Advertisement
E-Paper

মহারাষ্ট্রের পুরভোটে দাদাগিরি বিজেপির

মালাবার হিলস বনাম মাতোশ্রীর ম্যাচ। শেষমেশ দু’রানে মাতোশ্রী এগিয়ে থাকল বটে। কিন্তু গত বারের থেকে প্রায় আড়াই গুণ রান বাড়িয়ে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ মালাবারই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪০
জয়োল্লাস! নয়াদিল্লিতে বিজেপির কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।

জয়োল্লাস! নয়াদিল্লিতে বিজেপির কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।

মালাবার হিলস বনাম মাতোশ্রীর ম্যাচ। শেষমেশ দু’রানে মাতোশ্রী এগিয়ে থাকল বটে। কিন্তু গত বারের থেকে প্রায় আড়াই গুণ রান বাড়িয়ে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ মালাবারই।

বালসাহেব ঠাকরের মৃত্যুর পর এ বারই প্রথম নিজের জোরে মুম্বইয়ের ‘সিংঘম’ হতে চেয়েছিলেন উদ্ধব ঠাকরে। বাসভবন মাতোশ্রীতে তার তোড়জোড়ও চলছিল। কিন্তু মুম্বইয়ের মালাবার হিলসের বাসিন্দা, মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীশ তাতে অনেকটাই জল ঢেলে দিলেন। যার ফলে দেশের মধ্যে সর্বাধিক, ৩৭ হাজার কোটি টাকা বাজেটের বৃহন্মুম্বই পুরসভার মেয়র শিবসেনার হবেন ঠিকই। কিন্তু মাত্র দু’টি আসনে পিছিয়ে শেষ করা বিজেপি নিঃশ্বাস ফেলবে উদ্ধবের দলের ঘাড়ে।

দিনটা আজ বিজেপিরই। মুম্বই-সহ রাজ্যের যে দশটি পুরসভায় ভোট হয়েছিল, এত দিন তার মাত্র দু’টিতে ক্ষমতায় ছিল নরেন্দ্র মোদীর দল। অকোলা এবং নাগপুর। এ বারের ভোটে ওই দু’টি-সহ মোট ৮টি পুরসভা দখল করেছে বিজেপি। শিবসেনার ঝুলিতে শুধু মেরেকেটে এগিয়ে থাকা মুম্বই ও ঠাণে। মহারাষ্ট্রের জেলা পরিষদ নির্বাচনেও দাপট ধরে রেখেছে বিজেপি।

অটলবিহারী বাজপেয়ী-বালসাহেব ঠাকরের জমানা থেকে মুম্বইয়ে দখল ছিল শিবসেনারই। তারা বড় দাদা, বিজেপি ছোট— ভাবটা ছিল এমনই। মোদী এসেই বদলে দেন অঙ্কটা। বিধানসভায় শিবসেনার সঙ্গত্যাগ করে মাতোশ্রীর দাদাগিরি ধুলোয় মিশিয়ে দেন। তারই বদলা নেওয়ার পালা ছিল উদ্ধবের। হুমকি দিয়েছিলেন, আর কখনও জোট বাঁধবেন না বিজেপির সঙ্গে। দলীয় মুখপত্রে নোট বাতিলকে হিরোশিমা-নাগাসাকির সঙ্গে তুলনা করে সংঘাত চরমে নিয়ে গিয়েছিলেন উদ্ধবরা।

আজ প্রকাশ্যে সেই সংঘাতের সুরই বজায় রেখে উদ্ধব বলেছেন, ‘‘আমি খুশি। মুম্বইয়ে শিবসেনারই মেয়র হবে। পরের বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীও শিবসেনা দেবে।’’ কিন্তু ওইটুকুই। শোনা যাচ্ছে, আসলে আদৌ খুশি নন শিবসেনা প্রধান। পাঁচ বছর আগে জোট বেঁধে লড়ার পরে বৃহন্মুম্বই পুরসভায় শিবসেনার আসন ছিল ৭৫টি, বিজেপির ৩১টি। এ বার বিজেপি সংখ্যাটা বাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে ৮২-তে। শিবসেনা সেখানে ৮৪। ২২৭ আসনের পুরসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে ফের শরিক খোঁজা ছাড়া গত্যন্তর নেই উদ্ধবের।

আজই অবশ্য নিজের এলাকায় জেলা পরিষদে খারাপ ফলের দায় নিয়ে ইস্তফা দিতে চেয়েছেন প্রয়াত বিজেপি নেতা গোপীনাথ মুণ্ডের কন্যা পঙ্কজা। কিন্তু এমন অস্বস্তির উদাহরণ খুব বেশি নেই। বরং বিজেপি শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, মহারাষ্ট্রের সাফল্য এক ঢিলে অনেক পাখি মেরেছে। একে তো নোট বাতিলের পরে প্রথম বড় পরীক্ষায় সামগ্রিক ভাবে গ্রাম ও শহর দখলে রেখেছে বিজেপি। ফলে এ বার জোর গলায় বলা যাবে যে, দেশের আর্থিক রাজধানী মুম্বইয়েই নোট বাতিলের কোনও প্রভাব পড়েনি! এ ছাড়া শিবসেনার ‘দাদাগিরি’ কমানো গিয়েছে, শরদ পওয়ারের কিছু এলাকা (পুণে, পিম্পরি-ছিঞ্চওয়াড়) ছিনিয়ে আনা গিয়েছে। এবং উত্তরপ্রদেশে ভোটের মুখে কার্যত মুছে দেওয়া গিয়েছে কংগ্রেসকে।

আরও পড়ুন: আবার হারে চিন্তায় কংগ্রেস নেতৃত্ব

বিজেপি নেতা প্রকাশ জাভড়েকর আজ বলেছেন, ‘‘এতেই স্পষ্ট, গরিবরা বিজেপির সঙ্গে আছেন। কংগ্রেস, এনসিপি খতম। নাসিক এমএনএসের থেকে আমাদের ঝুলিতে এসেছে। এসেছে পুণেও। শোলাপুর সুশীল শিন্দের (কংগ্রেসের) গড়, সেখানেও বিজেপির জয়জয়কার!’’ ওড়িশার পঞ্চায়েত ভোটে সদ্য ভাল ফল করেছে বিজেপি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ওড়িশার সঙ্গে মহারাষ্ট্রের জয়ের মিলিত প্রভাব আখেরে উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে প্রবল আত্মবিশ্বাস দেবে বিজেপিকে। অখিলেশ যাদবের রাজ্যে এত দিন নির্বাচনী সভায় মূলত মেরুকরণেই উস্কানি দিয়েছেন মোদী এবং অমিত শাহ। তখন ভাবা হচ্ছিল, নোট বাতিল বা সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো অস্ত্রগুলি কাজ না করায় ধর্মীয় তাস খেলছে মরিয়া বিজেপি। কিন্তু এখন তাদের নয়া অস্ত্র হবে মহারাষ্ট্র।

বস্তুত, সেই অস্ত্রে শান দেওয়া শুরুও করে দিয়েছেন শীর্ষ নেতারা। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘‘সপা-র মধ্যেই অনেকে ভাবছেন, কংগ্রেসকে ১০৩টি আসন ছাড়া কি ঠিক হল!’’ মোদী মুখ খুলেছেন টুইটারে। লিখেছেন, ‘‘প্রথমে ওড়িশায় অভূতপূর্ব সমর্থন। আর এখন মহারাষ্ট্রের মানুষের আশীর্বাদ। ২০১৭-র শুরুটা বেশ ভাল হল। শহর ও গ্রাম, দু’ক্ষেত্রেই বিজেপি এখন বড় শক্তি। ধন্যবাদ প্রত্যেক ভারতীয়কে।’’

BJP Maharashtra corporations
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy