দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে হার দিয়ে দলের সভাপতি হিসাবে ইনিংস শুরু করেছিলেন জে পি নড্ডা। পাঁচ বছর পরে সেই দিল্লিতে দলকে জিতিয়ে সভাপতি হিসাবে নিজের ইনিংস
শেষ করতে চলেছেন ব্রাহ্মণ নেতা নড্ডা। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, সাংগঠনিক নির্বাচন চলতি মাসেই সেরে ফেলা হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে নতুন সভাপতি বেছে নেবে দল। তবে নড্ডার পরিবর্তে কে সভাপতির দায়িত্ব নিতে চলেছেন, তা নিয়ে যথারীতি মুখে কুলুপ বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের। তবে দল বলছে, নতুন সভাপতির প্রথম বড় পরীক্ষা হতে চলেছে এ বছরের বিহার বিধানসভা নির্বাচন।
বিজেপি সভাপতি হিসাবে জল্পনায় রয়েছে একাধিক নাম। দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন জাতীয় সাধারণ সম্পাদক বি এল সন্তোষ। দক্ষিণে কর্নাটকে বিজেপির ক্ষমতায় আসার পিছনে এক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন ওই নেতা। সন্তোষ দীর্ঘ দিন আরএসএসের প্রচারক হিসাবেও দায়িত্বে ছিলেন। পরে আরএসএস থেকে বিজেপিতে আসেন তিনি। বিজেপি সূত্রের মতে, লোকসভা নির্বাচনের আগে জে পি নড্ডার একটি মন্তব্যে আরএসএস ও বিজেপির মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। যার প্রভাব পড়ে লোকসভা ভোটে। সন্তোষের মতো সঙ্ঘ থেকে আসা ব্যক্তিকে বিজেপি সভাপতি করা হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা কমবে বলেই মত রাজনীতিকদের। তা ছাড়া সন্তোষ বিজেপি
রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। বেঙ্কাইয়া নায়ডুর পরে দক্ষিণ থেকে কোনও নেতা বিজেপি সভাপতি হননি। বিশেষ করে বিজেপি যখন দক্ষিণে প্রভাব বাড়ানোর কথা ভাবছে, তখন বি এল সন্তোষ অন্যতম সেরা বাজি হতে পারেন বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিজেপি সভাপতি হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীও। সবথেকে এগিয়ে রয়েছেন অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল। সর্বানন্দ আরএসএস ঘনিষ্ঠ। উপরন্তু জনজাতি সম্প্রদায়ের। তাঁকে বিজেপি সভাপতি করা হলে দেশের জনজাতি তথা পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে বলেই মনে করছে দল। দৌড়ে রয়েছেন হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর। বর্ষীয়ান ওই নেতা দলে দক্ষ সংগঠক হিসাবে পরিচিত। এক সময়ে আরএসএসের প্রচারক হিসাবে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি। আরএসএস নেতৃত্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক এখনও বজায় রয়েছে তাঁর। খট্টরের মতোই দৌড়ে রয়েছেন আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানও। মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বর্তমানে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী, সঙ্ঘোর ঘনিষ্ঠ। বিজেপি সভাপতি হিসাবে আরএসএসের অন্যতম পছন্দের ব্যক্তি শিবরাজ। কিন্তু বিজেপি সূত্রের মতে, তাঁকে সভাপতি করা হলে দল ও সরকারের মধ্যে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই কারণে শিবরাজ নিয়ে আপত্তি রয়েছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের।
জল্পনায় রয়েছে দলের দুই জাতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসল ও বিনোদ তাউড়ের নামও। এঁরা দু’জনেই দলে অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ। এর মধ্যে বনসল রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে, আর তাউড়ে রয়েছেন ভোটমুখী বিহারের। কিন্তু মহারাষ্ট্র নির্বাচনে তাউড়ের বিরুদ্ধে টাকা বিলি করার ভিডিয়ো সামনে চলে আসার পরে দৌড়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন তিনি। দক্ষ সংগঠক হিসাবে পরিচিত ভূপেন্দ্র যাদবও রয়েছেন জল্পনায়। অমিত শাহ-ঘনিষ্ঠ ওই নেতা দলে মৃদুভাষী, নীরবে পিছন থেকে কাজ করায় বিশ্বাসী। আগামী লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা মাথায় রেখে ভূপেন্দ্রকেও দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষপাতী দলের একটি বড় অংশ।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)