Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Sukhoi 30

উদ্ধার হল ভেঙে পড়া সুখোইয়ের দুই চালকের দেহাংশ

ভেঙে পড়া সহদেবন জানান, ২২ মে ছিল ছেলের জন্মদিন। সকালে ফোনে আশীর্বাদ জানিয়েছিলেন। রাতে ফ্লাইং জোনে থাকায় ছেলে বেশি কথা বলতে পারেনি। আশা ছিল পরের দিন লম্বা ফোনালাপ হবে।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৭ ১৮:৩৬
Share: Save:

ছেলের জন্মদিনের সকালেই শেষবার তার গলা শুনেছিলেন ইসরোর অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী পি ভি সহদেবন। ভাল করে কথা হয়নি রাতেও। অপেক্ষায় ছিল পরের দিন ছেলের কাছ থেকে ফোন আসার। সেই ফোন আসেনি। বদলে খবর আসে, ২৫ বছরের ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আচু দেব এবং তাঁর সঙ্গে থাকা স্কোয়াড্রন লিডার দেবেশ পঙ্কজ সুখোই-৩০ এমকেআই নিয়ে ওড়ার পর থেকেই নিখোঁজ। কু-ডাক ডেকেছিল তখনই। তাই স্ত্রীকে নিয়ে সহদেবন কেরল থেকে তেজপুরে চলে আসেন। অরুণাচলের জঙ্গল থেকে একে একে উদ্ধার হয় বিমানের ভগ্নাবশেষ, ব্ল্যাক বক্স। এ দিন তল্লাশির পরে সেনাবাহিনী সূত্রে জানানো হয়, দুই চালকই মৃত। পাওয়া গিয়েছে তাঁদের রক্তমাখা পোষাক। প্যান কার্ড। দুর্ঘটনাস্থল দেখে অভিযানকারীদের অনুমান, চালকরা 'ইজেক্ট' করার সুযোগই পাননি।

আরও পড়ুন: অরুণাচলের জঙ্গলে মিলল নিখোঁজ হওয়া সুখোই ৩০ যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ

ভেঙে পড়া সহদেবন জানান, ২২ মে ছিল ছেলের জন্মদিন। সকালে ফোনে আশীর্বাদ জানিয়েছিলেন। রাতে ফ্লাইং জোনে থাকায় ছেলে বেশি কথা বলতে পারেনি। আশা ছিল পরের দিন লম্বা ফোনালাপ হবে। কিন্তু ২৩ মে সকাল সাড়ে ১০টায় তেজপুর শালনিবাড়ি থেকে সুখোই নিয়ে ওড়ার কিছুক্ষণ পরেই অসম-অরুণাচল সীমানা থেকে উধাও হয়ে যায় তাদের সুখোই। জানুয়ারি মাসে ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিল ছেলে। শেষ দেখা হয়েছিল মার্চ মাসে।

অন্য দিকে দিল্লির দেবেশ পঙ্কজের প্রাণ ছিল তারা ছোট্ট কন্যা। মেয়ের সঙ্গে সেলফি তুলতে ভালবাসত সে। ভাই চেতন বলেন, "২৩ মে থেকে নরক যন্ত্রণা ভোগ করছিলাম আমরা। চলছিল প্রার্থনা। কিন্তু গত কালই তেজপুর থেকে খবর আসে দেবেশের দেহ না পাওয়া গেলেও ককপিটে মিলেছে তাঁর জুতো। দেহ উড়ে গেলেও জুতোর মধ্যে থেকে গিয়েছিল তার পায়ের পাতা। ভাইয়ের চিহ্ন বলতে সেটাই সম্বল।" তাঁর কথায়, "সুখোই চালানো ছিল ভাইয়ের স্বপ্ন। খুব ভালবাসতে আকাশে উড়তে। কিন্তু ভালবাসার জিনিস এমন অসময়ে তাকে কেড়ে নেবে ভাবিনি। দেবেশের সহকর্মীরা স্বান্তনা দিয়েছেন, ভাই কষ্ট পেয়ে মরেনি। সেকেন্ডের মধ্যে উড়ে গিয়েছিল দু'জনের দেহ।"

দুই পরিবারে প্রশ্ন, এত উন্নত প্রযুক্তির বিমান ও বিমানবাহিনীর পরিকাঠামো এত উন্নত হওয়ার পরেও কেন মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে ভেঙে পড়া সুখোই খুঁজতে পাঁচ দিন কেটে গেল? কেন এক সপ্তাহ পরেও তেজপুরে পৌঁছাল না দুই চালকের দেহাবশেষ? কেনই বা পরিবারকে মৃত্যুসংবাদ দিলেও, এখনও সরকারিভাবে দু'জনের মারা যাওয়ার খবর ঘোষণা করা হচ্ছে না?

সেনা মুখপাত্র সম্বিৎ ঘোষ বলেন, "মন্দ আবহাওয়া ও দুর্গম পাহাড়ের কারণেই অভিযানে দেরি হচ্ছে। মৃত্যুসংবাদ ঘোষণা করার নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। পরিবারকে জানানোর বিষয়টি ভিন্ন, কিন্তু অনেক বিষয় যাচাই করার পরেই বিমানবাহিনী পাইটলদের মৃত বলে সরকারিভাবে ঘোষণা করতে পারে।"

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE