দেশে-দেশে জঙ্গিহানার পরিপ্রেক্ষিতে শিলচর গোলদীঘি মলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে ব্যবসায়ীরা। চিন্তায় শহরবাসী।
পুরসভা পরিচালিত এই মলে সাতটি প্রবেশপথ। ব্যবসায়ীরা জানান, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন মাত্র ১৫-২০ জন বেসরকারি রক্ষী। চার তলা মলটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কাজ করেন তাঁরা। নেই কোনও নিরাপত্তা সামগ্রী। কিছু জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হলেও কোনও কন্ট্রোল রুম নেই। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, মলের ভিতরের নিরাপত্তা মজবুত করতে পুরসভাকে বলা হয়েছে। বাইরের দিকটা তাঁরা দেখছেন। শিলচরের প্রাণকেন্দ্রে থাকা গোলদীঘি মলের নিরাপত্তা নিয়ে অনেক দিন থেকেই ব্যবসায়ীরা অসন্তোষ প্রকাশ করছিলেন। এরই মধ্যে নানা জায়গায় সন্ত্রাসবাদী হানার ঘটনা ঘটছে। মলগুলিও লক্ষ্যস্থল হচ্ছে। তাতে তাঁদের উদ্বেগ বাড়ছে। বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে জেএমবি ক্যাডাররা ভারতে ঢুকতে চাইছে, এমন কথা কয়েক দিন পরপর বাজারে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে চিন্তার মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
গোলদীঘি মল মার্চেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রামানুজ গুপ্ত জানিয়েছেন, এই বিষয়ে দুই দফায় পুরসভাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সাড়া মেলেনি। শুক্রবার তাঁরা দেখা করেন পুলিশ সুপার রজবীর সিংহের সঙ্গে। তিনি জঙ্গিহানা নিয়ে আতঙ্কে না ভুগতে তাঁদের পরামর্শ দিয়েছেন। তবে নানা কারণে যে মলে পূর্ণ নিরাপত্তার প্রয়োজন, তা গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জগদীশ দাস মলে গিয়ে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। সে দিন তিনি ১৭ জন বেসরকারি রক্ষীর সঙ্গে কথাও বলেন। প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন।
পুলিশ সুপার রজবীর সিংহ পুরসভার সভাপতি নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুরকে চিঠি পাঠিয়ে মলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আরও বেশি মজবুত করতে অনুরোধ করেন। বেসরকারি নিরাপত্তা এজেন্সির কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং মেটাল ডিটেক্টর-সহ বিভিন্ন সামগ্রীর ব্যবহার নিশ্চিত করতেও পুরপ্রধানকে বলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ক্রেতাদের ঢোকা-বেরনো দুই পথেই তল্লাশি প্রয়োজন। কেউ ব্যাগ নিয়ে গেলে তাও তন্নতন্ন করে দেখা দরকার।’’ সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো মলের বিভিন্ন জায়গায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসাতে এবং সে গুলির জন্য একটি কন্ট্রোল ইউনিট রাখারও পরামর্শ দেন পুলিশ সুপার। তিনি সদর থানার ওসিকেও গোলদীঘি মলের দিকে বাড়তি নজর রাখতে নির্দেশ দেন।
এ দিকে গোলদীঘি মল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সচিব, বিজেপি পুরসদস্য রাজেশ দাস জানান, পুলিশ সুপারের চিঠি এখনও পুরসভায় পৌঁছয়নি। তবে তিনি বিষয়বস্ত জেনে গিয়েছেন। সেইমতো প্রবেশপথে ওয়াকিং মেটাল ডিটেক্টর বসানো হবে। সে জন্য সমস্ত খোঁজখবর করছেন।
তিনি জানান, দেশ-বিদেশের ঘটনায় ব্যবসায়ীদের মতো তাঁরাও কম চিন্তিত নন। তাই জগদীশবাবু নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে মলে গেলে তিনি সারাক্ষণ সঙ্গে ছিলেন। নিজেও পুলিশকর্তার পরামর্শ শোনেন। তাঁর দাবি, বেসরকারি নিরাপত্তা এজেন্সিকে তাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
তবে মলে ৭টি গেট থাকার বিষয়টি তিনি বড় সমস্যা বলে মনে করেন। ব্যবসায়ীদের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলেন, ‘‘তাঁরা কোনও গেট বন্ধ করতে দেবেন না। তাতে নাকি ব্যবসায় লোকসান হয়।’’ রাজেশবাবুর দাবি, তবু নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চেষ্টা চলছে। পুলিশকেও বলা হয়েছে প্রতি দিন এক বার টহল দেওয়ার জন্য। দুর্যোগ মোকাবিলা শাখাকেও মাঝেমধ্যে ঘুরে যেতে অনুরোধ করেছেন তাঁরা।
ব্যবসায়ীদের মন্তব্য, ‘‘সবই চলছে। কিন্তু দায়সারা গোছের। নিরাপত্তা রক্ষীরা শুধুই যেন গেটম্যান।’’ তাঁদের কথায়, ‘‘আগে প্রয়োজন প্রতি তলায় জায়গায় জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগানো। এর চেয়ে জরুরি, সে গুলির মনিটরিং করা।’’ পুরসভার মলে দেখা যায়, কোনও বিশেষ মুহূর্তের ফুটেজ খুঁজলেও মেলে না। তাঁরা প্রত্যেকের ব্যাগ তল্লাশিতেও জোর দেন।
পুলিশ সুপার রজবীর সিংহ আজ বলেন, ‘‘পুলিশের সামগ্রিক নিরাপত্তা পর্যালোচনায় এনআইটি, মেডিক্যাল কলেজ, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গোলদীঘি মলও রয়েছে। উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান তিনটিকেও পৃথক চিঠি দিয়ে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।’’ তাই বলে মোটেও উতকণ্ঠার মতো ব্যাপার নয়। তাঁরা এই অঞ্চলে জঙ্গিহানার আশঙ্কা করছেন না বলেই জানান রজবীরবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘আগুন লাগা বা পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনাতেও প্রশিক্ষিত রক্ষীর প্রয়োজন।’’ মল-সহ এই ধরনের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের বাইরের নিরাপত্তা যথার্থই রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy