Advertisement
E-Paper

ধর্মীয় আবেগও ব্যর্থ, টাকা পড়ে নমামি গঙ্গের

ঢাকঢোল পিটিয়ে শুরু হয় ‘নমামি গঙ্গে’। গঙ্গাকে দূষণ মুক্ত করার এই প্রকল্পের প্রচারে ছত্রে ছত্রে বলা হয় দেশের আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে এই নদীর সম্পর্কের কথা।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৪
কানপুরের চর্মশিল্প থেকে গঙ্গা দূষণের এমনই ছবি তুলে ধরা হয়েছে সিএজি-র রিপোর্টে।

কানপুরের চর্মশিল্প থেকে গঙ্গা দূষণের এমনই ছবি তুলে ধরা হয়েছে সিএজি-র রিপোর্টে।

কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই গঙ্গা নিয়ে অনেক পরিকল্পনার কথা বলে এসেছে বিজেপি। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়েই জলসম্পদ মন্ত্রকের নামে জুড়ে দেন ‘গঙ্গা পুনরুজ্জীবন’ শব্দবন্ধটি। দায়িত্ব দেন সাধ্বী-নেত্রী উমা ভারতীকে। ঢাকঢোল পিটিয়ে শুরু হয় ‘নমামি গঙ্গে’। গঙ্গাকে দূষণ মুক্ত করার এই প্রকল্পের প্রচারে ছত্রে ছত্রে বলা হয় দেশের আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে এই নদীর সম্পর্কের কথা। নামেও স্পষ্ট, প্রকল্পটিকে সফল করতে ধর্মীয় ভাবাবেগকেই হাতিয়ার করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঞ্জুর করেছিলেন ২০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু তিন বছর পরে দেখা গেল, কাজ হয়নি ধর্মীয় আবেগে। সিএজি চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল, ব্যাঙ্কে পড়ে রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকেই দায়ী করল তারা।

ঠিক হয়েছিল, রাজ্যে রাজ্যে গঙ্গার ধারে নির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিত হবে। ভূগর্ভস্থ জলের মাত্রা ধরে রেখে গঙ্গাকে বাঁচানো এবং একে দুষণমুক্ত রাখার জন্য ওই সব এলাকায় কোনও নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হবে না। তিন বছর কেটে গেলেও পশ্চিমবঙ্গ-সহ চার রাজ্যে সেই ‘নদী সংরক্ষণ ক্ষেত্র (রিভার কনজার্ভেশন জোন)’ চিহ্নিত করারই কাজ হয়নি।

আরও ঠিক হয়েছিল, গঙ্গায় যাতে সরাসরি কঠিন বর্জ্য ও নিকাশি নালার জল এসে না পড়ে, তার জন্য নদীর ধারের জেলাগুলিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ যে পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে দিয়ে গঙ্গা বইছে, তার কোনও জেলাতেই এই কাজ হয়নি। উত্তরাখণ্ড ছাড়া আর কোনও রাজ্যই গঙ্গা-তিরের ১০০ শতাংশ বাড়িতে শৌচালয় তৈরির লক্ষ্য ছুঁতে পারেনি। জায়গার অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই নিকাশি নালা বা খালের জল পরিশোধন প্রকল্প তৈরি হয়নি।

রাজ্যগুলির গাফিলতি থাকলেও এ জন্য সার্বিক ভাবে মোদী সরকারকেই দায়ী করেছে সিএজি। কেন্দ্রের পক্ষেও রাজ্যগুলির দিকে আঙুল তোলা মুশকিল। কারণ পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া বাকি চার রাজ্য— উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ডে এখন বিজেপিই সরকারে।

কেন্দ্রীয় জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সত্যপাল সিংহ বলছেন, তিনি সদ্য দায়িত্ব নিয়েছেন। তা-ই তাঁকে দোষ দেওয়া ঠিক নয়। তাতে প্রশ্ন ওঠে, ২০১৪ ১৬ মে থেকে ২০১৭-র ৩ সেপ্টেম্বর— প্রায় সাড়ে তিন বছর এই মন্ত্রকের দায়িত্বে থেকে উমা ভারতী তবে কী করেছেন? সত্যপাল অবশ্য চাপানউতোর এড়িয়ে সামনে রাখছেন বিকল্প পথের কথা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দূষণ বন্ধ করতে হলে সাধারণ মানুষকেও গঙ্গায় চিতাভস্ম ভাসানোর মতো বিশ্বাস ছাড়তে হবে। বরং তা মাটিতে পুঁতে সেখানে গাছ লাগানো হোক।’’

কিন্তু চিতাভস্মই কী মূল সমস্যা!

সিএজি রিপোর্ট কিন্তু বলছে অন্য কথা। বর্জ্য-নিকাশি শোধন, সব বাড়িতে শৌচালয়, সচেতনতা তৈরিতে পাঁচটি রাজ্যকে প্রায় ৯৫১ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। ব্যয় হয়েছে মাত্র ৪৯০ কোটি টাকা। দূষণে রাশ না টানার ফল, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, বিহারের ছ’টি শহরে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা কমেছে। সব শহরেই কলিফর্মের
হার মাত্রাতিরিক্ত বেশি। যা জলে বিভিন্ন রোগজীবাণুর উপস্থিতির স্পষ্ট ইঙ্গিত।গঙ্গায় ময়লা ফেলছে বলে পশ্চিমবঙ্গের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ যে সব নিকাশি নালাকে চিহ্নিত করেছে, তার বাইরে আরও ৬৫টি নালাকে চিহ্নিত করেছেন সিএজি-কর্তারা। ভাটপাড়া, বজবজ, হুগলি-চুঁচুড়া, চন্দননগর, মহেশতলা, ব্যারাকপুর, কৃষ্ণনগর, বৈদ্যবাটি, নবদ্বীপ, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ, ভদ্রেশ্বর পুরসভা এলাকায় এই নালাগুলির রয়েছে। জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ, হুগলি-চুঁচুড়া, বৈদ্যবাটিতে গঙ্গার পাড়েই শহরের আবর্জনা জমা হচ্ছে। ভাটপাড়ার ২৬টি কারখানার বর্জ্য তেল গঙ্গায় পড়ছে। হলদিয়াতেও জেটির কাছে জলে তেলের পুরু স্তর মিলেছে। বেলেঘাটা সার্কুলার ক্যানালে জলের ধারা স্তব্ধ। খালের জমি দখল করে বস্তি, গ্যারাজ, দোকান তৈরি হয়েছে। এ সব রুখতে রাজ্য স্তরে গঙ্গা কমিটি তৈরিই হয়নি।

ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা-র কর্তারা সিএজি-কে জবাব দিয়েছেন, ২০১৬-র শেষ থেকে ২০১৭-তে তারা ১১৮টি শহরে নিকাশি নালার জল শোধন প্রকল্পে ছাড়পত্র দিয়েছেন। এ বছরের মে থেকে অগস্টে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু কাজ যে দেরিতে চলছে, সেটি মানছেন তাঁরাও।

পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশ দফতরের কর্তারাও মানছেন, কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনার তরল বর্জ্য ফেলার বহু খাল বা নিকাশি নালা কোনও রকম পরিশোধন না হয়ে সরাসরি গঙ্গায় পড়ে জলকে বিষিয়ে তুলছে। বালিখালের অশোধিত জল গঙ্গায় মেশার ফলে দক্ষিণেশ্বরের জলে দূষণের মাত্রা সব থেকে বেশি। কিন্তু ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি করা যাচ্ছে না জায়গার অভাবে।

CAG Ganga Pollution কানপুর Kanpur গঙ্গা দূষণ Ganga Clean Project
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy