Advertisement
E-Paper

শিনা-খুনে জড়িত পিটারও, কোর্টে জানাল সিবিআই

ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব খন্না, শ্যামবর রাই— শিনা বরা হত্যাকাণ্ডের প্রধান তিন অভিযুক্তের সঙ্গে আজ এক বন্ধনীতে ঢুকে পড়ল আরও একটা নাম। চার জনের মধ্যে ধারে ও ভারে তিনিই সব চেয়ে বেশি এগিয়ে। পিটার মুখোপাধ্যায়!

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:১২
আদালতের পথে পিটার-ইন্দ্রাণী। শুক্রবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই।

আদালতের পথে পিটার-ইন্দ্রাণী। শুক্রবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই।

ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব খন্না, শ্যামবর রাই— শিনা বরা হত্যাকাণ্ডের প্রধান তিন অভিযুক্তের সঙ্গে আজ এক বন্ধনীতে ঢুকে পড়ল আরও একটা নাম। চার জনের মধ্যে ধারে ও ভারে তিনিই সব চেয়ে বেশি এগিয়ে।

পিটার মুখোপাধ্যায়!

প্রাক্তন মিডিয়া ব্যারনকে আদালতে তুলে আজ সিবিআই অভিযোগ করল, সৎ মেয়ে শিনার হত্যাকাণ্ডে পিটারের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। খুনের ষড়যন্ত্রেরও তিনি অংশীদার। এমনকী পিটারের নিজের ছেলে রাহুল যখন তাঁর বান্ধবী শিনার খোঁজ করছিলেন, তখন পিটার তাঁকেও ভুল পথে চালিত করেছিলেন। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ, রাহুলকে পিটার বলেছিলেন, শিনা আছেন আমেরিকায়। তাঁর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। যদিও বাস্তবটা হল, তত দিনে শিনা খুন হয়ে গিয়েছেন!

তবে এ তো স্রেফ সত্য গোপন। সিবিআই যে ভাবে পিটারের বিরুদ্ধে সরাসরি খুন ও খুনের ষড়যন্ত্রের মামলা করেছে, তাতেই বেশি অবাক মিডিয়া মহল। আজ মুম্বইয়ের আদালতে সিবিআইয়ের কৌঁসুলি, অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অনিল সিংহ বলেন, অপরাধের আগে, পরে, অপরাধ হওয়ার সময়ে— বারবার ইন্দ্রাণীর সঙ্গে কথা হয়েছে পিটারের। ২০১২ সালের ২৪ এপ্রিল শিনা যখন খুন হন, পিটার তখন বিদেশে। কিন্তু সেই সময়টায় ইন্দ্রাণীর সঙ্গে তিনি যে ভাবে সর্বক্ষণ ফোনে যোগাযোগ রেখে গিয়েছেন, তেমন তিনি সচরাচর করতেন না। সিবিআইয়ের কৌঁসুলির কথায়, ‘‘ওই সময়টায় ২-৩ দিন ধরে প্রত্যেক বার ফোনে ২০-২৫ মিনিট করে কথা বলেছেন পিটার

ও ইন্দ্রাণী।’’

তা হলে কি শিনা খুনের ষড়যন্ত্র থেকে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে মৃতদেহ পুড়িয়ে দেওয়া— গোটাটাই জানতেন পিটার? এই সব দিক খতিয়ে দেখে সত্য উদ্ঘাটনই এখন চ্যালেঞ্জ সিবিআইয়ের। আদালতে তারা বলেছে, ইন্দ্রাণী ও শিনার মধ্যে যে ঝামেলা ছিল এবং পিটার যে তার মধ্যস্থতা করছিলেন, সেই প্রমাণ তাদের কাছে আছে। কিন্তু কেন ঝামেলা? এর কিছুটা উত্তর রয়েছে গত কাল জমা দেওয়া ১০০০ পাতার চার্জশিটে। চার্জশিট বলছে, ‘আগের পক্ষের মেয়ে বিধি-র প্রতি দুর্বলতা ছিল ইন্দ্রাণীর। তিনি আশঙ্কা করেছিলেন, রাহুল ও শিনা বিয়ে করলে সমস্ত সম্পত্তি হয়তো তাঁরাই

পেয়ে যাবেন। বঞ্চিত হবেন বিধি। সেই আশঙ্কা থেকেই বিধির বাবা সঞ্জীব ও গাড়িচালক শ্যামকে নিয়ে শিনাকে খুনের ছক কষেন ইন্দ্রাণী।’

বস্তুত, পিটার-ইন্দ্রাণীর মিডিয়া সাম্রাজ্য থেকে আর্থিক ভাবে কার কতটা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা ছিল বা আছে, দেখছে সিবিআই। আবার গোয়েন্দা সূত্র উদ্ধৃত করে একটি চ্যানেলের দাবি, সিবিআইয়ের অতিরিক্ত চার্জশিটে নাম থাকতে পারে এক পুলিশকর্তারও। তিন বছর আগে রায়গড়ার জঙ্গলে শিনার আধপোড়া দেহাংশ উদ্ধারের পর সে ভাবে তদন্তই করেনি স্থানীয় পুলিশ। সূত্রের দাবি, এই ঢিলেমির জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্তাকে অভিযুক্ত করা হতে পারে অতিরিক্ত চার্জশিটে।


সিবিআই অফিসে পিটার মুখোপাধ্যায়ের ছেলে রাহুল। শুক্রবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই।

শিনার মৃত্যুতে পিটারের স্বার্থ কোথায়? এ ক্ষেত্রেও কি জট সেই আর্থিক উত্তরাধিকার ঘিরে, নাকি রাহুল ও শিনার (যাঁরা আদতে সৎ ভাই-বোন) বিয়েতে আপত্তি ছিল তাঁরও? সিবিআইয়ের দাবি, শিনাকে খোঁজার চেষ্টা করেননি পিটার। বরং শিনার ব্যাপারে রাহুলকে তিনি যে মিথ্যে বলেছিলেন, তার প্রমাণ রাহুলের কাছেই আছে। রাহুল বাবার সঙ্গে তাঁর ওই কথোপকথন রেকর্ড করে রেখেছিলেন যেখানে পিটার বলেছিলেন, শিনা আছেন আমেরিকায়। যদিও পিটারই দাবি করেছিলেন, তিন বছর ধরে শিনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে তাঁকে বিভিন্ন ছবি দেখিয়েছেন ইন্দ্রাণী। তিনি নাকি বুঝতে পারেননি, প্রোফাইলটাই ভুয়ো! রাহুল অবশ্য আজ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘বিশ্বাস করি না, বাবা সব জানত। তা হলে আজ এখানে আসতাম না।’’ এ-ও বলেছেন, বাবা গ্রেফতার হওয়ায় তিনি অবাক। আজ পিটারের অনেক আগেই আদালতে নিয়ে আসা হয়েছিল ইন্দ্রাণী, সঞ্জীব ও শ্যামকে। গ্রেফতার হওয়া ইস্তক সম্ভবত আজই প্রথম বার প্রকাশ্যে মুখ আড়াল করেননি ইন্দ্রাণী। সবুজ ওড়নাটা ঘোমটার মতো করে জড়ানো ছিল মাথায়। আদালত থেকে বেরোনোর সময়ে ইন্দ্রাণী দাবি করেন, তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। তিনি নির্দোষ।

প্রাক্তন মিডিয়া ব্যারনকে কোর্টে হাজির করে সিবিআইয়ের কৌঁসুলি বলেন, দেশের বিভিন্ন শহর ও বিদেশে পিটারের আস্তানা রয়েছে। তাই তদন্তের স্বার্থে তাঁকে হেফাজতে নেওয়া দরকার। আদালত ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় পিটারকে। মাস তিনেক আগে স্ত্রী গ্রেফতার হওয়ার পর যিনি বলেছিলেন, ‘‘অপরাধ যে এই পর্যায়ে যেতে পারে, ভেবে স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছি!’’

cbi peter mukherjea murder sheena bora
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy