ফাইল চিত্র।
কোভিডের ধাক্কায় সারা দেশে তালা ঝুলে গিয়েছে প্রতি ১০০টির মধ্যে ৯টি (৯%) ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্পেই। বিরোধীদের দাবি, এর অর্থ, অতিমারির একের পর এক ঢেউয়ের জেরে প্রায় ৫৭ লক্ষ ছোট-মাঝারি সংস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার সংসদে রাহুল গাঁধী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা কবুল করল কেন্দ্রীয় ছোট-মাঝারি শিল্প মন্ত্রক। একই সঙ্গে জানাল, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০-তে (কোভিডের বছরে) ব্যবসায়ীদের আত্মহত্যার সংখ্যাও বেড়েছে। তবে তাঁদের মধ্যে কত জন ছোট-মাঝারি সংস্থার মালিক ছিলেন, সে তথ্য সরকারের কাছে নেই।
বিরোধী জোট গড়া ঘিরে কংগ্রেসের সঙ্গে এখন তৃণমূল কংগ্রেসের নিত্যদিন রেষারেষি। বিজেপির বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার জন্য তৃণমূল নিয়মিত কংগ্রেসকে নিশানা করছে। কংগ্রেসের বক্তব্য, তৃণমূল আখেরে সুবিধা করে দিচ্ছে বিজেপিরই। এই আবহে এ দিন কিন্তু কংগ্রেসের রাহুল গাঁধী ও তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত একই সুরে কোভিডের জেরে দেশে ছোট-মাঝারি শিল্প কতখানি ধাক্কা খেয়েছে, তা নিয়ে লোকসভায় প্রশ্ন জমা দিয়েছিলেন। রাহুলের প্রথম প্রশ্ন ছিল, সরকার কি ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীদের আত্মহত্যার সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে অবহিত? অভিষেকের প্রশ্ন ছিল, সরকার কি কোনও ক্ষতিপূরণের বন্দোবস্ত করেছে?
রাহুলের প্রশ্নের লিখিত উত্তরে ছোট-মাঝারি শিল্পমন্ত্রী নারায়ণ রাণে জানান, জাতীয় অপরাধ খতিয়ান বুরোর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ৯০৫২ জন ব্যবসায়ী আত্মহত্যা করেছিলেন। ২০২০ সালে তা বেড়ে ১১,৭১৬-তে পৌঁছেছে। তবে এর মধ্যে কত জন ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ী, তার হিসেব বুরোর কাছে নেই। একই ভাবে, অভিষেকের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী জানিয়েছেন, ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীদের আত্মহত্যার হিসেব মন্ত্রক রাখে না।
সরকারের বক্তব্য, গত বছর অগস্টে, কোভিডের জেরে লকডাউনের পরে ‘ন্যাশনাল স্মল ইন্ড্রাস্ট্রিজ কর্পোরেশন’ দেশ জুড়ে একটি অনলাইন সমীক্ষা চালিয়েছিল। তখন দেখা যায়, ৯১ শতাংশ ছোট-মাঝারি সংস্থা চালু থাকলেও, ৯ শতাংশ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেসের দাবি, দেশে প্রায় ৬.৬৩ কোটি ছোট-মাঝারি সংস্থা রয়েছে বলে অনুমান। তার মানে, সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এর মধ্যে ৫৭ লক্ষ সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
রাহুল জানতে চেয়েছিলেন, কেন্দ্র ছোট-মাঝারি শিল্পের জন্য কী করেছে? আর অভিষেক জানতে চেয়েছেন, সরকারি দাওয়াইয়ে কি কিছু লাভ হয়েছে? মোদী সরকার দাবি করেছে, লকডাউনের সময় থেকেই ছোট-মাঝারি সংস্থার জন্য ঋণের জোগান, ঋণ গ্যারান্টির মতো বিভিন্ন পদক্ষেপ করা হয়েছে। রাহুলের প্রশ্নে সরকারের উত্তর, কোভিডের ধাক্কায় ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলি ঋণ শোধ করতে পারছে না। ফলে এই ক্ষেত্রে অনুৎপাদক সম্পদের (এনপিএ) পরিমাণ বাড়ছে। কোভিডের আগের অর্থবর্ষের (২০১৯-২০) শেষ দিকে ছোট-মাঝারি সংস্থার জন্য মুদ্রা ঋণে এনপিএ-র পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা। কোভিডের বছরে, ২০২০-২১ সালের শেষে তা ৩৪ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে গিয়েছে।
বিরোধীরা বলছেন, মোদী জমানায় মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের মতো ছোট-মাঝারি শিল্পও বিধ্বস্ত। বুধবারই দেশের ১৭০টি ছোট-মাঝারি শিল্প সংগঠনের ঐক্যমঞ্চ কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ২০ ডিসেম্বর উৎপাদন বন্ধ রাখার ডাক দিয়েছে। প্রায় ২৫-৩০ হাজার কোটি টাকার লোকসান ও রোজগার নষ্ট হলেও ছোট-মাঝারি শিল্পকে এই পথে হাঁটতে হচ্ছে বলে তাদের দাবি। বিরোধীদের মতে, এ থেকে স্পষ্ট, মোদী সরকারের দাওয়াইয়ে কোনও লাভ হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy