Advertisement
E-Paper

টলস্টয়-সঙ্কটে বিজেপি, উদ্ধার করল কোর্টই

কী জবাব দেওয়া হবে এর? আবার যে বইটি নিয়ে এই বিতর্ক, বিজেপি-র সদর দফতরে হাজির মুখপাত্ররা লিয়ো টলস্টয়ের লেখা সেই ‘ওয়র অ্যান্ড পিস’-এর নামই শোনেননি, পড়া তো দূরের কথা। প্রশ্নের মুখে পড়ে শীর্ষ নেতাদের কাছে তাঁরা বার্তা পাঠান, কী জবাব দেওয়া হবে জানান। ঠিক হয়, বিজেপি-র কার্যকরী সভাপতি জে পি নড্ডাই এর উত্তর দেবেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৯ ০৩:০৮
নরেন্দ্র মোদীর হাতে ‘ওয়র অ্যান্ড পিস’ বইটির ছবি বৃহস্পতিবার ছিল ভাইরাল। তখনও অবশ্য বই-বিতর্ক সম্পর্কে নতুন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

নরেন্দ্র মোদীর হাতে ‘ওয়র অ্যান্ড পিস’ বইটির ছবি বৃহস্পতিবার ছিল ভাইরাল। তখনও অবশ্য বই-বিতর্ক সম্পর্কে নতুন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

দুপুর থেকে বিজেপি নেতারা ভেবেই পাচ্ছিলেন না, কী ভাবে এর জবাব দেবেন!

‘শহুরে নকশাল’ সন্দেহে ধৃতদের বাড়ি থেকে যে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ বই উদ্ধার হয়েছে, যে বই নিয়ে বম্বে হাইকোর্ট প্রশ্ন তুলেছে, খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই লাইব্রেরিতে গিয়ে কি না সেই বই উল্টেপাল্টে দেখছেন!

কী জবাব দেওয়া হবে এর? আবার যে বইটি নিয়ে এই বিতর্ক, বিজেপি-র সদর দফতরে হাজির মুখপাত্ররা লিয়ো টলস্টয়ের লেখা সেই ‘ওয়র অ্যান্ড পিস’-এর নামই শোনেননি, পড়া তো দূরের কথা। প্রশ্নের মুখে পড়ে শীর্ষ নেতাদের কাছে তাঁরা বার্তা পাঠান, কী জবাব দেওয়া হবে জানান। ঠিক হয়, বিজেপি-র কার্যকরী সভাপতি জে পি নড্ডাই এর উত্তর দেবেন।

শেষ বেলায় অবশ্য বিজেপি মুখপাত্রদের ‘ওয়র’ বা লড়াইয়ে নামতে হয়নি। বম্বে হাইকোর্টই তাঁদের ‘পিস’ বা শান্তি ফিরিয়ে দিয়েছে। বুধবার ভীমা কোরেগাঁও মামলায় ‘শহুরে নকশাল’ সন্দেহে ধৃতদের বিরুদ্ধে মামলার শুনানির পরে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছিল, বম্বে হাইকোর্ট শিক্ষাবিদ ভারনন গনসালভেসের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া টলস্টয়ের ধ্রুপদী সাহিত্য ‘ওয়র অ্যান্ড পিস’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিচারপতি সারঙ্গ কোতোয়াল প্রশ্ন তুলেছেন, কেন এই ধরনের আপত্তিকর বই তাঁর বাড়িতে ছিল? অন্য দেশের যুদ্ধ নিয়ে লেখা বই তাঁর বাড়িতে ছিল কেন?

এ নিয়ে দেশ জুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। কেন্দ্রের মতো মহারাষ্ট্রেও বিজেপি সরকার। মহারাষ্ট্র পুলিশই শিক্ষাবিদ-সমাজকর্মীদের ‘শহুরে নকশাল’ তকমা দিয়ে গ্রেফতার করেছে। কংগ্রেসের জয়রাম রমেশের মতো নেতারা কটাক্ষ করেন, ‘‘এটাই নতুন ভারত!’’ তার মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ২০১৩-র একটি ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, মোদী একটি লাইব্রেরিতে বসে ‘ওয়র অ্যান্ড পিস’ নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন।

সংবাদ সংস্থা জানাচ্ছে, আজ বম্বে হাইকোর্টে বিচারপতি কোতোয়াল জানান, টলস্টয়ের ধ্রুপদী সাহিত্য ‘ওয়র অ্যান্ড পিস’ নিয়ে নিশ্চয়ই তিনি অবগত রয়েছেন। সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট দেখে তিনি ‘স্তম্ভিত’ বলেও মন্তব্য করেন। ওই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত সুধা ভরদ্বাজের আইনজীবী যুগ চৌধুরী বলেন, বিচারপতি আসলে যে বইয়ের কথা উল্লেখ করেছিলেন, তার নাম ‘ওয়র অ্যান্ড পিস ইন জঙ্গলমহল— পিপল, স্টেট অ্যান্ড মাওয়িস্ট’। সম্পাদনায় বিশ্বজিৎ রায়। টলস্টয়ের ‘ওয়র অ্যান্ড পিস’ নয়। পুলিশের বাজেয়াপ্ত করা বইয়ের তালিকায় সেই বইয়েরই উল্লেখ আছে।

‘ওয়র অ্যান্ড পিস ইন জঙ্গলমহল’-এর প্রকাশক সুব্রত দাস জানিয়েছেন, মহাশ্বেতা দেবী, সুজাত ভদ্র, সন্তোষ রানা, বিনায়ক সেনদের নিবন্ধ রয়েছে বইটিতে। কয়েকটি লেখায় কড়া সমালোচনাও করা হয়েছে মাওবাদীদের। গণতান্ত্রিক সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে তাদের সমাধান খোঁজা উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। প্রকাশক বলেন, ‘‘এই বই কেন আপত্তিকর হতে পারে, বুঝতে পারছি না।’’ বইটির সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই এই বইকে দেশবিরোধী বলা যায় না। আমি সাংবাদিক। সাংবাদিকের চোখেই বিষয়টি দেখার চেষ্টা করেছি।’’ তিনি জানান, ২০১২ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মাওবাদীদের শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর বইটি প্রকাশিত হয়। তার আগেও বিভিন্ন রাজ্যে বার বার শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। কী কারণে তা ব্যর্থ হচ্ছে, বিভিন্ন জনের লেখায় তা খুঁজে বের করার চেষ্টা হয়েছে।

গলসালভেসের আইনজীবী জানান, ওই বইটি ছাড়াও সাংস্কৃতিক সংগঠন কবীর কলামঞ্চের ‘রাষ্ট্রদমন বিরোধী’ নামক সিডি, কার্ল মার্ক্সের বইয়ের মতো যে সব জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তার কোনওটাই নিষিদ্ধ নয়। বিচারপতি কোতোয়াল বলেন, ‘‘গত কাল আমি চার্জশিট থেকে তালিকাটি পড়ছিলাম। খুবই খারাপ হাতের লেখা। আমি ‘ওয়র অ্যান্ড পিস’-এর বিষয়ে জানি। আমি পুলিশের তালিকা নিয়েই প্রশ্ন করছিলাম।’’ প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে অন্য দেশের যুদ্ধ সম্পর্কে বইয়ের কথা বিচারপতি বলেছিলেন কেন? আইনজীবীদের ব্যাখ্যা, যুদ্ধ সম্পর্কে মাও জে দং-য়ের লেখা অন্য একটি মরাঠি বই নিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।

বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি নিজেই ব্যাখ্যা দেওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন বিজেপি নেতারা। সভাপতি অমিত শাহ এ দিন গুজরাতে ছিলেন। দিল্লির দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে বিজেপির সদর দফতরে কার্যকরী সভাপতি জে পি নড্ডা শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সদস্য সংখ্যা বাড়ানো অভিযান নিয়ে বৈঠক করছিলেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে খবর আসে, মোদীর হাতের ‘ওয়র অ্যান্ড পিস’ অস্পৃশ্য নয়। তার পরেও অবশ্য নড্ডাকে বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। বিজেপির কার্যকরী সভাপতি আশ্চর্যচকিত ভাব করে বলেন, ‘‘তাই না কি? কোন বই? কীসের বই? আমাকে গোটা বিষয়টির বিবরণ পাঠিয়ে দিন। আমি খতিয়ে দেখছি।’’

LeoTolstoy BJP BombayHC WarandPeace
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy