E-Paper

কমিশনের ‘বিহারই মডেল’, তবু উত্তর নেই গুচ্ছ প্রশ্নের

আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে শুক্রবার রাতে পটনা পৌঁছেছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ও অন্য দুই কমিশনার সুখবীর সিংহ সাঁধু এবং বিবেক জোশী। রাজ্যের ১২টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হয়েছিল শনিবার।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৫:১৩
বিহারে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।

বিহারে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। —নিজস্ব চিত্র।

বিহারে গিয়ে ভোটার তালিকার বিশেষ আমূল সংশোধন (এসআইআর) অভিযানকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে এলেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার! ভোটার তালিকা ‘সাফাই’ থেকে শুরু করে ভোটে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ, সব মিলিয়ে বিহার গোটা দেশের কাছে ‘মডেল’ হতে চলেছে বলেও মন্তব্য করলেন। সব বুথের ওয়েব কাস্টিং, ইভিএমে প্রার্থীদের রঙিন ছবি, বুথে গিয়ে ভোট-কেন্দ্রের বাইরে মোবাইল জমা রাখা-সহ ১৭ রকম নতুন ব্যবস্থা বিহারের ভোট থেকেই চালু করতে চলেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু চূড়ান্ত ভোটার তালিকা থেকে কাদের নাম কী ভাবে বাদ গেল, সে সব নিয়ে নানা প্রশ্ন উত্তরহীন রয়ে গেল!

আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে শুক্রবার রাতে পটনা পৌঁছেছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ও অন্য দুই কমিশনার সুখবীর সিংহ সাঁধু এবং বিবেক জোশী। রাজ্যের ১২টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হয়েছিল শনিবার। সে দিনই কমিশনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের ডাকে বৈঠকে হাজির ছিলেন ডিভিশনাল কমিশনার, জেলা নির্বাচনী আধিকারিক অর্থাৎ জেলাশাসক, পুলিশ সুপারেরা। আর রবিবার কমিশনের কর্তারা দফায় দফায় নির্বাচনের নোডাল অফিসার, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় বাহিনীর নোডাল আধিকারিক, রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং ডিজি-র সঙ্গে ভোটের প্রশাসনিক প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা সেরেছেন। তার পরে কমিশন জানিয়েছে, বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়া যে ভাবে সম্পন্ন হয়েছে, তাতে তার সন্তুষ্ট। নির্বাচনী প্রস্তুতির খুঁটিনাটিও খোঁজ নেওয়া হয়েছে। এর পরে ক’দফায় বিহারে বিধানসভা ভোট হবে, সেই নির্ঘণ্ট শীঘ্রই ঘোষণা করে দেওয়া হবে।

কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাতে কংগ্রেস, আরজেডি, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন, সিপিএম, সিপিআই-সহ বিরোধী দলগুলি দাবি জানিয়েছিল, খসড়া তালিকায় থেকেও চূড়ান্ত তালিকায় যে তিন লক্ষ ৬৬ হাজার ভোটার বাদ গিয়েছেন, তাঁদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হোক। প্রয়োজনীয় নথি দিতে না-পারায় কারা তালিকা থেকে বাদ পড়লেন, আর অন্যের ‘আপত্তি’র ভিত্তিতে কাদের নাম কাটা গেল, সেই তথ্য পরিষ্কার হওয়া দরকার। নতুন যে ২১ লক্ষের বেশি নাম খসড়া তালিকার সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে, সে ব্যাপারেও তথ্য দেওয়া হোক। যে ভোটার তালিকার ভিত্তিতে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে, সেই তালিকা নিয়ে সংশয় আগে দূর হওয়া উচিত বলে দাবি করেছে বিরোধী দলগুলি। এই সংক্রান্ত প্রশ্নে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ‘‘এসআইআর করার সিদ্ধান্ত এবং তা কার্যকর করার পদ্ধতি, সবই আইন মেনে হয়েছে। রাজ্যে ৯০ হাজারের বেশি বুথে গিয়ে বুথ লেভল অফিসারেরা (বিএলও) এসআইআর-এর কাজ করেছেন। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে আমরা জেনেছি, বিহারে কোথাও এই নিয়ে কোনও সমস্যা বা গোলমাল হয়নি। তার জন্য বিহারের মানুষকে অভিনন্দন।’’ ভোট-মুখী রাজ্যেই কেন এসআইআর হচ্ছে, প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। জ্ঞানেশের মতে, ‘‘আগে ভোট হয়ে যাবে, তার পরে ভোটার তালিকা সংশোধন হবে— এটা কি কখনও ন্যায়সঙ্গত হতে পারে?’’

বিহারে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।

বিহারে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। —নিজস্ব চিত্র।

কিন্তু তালিকা থেকে নাম বাদ পড়া নিয়ে যে এত প্রশ্ন? মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য, ‘‘খসড়া তালিকা প্রকাশের পরে এক মাস সময় দেওয়া হয়েছিল আপত্তি বা সংশোধনের আবেদন করার জন্য। যা আবেদন এসেছে, খতিয়ে দেখা হয়েছে। এর পরেও কোনও রাজনৈতিক দল চাইলে মনোনয়ন জমা শুরু হওয়ার ১০ দিন আগে পর্যন্ত আপত্তি জানাতে পারে। আর কোনও ব্যক্তি যদি মনে করেন অন্যায় ভাবে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, তা হলে জেলাশাসক, এমনকি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) কাছেও আবেদন করতে পারবেন।’’ যদিও বিরোধীদের বক্তব্য, তার নিষ্পত্তি হতে হতে ভোটটা হয়ে যাবে! ভোটার তালিকার নথি হিসেবে গ্রহণ করলেও আধার কার্ড যে জন্ম তারিখ বা বাসস্থানের শংসাপত্র নয়, সে কথাও ফের ব্যাখ্যা করেছেন জ্ঞানেশ।

বাদ যাওয়া ভোটারদের তালিকা প্রকাশ নিয়ে কমিশন যেমন স্পষ্ট কোনও আশ্বাস দেয়নি, তেমনই পাল্টা সুর চড়িয়েছে কংগ্রেসও। তাদের নতুন অভিযোগ— গোপালগঞ্জ, সারণ, বেগুসরাই, সমস্তিপুর, ভোজপুর, পূর্ণিয়া-সহ কিছু জেলার অম্তত ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্র ( যেখানে এনডিএ ও মহাজোটের জোর টক্কর হয়েছিল গত বার) থেকে ২৩ লক্ষ মহিলা ভোটারের নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী অলকা লাম্বার দাবি, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ইশারায় কমিশন এই কাজ করেছে। এই মহিলাদের যদি নথিপত্র ঠিক না থাকে, তা হলে তাঁরা ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিলেন কী ভাবে এবং সেই ভোটের ভিত্তিতে সরকার গঠন হল কী ভাবে!’’ বিজেপির বিহার রাজ্য সভাপতি দিলীপ জায়সওয়াল অবশ্য এ সবই ‘পরাজয়ের আগাম অজুহাত’ বলে নস্যাৎ করে দিয়েছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Special Intensive Revision Bihar Election Commission of India

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy