Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Budget 2021

‘সাজানো সংখ্যায়’ ঠাসা বাজেট, শঙ্কা কংগ্রেসের

মন্ত্রকের দাবি, অতিমারি আর লকডাউনের জেরে অর্থনীতি যত দ্রুত গতিতে নীচের দিকে দৌড়েছে, সেই গতিতেই হাল ফিরবে তার।

বিরোধীদের আশঙ্কা, সোমবার বাজেট পেশের সময়ে চলতি অর্থবর্ষের জন্য রাজকোষের ‘সাজানো’ হাল তুলে ধরবেন নির্মলা।

বিরোধীদের আশঙ্কা, সোমবার বাজেট পেশের সময়ে চলতি অর্থবর্ষের জন্য রাজকোষের ‘সাজানো’ হাল তুলে ধরবেন নির্মলা। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:৪০
Share: Save:

বহু আগে থেকেই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করে রেখেছেন যে, এ বার ১ ফেব্রুয়ারি ‘অভূতপূর্ব’ বাজেট পেশ করবেন তিনি। সেই ‘তাক লাগানো’ বাজেট কেমন হতে পারে, তার কিছুটা ইঙ্গিত মিলতে পারে শুক্রবার। কেন্দ্রের পেশ করা আর্থিক সমীক্ষায়। কিন্তু তার চব্বিশ ঘণ্টা আগে, বৃহস্পতিবার প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের গলায় আশঙ্কা, সোমবার বাজেট পেশের সময়ে চলতি অর্থবর্ষের জন্য রাজকোষের ‘সাজানো’ হাল তুলে ধরবেন নির্মলা। আগামী আর্থিক বছরের জন্যও তোলা থাকবে ‘জাদুকরের ভেলকি’। পরিসংখ্যানের কারিকুরিতে চেষ্টা হবে অর্থনীতির চোখ ধাঁধানো ছবি তুলে ধরার।

চিদম্বরমের কথায়, ‘‘আমাদের ভয়, অর্থমন্ত্রী ২০২০-২১ সালের জন্য ‘সাজানো’ সংশোধিত হিসেব পেশ করবেন। আকর্ষণীয় গল্প শোনাবেন ২০২১-২২ সালের জন্য। তা করতে গিয়ে বাজেটের সংশোধিত হিসেবে কিছু ভুল সংখ্যা তুলে ধরা হবে। আর পরের বছরের বাজেটের পরিসংখ্যান হবে জাদুকরের ভেলকি।’’ আর্থিক বিশেষজ্ঞদের একাংশও বার বার মনে করিয়েছেন, এ বার অর্থনীতির দুর্দশার যাবতীয় দায় চাপিয়ে দেওয়া হবে কোভিডের ঘাড়ে। আর চলতি বছরে জিডিপি সঙ্কুচিত হওয়ার পরে আগামী বার সামান্য মুখ তুললেই, ঝকঝকে দেখাবে বৃদ্ধির হারের পরিসংখ্যান।

গত ফেব্রুয়ারিতে নির্মলা যখন বাজেট পেশ করেছিলেন, তখনও দেশে করোনার ধাক্কা লাগেনি। তারপরে লকডাউনে আর্থিক কর্মকাণ্ড প্রায় পুরো বন্ধ থাকায় এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে জিডিপি সঙ্কুচিত হয় প্রায় ২৪%। সেই সূত্রে চিদম্বরমের দাবি, ‘‘গত বাজেটের কোনও সংখ্যা মিলবে না। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছোঁয়া যাবে না। পরিকাঠামোয় লগ্নি ধাক্কা খাবে। রাজস্ব আর রাজকোষ ঘাটতি গিয়ে ঠেকবে যথাক্রমে ৫ ও ৭ শতাংশে।’’

শুক্রবার অর্থ মন্ত্রক সংসদে আর্থিক সমীক্ষা পেশ করবে। সেখানে বলা হবে, আগামী অর্থবর্ষে (২০২১-২২) বৃদ্ধির কেমন হার আশা করছে মোদী সরকার। তুলে ধরা হবে চলতি বছরের পূর্বাভাসও। পরিসংখ্যান মন্ত্রকের প্রাথমিক অনুমান ছিল, এ বছর জিডিপির বহর বৃদ্ধি তো হবেই না। বরং উল্টে তা কমবে ৭.৭%। শেষমেশ অতিমারি ভারতীয় অর্থনীতির কতখানি ক্ষতি করেছে, তার দরুন চলতি অর্থবর্ষে শূন্যের কত নীচে থাকতে পারে বৃদ্ধির হার, সেই ছবি উঠে আসবে আর্থিক সমীক্ষায়।

মন্ত্রকের দাবি, অতিমারি আর লকডাউনের জেরে অর্থনীতি যত দ্রুত গতিতে নীচের দিকে দৌড়েছে, সেই গতিতেই হাল ফিরবে তার। অর্থাৎ, অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন হবে ইংরেজির ‘ভি’ (V) অক্ষরের মতো। কিন্তু প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর দাবি, হাল ফিরতে অনেক সময় লাগবে। সেই ছবিও হবে ইংরেজির ‘কে’ (K) অক্ষরের মতো। কারণ, মন্দার পরে অর্থনীতির কিছু ক্ষেত্রের উন্নতি হবে। কিন্তু সিংহ ভাগ ক্ষেত্র সেই পিছিয়েই থাকবে। আরও বাড়বে অসাম্য।

চিদম্বরমের মতে, এ জন্য করোনার থেকেও বেশি দায়ী মোদী সরকারের ব্যর্থতা। তাঁর কথায়, ‘‘অতিমারির আগেই অর্থনীতির গতি শ্লথ হতে শুরু করেছিল। অর্থনীতি পরিচালনায় ব্যর্থতা, অতিমারি মোকাবিলায় ঠিক দাওয়াইয়ের অভাবে অসাম্য বেড়েছে। উপদেষ্টা সংস্থা অক্সফ্যামের রিপোর্ট বলেছে, বহু মানুষের কাজ গিয়েছে, আয় কমেছে। সেখানে করোনা-কালেও বহু গুণ সম্পদ বেড়েছে জনা কয়েক ধনকুবেরের। ব্রুকিংসের সমীক্ষা অনুযায়ী, এ দেশে দারিদ্র সব থেকে বেশি বাড়বে। নাইজেরিয়াকেও ছাপিয়ে যাবে ভারত।’’

অর্থনীতির বিষয়ে কংগ্রেসের অবস্থান ঠিক করতে মনমোহন সিংহ, চিদম্বরম, জয়রাম রমেশ, মল্লিকার্জুন খড়্গের মতো নেতাদের নিয়ে সনিয়া গাঁধী একটি কমিটি তৈরি করেছিলেন। সেখানে আলোচনার পরে কংগ্রেসের সুপারিশ, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সরকার অনেক বেশি টাকা ঢালুক। দরিদ্রতম ২০-৩০ শতাংশ মানুষকে অর্থ সাহায্য করা হোক। কারণ, সাধারণ মানুষের হাতে টাকা এলে, তবে বাজারে চাহিদা বাড়বে। সেই সঙ্গে, ছোট-মাঝারি শিল্পকে চাঙ্গা করার চেষ্টা হোক। কমুক করের বোঝা। টেলি-যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, খনি, নির্মাণ, বিমান, পর্যটনের মতো শিল্পের জন্য বিশেষ প্যাকেজ তৈরিও পরামর্শ দিয়েছে ওই কমিটি। যার মধ্যে অনেকগুলিই কোভিড আর লকডাউনের ধাক্কায় বিপর্যস্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nirmala Sitharaman Budget 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE