Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Madhya Pradesh Urination Case

প্রবেশের বাড়ি তৈরি করতে তহবিল, প্রশ্নে ‘নির্যাতিত’ আদিবাসী

প্রবেশের স্ত্রী কাঞ্চন শুক্ল জানিয়েছেন, কুবরি গ্রামের পারিবারিক বাড়িটি প্রবেশ বা তাঁর বাবার নয়। প্রবেশের ঠাকুরমার নামে রেজিস্ট্রি করা। বাড়িটির দলিল-পড়চা সবই রয়েছে।

Pravesh Shukla.

(বাঁ দিকে) অভিযুক্ত প্রবেশ শুক্ল। (ডান দিকে) আদিবাসী শ্রমিকের মুখে প্রস্রাব করার সেই মুহূর্ত। —ফাইল চিত্র ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৩ ০৮:২৬
Share: Save:

মধ্যপ্রদেশে রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা আদিবাসী দিনমজুরকে তুলে তার গায়ে-মাথায় প্রস্রাব করে দিয়েছিল বিজেপির যে স্থানীয় যুবনেতা, সেই প্রবেশ শুক্ল জাতে ব্রাহ্মণ। ভোটের মুখে আদিবাসী প্রেম দেখাতে তার বাড়ি বুলডোজার পাঠিয়ে ভেঙে দিয়েছিল মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার। সেই বাড়ি গড়ে দিতে তহবিল সংগ্রহে নেমেছে বাড়ি ভাঙায় ক্ষুব্ধ সেখানকার ব্রাহ্মণ সমাজ। একই সঙ্গে কোন আইনে সরকার বৈধ বাড়ি ভেঙে একটি পরিবারকে বেঘর করে দিয়েছে, তা জানতে হাই কোর্টে যাচ্ছে এই সংগঠন। আবার, যে আদিবাসী যুবককে নিজের বাড়িতে ডেকে পা ধুইয়ে, গাছ পুঁতিয়ে ছবি তোলালেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান, তিনি আদতে নির্যাতিত যুবকই কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ, অন্য এক জনকে নির্যাতিত সাজিয়ে পুলিশই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পেশ করে। এই যুবকই পরে প্রবেশকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশের কাছে আর্জি জানায়। বলা হচ্ছে, এতে বিজেপির আদিবাসী প্রেম দেখানোও হল, ধৃত যুবনেতাকে মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রও প্রস্তুত করা হল।

প্রবেশের স্ত্রী কাঞ্চন শুক্ল জানিয়েছেন, কুবরি গ্রামের পারিবারিক বাড়িটি প্রবেশ বা তাঁর বাবার নয়। প্রবেশের ঠাকুরমার নামে রেজিস্ট্রি করা। বাড়িটির দলিল-পড়চা সবই রয়েছে। সরকারের নির্দেশে সেই বাড়ি ভেঙে দেওয়ায় গোটা পরিবার এখন অন্যের দয়ায় আত্মীয়দের বাড়িতে মাথা গুঁজে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। ওই বাড়িতে প্রবেশ তাঁর স্ত্রী, ৩ বছরের শিশু কন্যা এবং বাবা-মাকে নিয়ে থাকত। স্ত্রীর প্রশ্ন— প্রবেশ মদের ঝোঁকে যে নিন্দনীয় কাজ করেছে, তার জন্য তার পরিবার কেন দায়ী হবে? কেন তাদের বেঘর করা হবে? প্রবেশের বাবা রমাকান্ত শুক্লর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নম্বর এখন ফোনের হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সঙ্গে আবেদন— অবিচারের শিকার পরিবারটিকে সাহায্য করুন।

অখিল ভারতীয় ব্রাহ্মণ সমাজের মধ্যপ্রদেশ শাখার সভাপতি পুষ্পেন্দ্র মিশ্র বলেন, “প্রবেশ যা করেছে, তা ভয়ানক অপরাধ। আমরা তার ঘোর নিন্দা করি। কিন্তু একটি ব্রাহ্মণ পরিবারকে তার জন্য কেন শাস্তি পেতে হবে? আমরা এই পরিবারের বাড়ি আবার গড়ে দেব। তার জন্য তহবিল সংগ্রহ করা হচ্ছে।” মিশ্র জানান, ইতিমধ্যে দিন গুজরানের জন্য ৫১ হাজার টাকা শুক্ল পরিবারের হাতে দেওয়া হয়েছে। কোন আইনে রাজ্য সরকার একটি পরিবারের বৈধ বাড়ি ভেঙে দিয়ে তাদের ঘরছাড়া করতে পারে, তা জানতে হাই কোর্টে মামলা করছে ব্রাহ্মণ সমাজ।

উচ্চ বর্ণের ভোটের বড় অংশ বরাবর বিজেপির কাছে যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে প্রবেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে মামলা এনেছে, বা তার পারিবারিক বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে, তাতে ক্ষোভ চাপা নেই উচ্চ বর্ণের। অনেকে বলছেন, আদিবাসী ভোট টানতে গিয়ে নিজেদের আদি ভোটব্যাঙ্ককে চটিয়ে ফেলছেন শিবরাজ। কিন্তু তিনি যে যুবককে পরের দিন বাড়িতে এনে পা ধোয়ালেন, এক সঙ্গে গাছ পুঁতলেন— সে আদৌ নির্যাতিত যুবকটি কি? ভিডিয়ো দেখিয়ে অনেকেই সেই প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ ভিডিয়োয় নির্যাতিতের চেহারার সঙ্গে এই যুবকের চেহারার অনেক ফারাক নেট মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, নকল নির্যাতিতকে নিয়ে শিবরাজ যা করেছেন, তা পুরোটাই সাজানো নাটক। পুলিশ অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করছে। তাদের বক্তব্য, অনেককে দিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করে তবেই ওই যুবককে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সুতরাং সব অভিযোগ মিথ্যা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhya Pradesh adivasi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE