এ বারের জনগণনায় সরাসরি জনতাকে জোড়ার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। তাই এই জনগণনায় কোনও পরিবার চাইলে জনগণনা সংক্রান্ত ফর্মে নিজেদের তথ্য নিজেদেরই জানিয়ে দেওয়ার সুযোগ থাকছে। সে ক্ষেত্রে বাড়িতে আসা জনগণনাকর্মীদের আলাদা করে তথ্য জানানোর প্রয়োজন হবে না সেই পরিবারের।
জনগণনার কাজ দ্রুত করতে এ বার বিশেষ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে তথ্য সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রেজিস্ট্রার জেনারেল অ্যান্ড সেন্সাস কমিশনার অব ইন্ডিয়া (আরজিসিসিআই) জানিয়েছে, জনগণনা সংক্রান্ত সেই অ্যাপটি মোবাইলে ডাউনলোড করে তাতে নিজের ও পরিবার সম্পর্কে তথ্য জানাতে পারবেন কোনও ইচ্ছুক পরিবার-প্রধান। সূত্রের মতে, সফল ভাবে তথ্য জমা পড়লে ইচ্ছুক তথ্যদাতা মোবাইলে একটি ‘অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ’ পাবেন। সেই স্লিপটি দেখালেই বাড়িতে আসা গণনাকর্মীদের নতুন করে তথ্য দিতে হবে না সেই পরিবারকে।
কেন্দ্রের মতে, এর ফলে কোনও ব্যক্তি নিঃসঙ্কোচে নিজের ও তাঁর পরিবার সম্পর্কে তথ্য জানাতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ বলা হচ্ছে, তামিলনাড়ুতে বসবাসকারী কোনও হিন্দিভাষী ব্যক্তির তামিল জনগণনাকর্মীর কাছে নিজের প্রথম ভাষা হিন্দি বলার ক্ষেত্রে দ্বিধা তৈরি হতে পারে। কারণ, ভাষা প্রশ্নে প্রবল সংবেদনশীল তামিলনাড়ুতে সে ক্ষেত্রে ওই পরিবারটির এলাকায় চিহ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। অসমে বড় হয়ে ওঠা কোনও বাঙালি পরিবারের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা হওয়া সম্ভব।
তা ছাড়া, অনেক ক্ষেত্রেই পারিবারিক সম্পত্তি (নিজের বাড়ি, মোটরবাইক বা গাড়ি আছে কি না) সংক্রান্ত তথ্য অচেনা ব্যক্তিকে জানানোর প্রশ্নে অনেকেই অস্বস্তিবোধ করেন। এ ধরনের ক্ষেত্রগুলিতে তথ্য লুকোনোর প্রবণতা অতীতে দেখা গিয়েছে। তাই তথ্যবিকৃতি এড়াতেই সরাসরি জনগণকে তথ্য জানানোর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
আবার এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। এ বারের জনগণনায় ৩৫টির কাছাকাছি প্রশ্ন থাকবে। কিছু প্রশ্ন আবার একাধিক ছোট প্রশ্নে বিভক্ত থাকবে। কোন প্রশ্নের উত্তরে নতুন করে প্রশ্ন করতে হবে, সে বিষয়ে গণনাকর্মীদের বিস্তারিত ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু আমজনতার সেই প্রশিক্ষণ না থাকায় ইচ্ছুক কোনও ব্যক্তি যখন নিজে থেকে তথ্য ভরবেন, সে ক্ষেত্রে ভ্রান্তির সুযোগ থেকে যায়। এর পাশাপাশি, পরিবার সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়ার সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আমেরিকায় এ ধরনের বিতর্ক এড়াতে স্বেচ্ছায় তথ্যদাতাদের একাংশের বাড়ি গিয়ে তথ্য মিলিয়ে (‘ক্রসচেক’ করে) দেখা হয়। ভারতেও সেই পদ্ধতি করা হবে কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা রয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)