উর্জিত পটেল
দু’দিন আগে অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সামনে বিরোধীদের জেরার মুখে পড়েছিলেন তিনি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেল সে দিন কিছুটা অস্বস্তি এড়াতে পেরেছিলেন মনমোহন সিংহের জন্য। সতীর্থদের কার্যত থামিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা প্রাক্তন আরবিআই গভর্নর মনমোহন বলেছিলেন, ব্যাঙ্কের উপরে মানুষের আস্থা চলে যায়, এমন কোনও মন্তব্য কেউ যেন না করেন।
আজ সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি)-র সামনে হাজির হতে হল উর্জিতকে। মনমোহন ছিলেন না সেখানে। কিন্তু আরবিআই গভর্নরকে বিরোধী প্রশ্নবাণ থেকে আড়াল করতে দল বেঁধে চলে এলেন বিজেপি সাংসদেরা। কমিটিতে বিরোধী দলের সাংসদদের সঙ্গে রীতিমতো বচসায় জড়িয়ে পড়লেন তাঁরা। যা দেখে দিনের শেষে পুরনো প্রশ্নটাই উঠেছে। তা হল, রাজনৈতিক দল কেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের রক্ষাকবচ হবে? কেন তাকে ঘিরে চলবে শাসক-বিরোধী তরজা?
কমিটির সামনে উর্জিত আজ কবুল করেছেন যে, নোট বাতিলের জেরে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। তবে এ-ও বলেছেন, দ্রুত পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে। কিন্তু কবে? এর সদুত্তর কিন্তু দেননি আরবিআই গভর্নর। বস্তুত অর্থ মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির সামনেও উর্জিত বলেছিলেন যে, সমস্যা কবে মিটবে তাঁর জানা নেই। গভর্নর অবশ্য আজ দাবি করেন, শহর এলাকায় নতুন নোটের জোগান এখন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। গ্রামেও তা স্বাভাবিক হবে আরও কয়েক সপ্তাহে। অনলাইনে লেনদেন খরচ কমানোর আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। ই-ওয়ালেটের প্রচার আরও ছ’মাস আগে শুরু হলে ভাল হতো বলেও মন্তব্য করেছেন।
যদিও স্থায়ী কমিটির বৈঠকের মতো আজও অনেক প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন উর্জিত। তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায়, বিজেডির ভত্রুহরি মেহতাব, মায় শিবসেনার গজানন কীর্তিকারের মতো সাংসদেরা আজ চেপে ধরেছিলেন আরবিআই গভর্নরকে। সমাজবাদী পার্টির সাংসদ নরেশ অগ্রবাল ৫০০ ও ২০০০ টাকার জাল নোট উর্জিতকে দিয়ে বলেন, ‘‘আপনার স্বাক্ষর-সহ এই নোট কোথা থেকে পাওয়া যাচ্ছে?’’ পেটিএম আরও ছ’মাস আগে শুরু করার প্রশ্নে সুখেন্দুশেখর বলেন, ‘‘তা হলে তো চিনা সংস্থারই আরও সুবিধা হতো!’’
এই সব বিতর্কিত প্রশ্নের জবাবই উর্জিত আজ সুকৌশলে এড়িয়ে যান। আর শাসক দলের সাংসদেরা তো সরব ছিলেনই। ব্যাঙ্কে কত টাকা এসেছে, ভেঙে বলেননি উর্জিত। কেন নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, সেই প্রশ্নটিও সরকারের কোর্টে ঠেলেছেন। নোট বাতিলের ফলে স্বল্পমেয়াদে নগদে চলা ক্ষেত্রগুলিতে যে ভোগান্তি হবে তা কবুল করেও বলেছেন, নগদের জোগান যত বাড়বে, তত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে এর আগে বলা হয়েছিল, গত ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের ঘোষণার এক দিন আগে সরকার তাদের সেই সিদ্ধান্তের কথা জানায়। তার ভিত্তিতেই শীর্ষ ব্যাঙ্কের বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও এই কথা জানার পরে বিরোধীরা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিল। আজও এই নিয়ে জেরার মুখে পড়তে হয়েছে উর্জিতকে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে সরকারকে জানানো হয়েছে, গত ৮ নভেম্বর বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বোর্ডের বৈঠক বসেছিল। সেখানে আট জন উপস্থিত ছিলেন। সিদ্ধান্ত হয়ে যাওয়ার পর ব্যাঙ্কগুলিকে তা জানাতে মুম্বইয়ে রয়ে যান ডেপুটি গভর্নর এন এস বিশ্বনাথন। এক জন নির্দেশক বিদেশে ছিলেন। বোর্ডের বৈঠকে নোট বাতিল নিয়ে ঐকমত্য হয়েছিল বলেই শীর্ষ ব্যাঙ্কের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy