E-Paper

দর কষতে আটকে রাখা হচ্ছে পূর্ণমকে

পূর্ণম প্রশ্নে গত কয়েক দিনে একাধিকবার ফ্ল্যাগ মিটিং-এ বসেছিল ভারত-পাকিস্তান। গোড়ায় ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে আগ্রহ দেখানো হলেও, পরের দিকে তা এড়িয়ে যেতে থাকে পাকিস্তান রেঞ্জার্স।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:০৭

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ফসল কাটতে যাওয়া কৃষকদের রক্ষা করতে গিয়ে পূর্ণমকুমার সাউ যে এমন বিড়ম্বনায় পড়বেন তা ভাবতে পারছেন না বিএসএফ কর্তারা। ঘটনার প্রায় সাত দিন কেটে যাওয়ার পরেও পূর্ণমের পাকিস্তান রেঞ্জার্সের হাতে বন্দি থাকার পিছনে সাম্প্রতিক উত্তেজনাকেই দায়ী করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। পরিস্থিতি ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত পূর্ণমের মুক্তি পাওয়া ‘কিছুটা কঠিন’ বলেই ঘরোয়া ভাবে স্বীকার করে নিচ্ছে বিএসএফও। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী দিনে দর কষাকষি করার জন্য পূর্ণমকে এ ভাবে আটকে রাখা হচ্ছে।

পূর্ণম প্রশ্নে গত কয়েক দিনে একাধিকবার ফ্ল্যাগ মিটিং-এ বসেছিল ভারত-পাকিস্তান। গোড়ায় ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে আগ্রহ দেখানো হলেও, পরের দিকে তা এড়িয়ে যেতে থাকে পাকিস্তান রেঞ্জার্স। এর জন্য সীমান্তের উত্তেজনাই অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিএসএফ সূত্রে বলা হয়েছে, ভুল করে সীমান্ত পেরিয়ে চলে যাওয়া বা এক বাহিনীর হাতে অন্য বাহিনীর জওয়ানের আটক হওয়া এবং তার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া খুব স্বাভাবিক ঘটনা। অতীতেও তা একাধিকবার হয়েছে। এমনকি সকালে আটক জওয়ানের বিকেলের মধ্যে নিজের ব্যারাকে ফিরে আসারও নজির রয়েছে। এ সব ক্ষেত্রে সাধারণত যে পক্ষ আটক করে, তারা ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে অপর পক্ষকে প্রতিবাদপত্র তুলে দিয়ে আটক জওয়ানকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিবাদপত্র ভারতকে দেওয়া হয়নি। যা দেখে মনে করা হচ্ছে, হস্তান্তরের বিষয়টি দীর্ঘায়িত করার পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে পাকিস্তান। সূত্রের মতে, ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে মীমাংসা না হওয়ায় কূটনৈতিক স্তরেও এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিএসএফ সূত্রের মতে, এই মুহূর্তে সীমান্ত এলাকা থেকে সরিয়ে পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের কোথাও আটকে রাখা হয়েছে পূর্ণমকে।

পূর্ণমকে ফিরিয়ে আনতে পঠানকোটে রওনা হয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী রজনী। আজ সকালে রজনী সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়োয় জানান, তাঁরা হিমাচল প্রদেশের কাংড়ায় বিএসএফের সদর দফতরে রয়েছেন। স্বামী কেমন আছেন, সুস্থ আছেন কি না, পাকিস্তান থেকে মুক্ত হবেন— বিএসএফের সিইও-র কাছে তিনি এ সব জানতে চাইবেন। এর পরে তাঁদের আট বছরের ছেলে বলে, ‘‘বাবা দ্রুত ভারতে আসুক। পাকিস্তান বাবাকে ছেড়ে দিক।’’ সূত্রের খবর, সকালে ওই বিএসএফ কর্তার সঙ্গে তাঁরা দেখা করেন। বিএসএফের তরফে তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়। বিকেলে রজনীর মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তাঁর বোন বন্দনা গুপ্ত ফোন ধরে বলেন, ‘‘এখন কিছু বলার নেই।’’ হুগলির রিষড়ায় বাড়িতে পূর্ণমের বাবা ভোলানাথ সাউ বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথা বলব না আমরা।’’

পঞ্জাবের পাঠানকোটের ফিরোজপুরে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ২৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কনস্টেবল পূর্ণম। বুধবার দুপুরে কাঁটাতারের বাইরে থাকা ভারতীয় অংশে ফসল কাটতে যাওয়া ভারতীয় কৃষকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। বিএসএফ সূত্রের মতে, কাঁটাতারের বাইরে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’-এ ভারতের খেত শেষ হলেই শুরু হয় পাকিস্তানের চাষযোগ্য জমি। অনেক সময়েই পাকিস্তানের কৃষকেরা ভারতীয় জমিতে এসে ফসল কেটে নিয়ে যান। তাই ভারতীয় কৃষকদের রক্ষায় বিএসএফ জওয়ানদের মোতায়েন করা হয়।

এ ছাড়া, ওই সীমান্ত মাদক চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য। অর্থের বিনিময়ে মাদকের প্যাকেট বিনিময় হয় সেখানে। তা রুখতেও বিএসএফ জওয়ানদের মোতায়েন করা হয়। যাদের ‘কিসান গার্ড’ বলা হয়ে থাকে। বুধবার নজরদারি চালাতে গিয়ে পাকিস্তানের অংশে ভুল করে ঢুকে যান পূর্ণম। প্রবল গরমে ক্লান্ত পূর্ণম যখন একটি গাছের তলায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, সে সময়ে পাকিস্তানের রেঞ্জার্স বাহিনীর জওয়ানেরা তাঁকে বন্দি করেন।

তবে দেরিতে হলেও পূর্ণমকে পাকিস্তান ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে বলেই দাবি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের। কারণ, পূর্ণম শান্তিকালীন সময়ে আটক হয়েছেন। তা ছাড়া ইতিমধ্যেই আটক পূর্ণমের ছবি প্রকাশ করে পাকিস্তান রেঞ্জার্স পরোক্ষে দাবি করেছে যে ওই জওয়ান তাদের কাছেই রয়েছেন। ফলে তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব এখন পাকিস্তান রেঞ্জার্সের। ছবি প্রকাশ হওয়ায় ভবিষ্যতে ওই জওয়ান তাদের কাছে নেই এমন দাবি করাও কঠিন হবে রেঞ্জার্সের পক্ষে। তাই বিএসএফের মতে, আগামী দিনে পূর্ণমকে ছাড়তে বাধ্য হবে পাকিস্তান। একটাই আশঙ্কা, যুদ্ধের আবহে পূর্ণমকে ভারতের চর হিসাবে প্রতিপন্ন করে গ্রেফতার করা হলে মুক্তি পাওয়া দীর্ঘায়িত হতে পারে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Border Security Force

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy