Advertisement
E-Paper

বিরোধী আক্রমণের পাল্টা, বিজেপি বুলস আই করল রবার্টকে

দুর্নীতি প্রশ্নে কংগ্রেসের আক্রমণ বন্ধ করতে রবার্ট বঢরাকে আজ শিখণ্ডী খাড়া করল বিজেপি। কিন্তু আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে সনিয়া-রাহুল কার্যত বুঝিয়ে দিলেন, ও সব জুজুতে এ যাত্রায় আর ভয় পাচ্ছেন না তাঁরা! সংসদের অধিবেশন ভন্ডুল হল আজও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৫ ০৩:৫৩
জনতার কাছাকাছি। তিরুচিরাপল্লির এক সভায় রাহুল গাঁধী। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।

জনতার কাছাকাছি। তিরুচিরাপল্লির এক সভায় রাহুল গাঁধী। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।

দুর্নীতি প্রশ্নে কংগ্রেসের আক্রমণ বন্ধ করতে রবার্ট বঢরাকে আজ শিখণ্ডী খাড়া করল বিজেপি। কিন্তু আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে সনিয়া-রাহুল কার্যত বুঝিয়ে দিলেন, ও সব জুজুতে এ যাত্রায় আর ভয় পাচ্ছেন না তাঁরা! সংসদের অধিবেশন ভন্ডুল হল আজও।

সংসদে সরকারকে চাপে ফেলতে এক দিকে যেমন দৌত্যে ‘সফল’ সনিয়া। সংসদের অচলাবস্থা কাটাতে রাজ্যসভার নেতা অরুণ জেটলির ডাকা বৈঠক বয়কটে রাজি করিয়ে ফেলেন তৃণমূল, সপা-সহ সব বিরোধী দলকে। তেমনই মা-কে সংসদে রেখে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচার করতে আজ রাজ্য সফরে বেরোলেন রাহুল গাঁধী। সংসদের বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, দুই মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে এবং শিবরাজ সিংহ চৌহানের ইস্তফা হলে তবেই সংসদে আলোচনা হবে, না হলে নয়।

দুর্নীতিকে আড়াল করার প্রসঙ্গে মোদীর বিরুদ্ধে সমালোচনার সুর আজ চড়িয়ে দেন রাহুল। বলেন,‘‘প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাসযোগ্যতা ক্রমশ মাটিতে মিশে যাচ্ছে। লোকসভা ভোটের আগে ঘুরে ঘুরে মোদীজি বলতেন— খাবো না, খেতেও দেব না। এখন দেখা যাচ্ছে পুরোটাই হাওয়াবাজি। বেলুনের সব হাওয়া বেরিয়ে যাচ্ছে!’’

রাহুল এ ভাবে মুখ খোলার কিছু ক্ষণ আগে সনিয়ার জামাই বঢরার বিরুদ্ধে সংসদের অধিকার ভঙ্গের নোটিশ এনে আজ লোকসভায় হইচই ফেলেছিল বিজেপি। গত কাল থেকেই ইটের বদলে পাটকেল নীতি নিয়েছেন মোদী-জেটলিরা। শাসক দলের কাছে পরিষ্কার যে সংসদের অধিবেশন আর চলতে দেবে না কংগ্রেস। বড় জোর অধিবেশনের শেষ দিকে গিয়ে পণ্য পরিষেবা কর বিল পাশ করানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। তার আগে সংসদের উভয় কক্ষে খামোখা স্রেফ কংগ্রেসের সমালোচনা কেন মুখ বুজে শোনা হবে। সুষমা-বসুন্ধরাদের ইস্তফার দাবিতে কংগ্রেসই বা কেন একতরফা প্রচার নেবে! তাই কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলির দুর্নীতির প্রসঙ্গ তোলার পাশাপাশি সরাসরি গাঁধী পরিবারকে নিশানা করার সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াতের বিরুদ্ধে কেলেঙ্কারির অভিযোগের পর আজ হিমাচলের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ তোলেন তাঁরা। আর সেই সূত্রে রবার্ট বঢরার একটি ফেসবুক পোস্ট তুলে ধরে ধুন্ধুমার ফেলতে চান শাসক দলের সাংসদরা। ‘জামাইয়ের হাতে কৃষকের জমি’ বা ‘উল্টা চোর কোতোয়াল কো ডাঁটে’ স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড তুলে সনিয়া গাঁধীকে বিব্রত করার চেষ্টাও বাদ রাখেননি তাঁরা।

কিন্তু মা-ছেলে যেন এ সবের জন্য প্রস্তুতই ছিলেন। রবার্ট প্রসঙ্গে প্রশ্ন কৌশলে এড়িয়ে আগ্রাসী রাহুল বলেন, ‘‘ললিত মোদী এক জন ফেরার অভিযুক্ত। সুষমা তাঁকে সাহায্য করে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। তাঁর জেলে যাওয়া উচিত। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীও ললিত মোদীকে সাহায্য করেছেন। ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। মধ্যপ্রদেশে ব্যপম কেলেঙ্কারি হয়েছে। ৫০ জনের প্রাণ গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এর পরেও চুপ করে থাকবেন? সুষমা-বসুন্ধরা-শিবরাজের কুকর্ম নিয়ে কী ভাবছেন সেটা তো বলুন।’’

কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা পরে বলেন, আসলে সনিয়া-রাহুলের কাছেও ব্যাপারটা শুধু তিন জনের ইস্তফা নিয়ে জেদাজেদির জায়গায় নেই। কংগ্রেসের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। বিজেপি এ যাত্রায় পার পেয়ে গেলে আগামী দিনে কংগ্রেসের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো মুশকিল। তাই হরিশ রাওয়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠুক বা রবার্টের বিরুদ্ধে, থতমত খেলে চলবে না।

কংগ্রেসের এই মনোভাবটা আজ পরিষ্কার করে দেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপির পুরনো রোগ যায়নি। কোনও অভিযোগের মুখে পড়লেই শাক দিয়ে আঁশটে গন্ধ ঢাকার চেষ্টা করে। রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে পাল্টা গোয়েন্দা লেলিয়ে দেয় বা অন্যের ছিদ্র খুঁজে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করে। কিন্তু কংগ্রেস আর এ সবের জবাব দেবে না!’’ তাঁর কথায়, সুষমা বা বসুন্ধরার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কোনও লড়াই কংগ্রেস করছে না। লড়াইটা হল নীতির। সুষমা ও বসুন্ধরা যে রকম দেশের সঙ্গে ‘গদ্দারি’ করেছেন, তাতে এমনিতেই ওঁদের দল থেকে বের করে দেওয়া উচিত ছিল মোদীর। কংগ্রেসের সংসদ অচল করারও দরকার পড়ত না। কিন্তু বিজেপি সেটা আড়াল করার চেষ্টা করছে। তবে এই সব শব্দবাণের চেয়েও সরকারের আজ চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে জেটলির ডাকা বৈঠক তামাম বিরোধী দল বয়কট করায়। বিশেষ করে তৃণমূল ও সপা-র মতো দলও জেটলির ডাকে সাড়া না দেওয়ায় অস্বস্তি বেড়েছে সরকারের। মোদী-জেটলিরা অবশ্য এখনও আশা ছাড়েননি। এমনকী যে প্রধানমন্ত্রী সচরাচর কারও

সঙ্গে কথাটুকুও বলেন না, তিনিও

আজ বেলা শেষে রাজ্যসভায় গিয়ে বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করে পরিস্থিতি সহজ করার চেষ্টা করেন। সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, গুলাম নবি আজাদ ছাড়াও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও সেখানে ছিলেন। তবে মজার ব্যাপার হল, মোদী চলে যেতেই মনমোহন খেদের সঙ্গেই সতীর্থদের বলেন— সংসদ চালাতে বিজেপির আজ এত আগ্রহ, অথচ ইউপিএ জমানায় কী গণ্ডগোলটাই না করেছে। সিপিএমের এক সাংসদের কথায়, মনমোহন যেন বোঝাতে চাইছিলেন, এ বার ঠ্যালা বুঝুক বিজেপি।

ঠ্যালা বটে। কারণ, সনিয়া-রাহুল আজ যে মনোভাব দেখিয়েছেন, তাতে সংসদের বাদল অধিবেশন স্রেফ হট্টগোল আর গণ্ডগোলে ধুয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই ষোলো আনা।

robert vadra bjp vs opposition bjp befitting reply monsoon session parliament adjourned parliament robert vadra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy