E-Paper

বিদেশে ‘ঘরের মেয়ে’, গানে গানে লড়ছেন মেরি

২০২২ সাল। মায়ানমারের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ শুরু হল। ততদিনে সে দেশের উজ্জ্বল তারকা হয়ে উঠেছিলেন মেরি। কিন্তু প্রাণ বাঁচাতে আরও হাজার হাজার বর্মি নাগরিকের মতো, তাঁকেও পালিয়ে আশ্রয় নিতে হয় মিজ়োরামে।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:০৮
মেরি ডাওঙ্গি।

মেরি ডাওঙ্গি। —ফাইল চিত্র।

তাঁর গানে দেড় কোটি ভিউ। ক্রমাগত ডাক আসছে দেশ-বিদেশ থেকে। পাচ্ছেন পুরস্কার। কিন্তু সেই সব কিছুর পরেও, নেহাতই ‘শরণার্থী গায়িকা’র লেবেল সাঁটা তাঁর গায়ে! বাস্তুহারা শিল্পী তিনি। পরিবারও বিচ্ছিন্ন হয়েছে যুদ্ধের অভিঘাতে। গানই এখন তাঁর বেঁচে থাকা। তাই, বেঁচে থাকার গান গেয়েই বিদেশের মাটিতে লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে বর্মি গায়িকা মেরি ডাওঙ্গিকে।

২০২২ সাল। মায়ানমারের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ শুরু হল। ততদিনে সে দেশের উজ্জ্বল তারকা হয়ে উঠেছিলেন মেরি। কিন্তু প্রাণ বাঁচাতে আরও হাজার হাজার বর্মি নাগরিকের মতো, তাঁকেও পালিয়ে আশ্রয় নিতে হয় মিজ়োরামে। কালেমিও শহরের নিজের বাড়ি ছেড়ে আসা গৃহহীনা তারকার স্থান হয় আশ্রয় শিবিরে। কিন্তু গানের প্রতি ভালবাসা ম্লান হতে দেননি তিনি। সুবিধা হল, মিজ়োরাম ও মায়ানমারের ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, পছন্দ, সংস্কৃতি সবই মিলেমিশে যায়। মেরির জনপ্রিয়তার কথা এ পারেও অজানা ছিল না।

রাজধানী শহর আইজ়লে এসে মেরি মিজ়ো গায়ক সাইওয়ান্নাহর সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা একসঙ্গে সুর দিয়ে রেকর্ড করেন ‘দ্য মিলার অব দ্য ডি’ কবিতার মিজ়ো সংস্করণ ‘কা পা খুমা’। ইউটিউবে ১.৫ কোটি ভিউ অতিক্রম করে সেই গান! মিজ়োরামে বাড়তে থাকে মেরির জনপ্রিয়তা। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি একাধিক মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার জেতেন, যার মধ্যে ‘লেটার অ্যাওয়ার্ড’স-এ সেরা নতুন শিল্পী এবং বর্ষসেরা গানের পুরস্কারও রয়েছে। মেরি এখন শুধু মিজ়োরাম বা ভারতের নানা রাজ্যই নয়, ওয়াশিংটন, লন্ডন ও সিডনি থেকেও সঙ্গীত পরিবেশনের আমন্ত্রণ পাচ্ছেন।

কিন্তু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া সত্ত্বেও ভিসা সমস্যার কারণে তিনি বিদেশে গান গাওয়ার সুযোগ হারিয়েছেন। খাতায়-কলমে এখনও তিনি এক ‘শরণার্থী’। সামাজিক মাধ্যমেও তাই মেরি নিজেকে ‘শরণার্থী শিল্পী’ হিসেবেই ব্যাখ্যা করেন। তিনি জানেন, বাস্তুহারা হওয়ার গ্লানি। কিন্তু এ-ও জানেন, মায়ানমারে ফিরলে প্রতিরোধ বাহিনীতে তাঁকে বলপূর্বক নিয়োগ করা হতে পারে, অথবা হামলা করতে পারে সেনা। বিদেশের মাটিতে বসেও মেরিই এখন তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তাই মাতৃভূমির প্রতি দায়িত্ব আর ভিন্‌ দেশে তৈরি হওয়া কর্মভূমির প্রতি টান— এই দুইয়ের মধ্যে দুলছেন মেরি।

অবশ্য মিজ়োরামে এখন তিনি ঘরের মেয়ে হয়ে উঠেছেন। তাঁর কণ্ঠ এখন মিজোরামের সঙ্গীতক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। মেরি বলেন, “সঙ্গীতই বিভেদের মধ্যে সেতুবন্ধন করার উপায়। প্রতিকূলতার মুখে আশা জাগানোর শক্তি। জানি না স্বদেশে কবে সব ঠিক হবে। তত দিন মিজ়োদের ভালবাসাই আমার মধ্যে গানকে বাঁচিয়ে রাখবে, আর আমিও অন্নসংস্থান করে বাঁচিয়ে রাখতে পারব আমার পরিবারকে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Myanmar Singer

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy