনে আনা হয় মনমোহনের সচিব পুলক চট্টোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গও। বিজেপির অভিযোগ, পুলক চট্টোপাধ্যায় সব ফাইল নিয়ে যেতেন ১০ জনপথে। ফলে সনিয়া-রাহুলের নির্দেশেই এই দুর্নীতি হয়েছে।

এই ধরনের অভিযোগ নিয়ে নিজে বড় একটা মুখ খোলেন না প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন। আজ দেখা গেল অন্য রকম। মনমোহন-চিদম্বরম আজ সংবাদিক বৈঠক করতে এসেছিলেন মোদীর ‘বাজেটের ভিত ভুলে ভরা’— এই বিষয় নিয়ে বলতে। কিন্তু মাল্য প্রসঙ্গে প্রশ্ন ধেয়ে আসতেই মুখ খোলেন মনমোহন। জবাব দেন, ‘‘সব সরকারেই প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা শিল্পমহল থেকে প্রচুর প্রস্তাব পান। বিষয়টি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়াই দস্তুর। আমার কাছে সন্তোষের বিষয়, দেশের আইনের বিরুদ্ধে কিছু করিনি। যা করেছি, তা রুটিন লেনদেন। প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকলে যে কেউ এটাই করবেন।’’ চিদম্বরম বলেন, ‘‘এমন শত শত চিঠি আসে। নীতি পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়াও নতুন নয়।’’ তিনি মনে করিয়ে দেন, ২০০৯-এ মাল্যর সংস্থাকে ঋণ দেওয়ার সময় আদৌ তিনি অর্থমন্ত্রী ছিলেন না। আর ঋণ নয়, তিনি শেয়ার দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তা-ও মাল্যর ডুবন্ত বিমানসংস্থাকে নয়, অন্য লাভজনক সংস্থাকে। এর পরে কংগ্রেস পাল্টা প্রশ্ন ছোড়ে, মাল্যকে পালাতে কে সাহায্য করল? সেটাই তো আসল বিষয়! কেন তাঁর ১,২০০ কোটি টাকা ঋণ মাফ করে দেওয়া হল? কেনই বা বিজেপি তাঁকে রাজ্যসভায় নিয়ে এসেছিল? কংগ্রেস নেতাদের মতে, বাজেটের মুখে দিনের দিন এ ভাবে পাল্টা আক্রমণে ঝাঁপিয়ে বিজেপির মাল্য-তির ভোঁতা করে দিয়েছেন রাহুল-মনমোহন-চিদম্বরমরা।

Rahul Gandhi Narendra Modi Budget Session
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy