Advertisement
E-Paper

পিটার মুখোপাধ্যায় গ্রেফতার, খুনের চক্রান্তে যুক্ত, সন্দেহ সিবিআইয়ের

দিনটা ছিল ২৬ অগস্ট। গোটা দেশ সে দিন জেনেছে, মেয়েকে বোন সাজানো আর শেষ পর্যন্ত মেয়েকে খুন করার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া এক মায়ের কথা। তিনি, সেই মায়ের স্বামী, বলেছিলেন, ‘‘অপরাধ যে এই মাত্রায় যেতে পারে, সেটা দেখে আমি হতবাক!’’

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৫
পিটার মুখোপাধ্যায়ের ফাইল চিত্র।

পিটার মুখোপাধ্যায়ের ফাইল চিত্র।

দিনটা ছিল ২৬ অগস্ট। গোটা দেশ সে দিন জেনেছে, মেয়েকে বোন সাজানো আর শেষ পর্যন্ত মেয়েকে খুন করার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া এক মায়ের কথা। তিনি, সেই মায়ের স্বামী, বলেছিলেন, ‘‘অপরাধ যে

এই মাত্রায় যেতে পারে, সেটা দেখে আমি হতবাক!’’

তিন মাসও কাটল না। সেই ‘অপরাধে’র মামলাতেই গ্রেফতার হয়ে গেলেন নিজে! শিনা বরা

হত্যা মামলায় স্টার ইন্ডিয়ার প্রাক্তন সিইও পিটার মুখোপাধ্যায়কে বৃহস্পতিবার সন্ধেবেলায় মুম্বইয়ে গ্রেফতার করল সিবিআই।

প্রাথমিক ভাবে পিটারের বিরুদ্ধে খুনের ষড়যন্ত্র, তথ্যপ্রমাণ লোপাট, তদন্তে অসহযোগিতা এবং তথ্য গোপন করার অভিযোগ রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। শিনা খুনের সঙ্গে তিনি নিজে পরোক্ষ ভাবে জড়িত বলেও গোয়েন্দাদের সন্দেহ। যে কারণে এ দিন পিটারকে ৩০২ (খুন) এবং ১২০ খ ধারায় (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) গ্রেফতার করা হয়েছে। সিবিআই অধিকর্তা অনিল সিন্হা একটি চ্যানেলকে জানান, ‘‘পিটার অনেক প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন। অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনও দেননি। তাই তাঁকে হেফাজতে নেওয়াটা জরুরি।’’

আকস্মিক এবং নাটকীয়! পিটারের গ্রেফতারির খবরে এ দিন এই দু’টো বিশেষণই সবচেয়ে বেশি শোনা গিয়েছে। শিনা বরা মামলা সিবিআইয়ের হাতে যাওয়ার পর থেকে তদন্ত প্রক্রিয়া অনেকাংশে সংবাদমাধ্যমের চোখের আড়ালে চলে গিয়েছিল। মুম্বইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাকেশ মারিয়া যে ভাবে রোজ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতেন, সিবিআই তা করেনি। কার্যত গত দু’মাসে শিনা মামলার তেমন কোনও অগ্রগতির কথা জানাই যায়নি। ইন্দ্রাণী অসুস্থ হয়ে দু’দু’বার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ছা়ড়া শিনা মামলা সংক্রান্ত আর কোনও খবরই চমক তৈরি করেনি। আজও

সন্ধে পর্যন্ত পিটারের গ্রেফতারির বিন্দুমাত্র সম্ভাবনার কথা জানতে পারেনি সংবাদমাধ্যম।

শুধু সংবাদমাধ্যম নয়, জানতেন না পিটারের আইনজীবীও! মহেশ জেঠমলানী নিজে এ দিন টিভি চ্যানেলে দাবি করেন, পিটার গ্রেফতার হয়েছেন এমন কোনও খবর তাঁর কাছে নেই। তিনি এও বলেন, সন্ধে ৭টা ৪০ মিনিটে পিটার তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। সেখানেও গ্রেফতারের প্রসঙ্গ নেই। মহেশের কথায়, ‘‘গ্রেফতারের খবরটা সত্যি হলে আমি অত্যন্ত অবাক হব। ৭টা ৪০ নাগাদ তো পিটার হোয়াটসঅ্যাপে জানাল, সিবিআই ওকে জেরা করছে, তাই কথা বলতে পারবে না। পরে ফোন করবে।’’

তার আগে এ দিনই সন্ধে সওয়া ছ’টা নাগাদ শিনা বরা হত্যা মামলার চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। আগামী কাল, ২০ নভেম্বর এই মামলার তিন প্রধান অভিযুক্ত ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়, তাঁর প্রাক্তন গাড়িচালক শ্যাম রাই এবং প্রাক্তন স্বামী সঞ্জীব খন্নার বিচারবিভাগীয় হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তার আগের দিনই হাজার পাতার চার্জশিট জমা পড়ল। তার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে রেকর্ড করা চালক শ্যাম রাইয়ের গোপন বয়ান রয়েছে। রয়েছে এইমস-এর ফরেন্সিক রিপোর্ট, যেখানে রায়গড়ার জঙ্গলে পাওয়া হাড়গোড় এবং দেহাংশ শিনার বলেই জানানো হয়েছে। অভিযোগ, শিনাকে গাড়ির মধ্যে শ্বাসরোধ করে মেরে ওই জঙ্গলে পুড়িয়ে দেন ইন্দ্রাণীরা। এ কাজে তাঁকে সাহায্য করেন তাঁর চালক শ্যাম এবং প্রাক্তন স্বামী সঞ্জীব। শিনা এবং তার ভাই মিখাইল ইন্দ্রাণীর আগের প্রেমিক সিদ্ধার্থ দাসের সন্তান। যদিও পিটারকে বিয়ে করার পর থেকে ইন্দ্রাণী মিখাইল আর শিনাকে সমাজের কাছে নিজের ভাই-বোন বলে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন।

পিটারকে এ দিন দুপুর থেকেই সিবিআই দফতরে ডেকে পাঠিয়ে জেরা করা হচ্ছিল। ছিলেন পিটারের ছেলে রাহুলও। এই রাহুলের সঙ্গেই শিনার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, যা ইন্দ্রাণী মেনে নেননি বলে পিটার নিজেই আগে জানিয়েছিলেন। তদন্তের দায়িত্ব যখন মুম্বই পুলিশের হাতে ছিল, সে সময়ও পিটারকে দিনের পর দিন লম্বা সময় ধরে জেরা করা হয়েছে। রাকেশ মারিয়া নিজেও তাঁকে জেরা করতেন। পরে মারিয়ার সঙ্গে পিটারের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। মারিয়ার জায়গায় নতুন কমিশনার হন আহমেদ জাভেদ। যিনিও পিটারের ঘনিষ্ঠ বৃত্তেই প়ড়েন বলে পুলিশ মহলের অনেকের দাবি ছিল। মিডিয়া ব্যারন পিটারের প্রভাব-প্রতিপত্তির দিকটিও হেলাফেলা করার নয় বলে তাঁদের মত। শেষ পর্যন্ত মহারাষ্ট্র সরকার শিনা তদন্তের ভার একেবারে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়। অর্থাৎ শিনা মামলায় পিটারের ভূমিকা যথাযথ ভাবে খতিয়ে দেখার প্রশ্নটিই সিবিআই-কে ডেকে আনার পিছনে অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করে। সিবিআই এ দিন পিটারকে গ্রেফতার করে সেই বৃত্তটাই সম্পূর্ণ করল বলে মনে করা হচ্ছে।

গত তিন মাসে সিবিআই দফায় দফায় পিটারকে প্রায় ৫০-৬০ ঘণ্টা জেরা করেছে বলে খবর। সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, পিটার ইতিমধ্যেই বেশ কিছু প্রমাণ নষ্ট করেছেন, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তিন বছর ধরে শিনার দেখা নেই। অথচ পিটার এক বারও ব্যাপারটা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেননি। এটা বেশ রহস্যজনক। সিবিআইয়ের আর একটি সূত্রের দাবি, ইন্দ্রাণীর বয়ানের ভিত্তিতেই পিটারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণও পিটারের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, ইন্দ্রাণী তদন্তকারীদের কাছে অভিযোগ করেছেন যে, শিনা তাঁর সঙ্গে পিটারের সম্পর্ক ভাঙার চেষ্টা করছিলেন। সে দিক থেকেও পিটারের নামটা তদন্তে বারবার উঠে আসছিল।

২০১২ সালে শিনাকে যখন খুন করা হয়, সে সময় পিটার ভারতে ছিলেন না বটে। কিন্তু তার মানেই যে তিনি এই খুনের ব্যাপারে কিচ্ছুটি জানতেন না বা এই খুনের ষড়যন্ত্রে তিনি কোনও ভাবে জড়িত ছিলেন না— এমনটা মনে করছে না সিবিআই। পিটার যে বয়ান বদল করছেন, সংবাদমাধ্যমেও তার সাক্ষ্য আছে। প্রথম দিন পিটার বলেছিলেন, শিনা যে ইন্দ্রাণীর মেয়ে সেটা তিনি জানতেন না। বোন বলেই জানতেন। নিজের ছেলে রাহুলের কথা তিনি নাকি বিশ্বাস করেননি। পরে সেই পিটারই স্বীকার করেন, শিনা নিজে তার আসল পরিচয় তাঁকে জানিয়েছিল। পিটার-ইন্দ্রাণীর তৈরি করা আইএনএক্স মিডিয়ার (পরে ওঁরা সংস্থাটি ছেড়ে দেন) টাকাকড়ি ওঁদের দু’জনের অ্যাকাউন্টের সঙ্গে শিনার অ্যাকাউন্টেও থাকত বলে সূত্রের দাবি। ফলে শিনার অনুপস্থিতিতে (ইন্দ্রাণীর দাবি ছিল, শিনা আমেরিকায় আছেন) সেই অ্যাকাউন্টে লেনদেন ঠিক কী ভাবে চলছে, সেটা নিয়েও পিটারের কেন সন্দেহ জাগল না, প্রশ্ন সেটাও।

গ্রেফতারের পরে আগামী কাল, শুক্রবারই কোর্টে তোলা হবে পিটারকে। ইন্দ্রাণীদের জেল হাজতের মেয়াদও কাল শেষ হচ্ছে। তা হলে কি আদালতেই মুখোমুখি হবেন ইন্দ্রাণী এবং তাঁর প্রাক্তন ও বর্তমান দুই স্বামী? সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। দক্ষিণ মুম্বইয়ে ‘মন্ত্রালয়’ (রাজ্য সচিবালয়)-এর কোণাকুণি উল্টো দিকে সিবিআইয়ের ‘এসআইটি অফিস’। অর্থাৎ স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিমের অফিস। আজকের রাতটা সেখানেই রয়েছেন পিটার। তাঁকে পরে দিল্লি নিয়ে যাওয়াও হতে পারে।

sheena bora murder case cbi arrest peter mukherjea
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy