পাহাড়ি জঙ্গলে তোলা ছবিটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল হিজবুল মুজাহিদিন কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পরেই। বুরহানের পাশেই পুরোদস্তুর যুদ্ধের পোশাকে দাঁড়িয়ে সে। কালো টি-শার্ট, জংলা ছাপ ট্রাউজার্স। কেতাদুরস্ত এলবো-গার্ড পরা হাতে একে-৪৭ রাইফেল।
নাম— সবজার আহমেদ বাট। শুক্রবার কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে রাতভর সংঘর্ষে মারা গিয়েছে সে। বুরহানের পরে হিজবুলে তার জায়গা নিয়েছিল ঘনিষ্ঠ সহচর সবজার। আজ তার মৃত্যুর খবর ছড়াতেই উপত্যকার নানা অংশে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বাহিনীর সঙ্গে জনতার সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন এক জন।
সেনার দাবি, বুরহান ও সবজারের মতো দু’জন শীর্ষ কম্যান্ডারের মৃত্যুতে কিছুটা নড়বড়ে হয়ে পড়ল হিজবুল। এ বার সংগঠন বাড়ানোর মতো নেতা বাছাইয়ে সমস্যায় পড়তে পারে তারা। সংঘর্ষে বুরহানের মৃত্যুর পর থেকে উপত্যকায় অশান্তির জেরে কিছু দিন জঙ্গি-দমন অভিযান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিল সেনা। সম্প্রতি ফের তা শুরু হয়েছে। ক’দিন আগেই অল্পের জন্য সেনার হাত এড়িয়ে সম্ভবত পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে পালিয়েছে লস্কর নেতা জাকির মুসা।
গত রাতে ত্রালের সাইমো গ্রামে সবজার-সহ তিন জঙ্গির লুকিয়ে থাকার খবর পায় সেনা। রাত সওয়া আটটা নাগাদ জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই শুরু হয় সেনা-পুলিশ যৌথ বাহিনীর। আসে প্যারা কম্যান্ডোও। প্রায় ১২ ঘণ্টা পরে খতম হয় সবজার ও তার সঙ্গী ফয়জান মহম্মদ বাট। তৃতীয় জঙ্গির খোঁজ চলছে।
আরও পড়ুন:সবজারের ‘ডন’ হওয়ার পিছনে কারণ কি ব্যর্থ প্রেম?
ইতিমধ্যে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংবাদ সংস্থা প্রচার চালাচ্ছে, সবজার ও তার সঙ্গীকে গ্রেফতারের পরে ঠান্ডা মাথায় খুন করেছে ভারতীয় বাহিনী। সেই দাবি তুলে ধরেছে একটি পাকিস্তানি চ্যানেলও। সবজারের মৃত্যুর খবর ছড়াতেই আজ উপত্যকার অন্তত ৭০টি এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ত্রালে বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন মৌলবি আকিব আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। অন্তত ৫০টি এলাকায় শুরু হয়েছে হরতাল। প্রশাসনের একাংশের আশঙ্কা, আরও বাড়তে পারে অশান্তি। বাড়তে পারে জঙ্গি দলে নাম লেখানোর হুজুগ। সিআরপি-র আইজি (অপারেশনস) জুলফিকার হাসান অবশ্য বলেন, ‘‘বুরহানের মতো জনপ্রিয় নেতা ছিল না সবজার। তবে আমরা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি।’’
দীর্ঘ এক মাস পরে পরে আজই কাশ্মীরে ২২টি সোশ্যাল সাইট ও মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারের উপরে নিষেধাজ্ঞা উঠেছিল। কিন্তু অশান্তি শুরু হওয়ায় এ দিনই স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট।
২০১৫ সালে সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে বুরহানের ভাই খালিদ মুজফ্ফরের মৃত্যুর পরেই হিজবুলে যোগ দিয়েছিল সবজার। বুরহানের মতো সোশ্যাল সাইট ব্যবহার না করে মূলত আড়ালে থেকে যুবকদের দলে টানার চেষ্টা চালাত সে। কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের প্রকৃতি নিয়ে হুরিয়তের সঙ্গে সম্প্রতি মতবিরোধ হয়েছিল জাকির মুসার। সবজার সেই বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করেছিল বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর। ১৯ ও ২০ মে সেই কারণেই শ্রীনগরে এসেছিল সে। তখনই তার গতিবিধি সম্পর্কে আরও নির্দিষ্ট তথ্য পান গোয়েন্দারা।