আগামী বছর ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ গঙ্গা জলচুক্তি। এর মধ্যেই এই চুক্তি পুনর্নবীকরণের জন্য ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারের উপর চাপ দেওয়া শুরু করেছে নয়াদিল্লি।
আজ বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, বাংলাদেশের সঙ্গে সবচেয়ে দীর্ঘ সীমান্ত ভাগ করে নেওয়া রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই এই গঙ্গা জল চুক্তি পুনর্নবীকরণের ভবিষ্যৎ মডেল তৈরি হবে। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করায় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জায়সওয়াল বলেন, “ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে বয়েগিয়েছে ৫৪টি নদী। তার মধ্যে রয়েছে গঙ্গাও। এই নদী চুক্তির ব্যাপারে আমরা যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে সমন্বয় করছি।
পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আমাদের অভ্যন্তরীণ আলোচনা চলছে, কী ধরনের পদক্ষেপ করা হবে তা তৈরি করতে। যে পরিবেশে উভয়পক্ষের স্বার্থ রক্ষিত হয়, সেই পরিবেশে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সমস্ত বিষয়টি নিয়েই আলোচনায় প্রস্তুত।”
মার্চে ভারত-বাংলাদেশ নদী কমিশনের প্রতিনিধিরা কলকাতা গিয়ে বৈঠক করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে। তাঁরা যৌথ ভাবে ফরাক্কা ব্যারেজ পরিদর্শনও করেছিলেন। ফরাক্কা ব্যারাজ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নদীর জলবণ্টনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গঙ্গা থেকে নির্ধারিত পরিমাণ জল কী ভাবে পদ্মায় প্রবাহিত হচ্ছে, তা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করছিলেন দুই দেশের বিশেষজ্ঞেরা। তবে মার্চের পর বিষয়টির অগ্রগতি হয়নি।
সূত্রের খবর, কলকাতা বন্দরে জল কমে যাওয়া নিয়ে রাজ্যের উদ্বেগ রয়েছে। নতুন ভাবে ভারত-বাংলাদেশ গঙ্গার চুক্তির যে পুনর্নবীকরণ করা হবে, তাতে এই বিষয়টিকে মাথায় রাখতে কেন্দ্রকে অনুরোধ করেছে রাজ্য। এই ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং কেন্দ্র সমন্বয়ের মাধ্যমেই এগোচ্ছে বলে জানাচ্ছে দিল্লি।
এই চুক্তি নিয়ে আজ কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী চন্দ্রকান্ত আর পাটিল বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক স্তরে যা ঠিক হবে, আমরা সে ভাবেই কাজ করব।’’ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ১৯৯৬-এ বাংলাদেশের সঙ্গে কেন্দ্রের এইচ ডি দেবেগৌড়ার যুক্তফ্রন্ট সরকার ৩০ বছরের জন্য গঙ্গার জলবণ্টন চুক্তি করেছিল। তখন ঢাকায় শেখ হাসিনারই সরকার ছিল। সেই চুক্তির মেয়াদ ২০২৬-এ শেষ হচ্ছে। তার আগেই চুক্তির পুনর্নবীকরণ করতে হবে। ১৯৯৬-এ পশ্চিমবঙ্গের জ্যোতি বসুর সরকার গঙ্গার জলবণ্টন চুক্তিতে সদর্থক ভূমিকা নিয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ইতিমধ্যেই দিল্লিকে বার্তা দিয়েছে, রাজ্যের সঙ্গে কথা বলেই কেন্দ্রকে এগোতে হবে।
পাশাপাশি তিস্তা চুক্তি নিয়ে আজ কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রীবলেন, ‘‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন ঠিক নেই। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশে নেই। ফলে তিস্তা চুক্তি নিয়ে কবে কী হবে, তা বলা মুশকিল। পরিস্থিতি ঠিক হলে এ বিষয়ে এগোনোর চেষ্টা হবে।’’
গত বছর শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে তিস্তার একটি জলাধার তৈরি নিয়ে যৌথ সমীক্ষার বিষয়ে কথা হয়েছিল। তার পরেই ঢাকায় শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)