আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে জনগণনার কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তার দু’বছরের মধ্যেই লোকসভা নির্বাচন। পরবর্তী ওই নির্বাচনের আগে দেশ জুড়ে লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস ও তার ভিত্তিতে লোকসভায় মহিলাদের ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষিত করে ফেলা হবে বলে দাবি করলেন শীর্ষ পর্যায়ের এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
জাতীয় রাজনীতিতে মহিলাদের আরও বেশি অংশগ্রহণের কথা মাথায় রেখে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নারীশক্তি বন্ধন আইনটি পাশ করিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। ২০২৪ সালে লোকসভার আগে ওই বিলটি কার্যকর করার দাবি উঠলেও, সরকারের যুক্তি ছিল লোকসভাতে মহিলাদের ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়ার আগে লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন রয়েছে। আসন পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে লোকসভার সামগ্রিক আসন সংখ্যা বৃদ্ধি হলে তবেই মহিলাদের সংরক্ষণ দেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু সেই আসন পুনর্বিন্যাস হওয়ার আগে প্রয়োজন জনগণনার কাজ শেষ করা। ইতিমধ্যেই ২০২৭ সালের ১ মার্চের মধ্যে জনগণনা সেরে ফেলা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। ওই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবি, ‘‘জনগণনার কাজ ২০২৭ সালে শেষ করে ফেলা হবে। যার উপরে ভিত্তি করে তার দু’বছরের মধ্যে প্রথমে লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস ও পরবর্তী ধাপে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষিত করা হবে।’’
কেন্দ্রীয় ওই মন্ত্রী দাবি করলেও, জনগণনার সঙ্গে যুক্ত রেজিস্টার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার কর্তাদের মতে, যে পরিমাণ সময় রয়েছে তাতে তিনটি ধাপের কাজ সেরে ফেলা বেশ কঠিন। কারণ জনগণনার প্রাথমিক ফল সামনে আসবে ২০২৭ সালের ৩১ মার্চ। পরবর্তী ধাপে বিভিন্ন রাজ্যভিত্তিক তথ্য আসতে আরও ছয়-সাত মাস সময় লাগবে। অর্থাৎ গোটা ২০২৭ সাল লেগে যাবে ওই তথ্য হাতে আসতে। পরবর্তী ধাপে জনসংখ্যার ভিত্তিতে হওয়া আসন পুনর্বিন্যাস করতে প্রয়োজন হবে এলাকা ভিত্তিক তথ্য। যে নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যেমন সময়সাপেক্ষ তেমনই ওই তথ্য ব্যবহারের প্রশ্নে রাজ্যের অনুমতি প্রয়োজন হয়ে থাকে। ফলে বিষয়টি রাজ্য-কেন্দ্র জটিলতায় ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
যদিও স্বরাষ্ট্র সূত্রের মতে, এক বার এলাকাভিত্তিক জনসংখ্যার তথ্য হাতে এলে লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস করার কাজ শুরু করে দেওয়া হবে। তার আগেই অবশ্য আসন পুনর্বিন্যাস কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে সরকার। যে কমিশন গোটা দেশ ঘুরে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে জনগণনায় পাওয়া নতুন জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি চূড়ান্ত করবে। একটি সূত্রের মতে, বর্তমানের ৫৪৩টি আসনের পরিবর্তে নতুন জনসংখ্যার নিরিখে প্রায় আটশোটি লোকসভা আসন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা সংবিধান সংশোধনী এনে সংসদে পাশ করাতে হবে সরকারকে। পরবর্তী ধাপে আটশোটি আসনের মধ্যে ৩৩ শতাংশ বা ২৬৭টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। সেই মহিলা আসন সংরক্ষণের সূত্র কী হবে তারও কোনও দিশা দিতে পারেনি সরকার।
ওয়াকবহাল শিবিরের মতে, জনগণনার কাজ শেষ হতে ২০২৭ সালের প্রায় গোটাটাই লেগে যাবে। সে ক্ষেত্রে জনগণনার ভিত্তিতে হওয়া আসন পুনর্বিন্যাস ও তার ভিত্তিতে মহিলা সংরক্ষিত আসন চিহ্নিত করার জন্য লোকসভার আগে মাত্র এক বছর সময় থাকবে সরকারের হাতে। ওই এক বছরে ওই পরিমাণ সরকারি কাজ শেষ করা কঠিন বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। যদিও ওই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবি, এ বারে জনগণনার কাজ সব ডিজিটাল পদ্ধতিতে হবে। ফলে বোতাম টিপলেই তথ্য সামনে চলে আসবে। ফলে অতীতে যা সময় লেগেছে তার থেকে সময় কম লাগবে। তাই সরকার আশাবাদী ২০২৯ সালের লোকসভার আগেই লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস ও তার ভিত্তিতে মহিলাদের ৩৩% আসন সংরক্ষণের বিষয়টি সেরে ফেলা সম্ভব হবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)