কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের বাস্তবায়নে বড়সড় অনিয়মের অভিযোগ উঠে এল। প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনার আওতায় বেশ কিছু প্রশিক্ষণকেন্দ্রে নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে এমন ১৭৮টি ‘ট্রেনিং সেন্টার’ এবং ‘ট্রেনিং পার্টনার’কে কালো তালিকাভুক্ত করেছে কেন্দ্র। সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, কালো তালিকাভুক্ত হওয়া ‘ট্রেনিং সেন্টার’ এবং ‘ট্রেনিং পার্টনার’ সবচেয়ে বেশি রয়েছে উত্তরপ্রদেশে। তার পরেই রয়েছে দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থান।
দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা শুরু করেছিল কেন্দ্র। এই প্রকল্পের আওতায় তরুণদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাঁদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সুবিধা করে দেওয়ার জন্যই এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অভিযোগ, এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। কোথাও ভুয়ো নথিপত্র দেখানো হয়েছে। কোথাও আবার এমন প্রশিক্ষণকেন্দ্র দেখানো হয়েছে, যার কোনও অস্তিত্বই নেই। কোথাও পড়ুয়াসংখ্যা ভুল দেখিয়ে বেশি পরিমাণে বিল দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ।
‘ট্রেনিং সেন্টার’ বলতে বোঝায় যেখানে এই প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ‘ট্রেনিং পার্টনার’ বলতে বোঝায় যে সংস্থা (বা ব্যক্তি) এই প্রশিক্ষণ দেয়। ‘ট্রেনিং সেন্টার’ এবং ‘ট্রেনিং পার্টনার’ একই নামে নথিভুক্ত থাকতে পারে, আবার ভিন্ন নামও থাকতে পারে। প্রতিবেদন অনুসারে, যে ১৭৮টি প্রশিক্ষণকেন্দ্রকে কালো তালিকায় ফেলা হয়েছে, তার মধ্যে ১২২টিতে ‘ট্রেনিং সেন্টার’ এবং ‘ট্রেনিং পার্টনার’ ভিন্ন নামে নথিভুক্ত। বাকি ৫৬টিতে উভয়ই একই নামে নথিভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ধরা পড়েছে উত্তরপ্রদেশে। সেখানে ৫৯টি ‘ট্রেনিং সেন্টার’ এবং ‘ট্রেনিং পার্টনার’কে কালো তালিকাভুক্ত করেছে মন্ত্রক। এ ছাড়া দিল্লিতে ২৫টি, মধ্যপ্রদেশে ২৪টি এবং রাজস্থানে ২০টিকে কালো তালিকায় ফেলা হয়েছে। ঘটনাচক্রে, এই চার জায়গাতেই বর্তমানে বিজেপির সরকার রয়েছে।
এই তিন রাজ্য এবং এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেই সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ধরা পড়েছে। এ ছাড়া আরও কিছু রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বেশ কিছু প্রশিক্ষণকেন্দ্রকে কালো তালিকায় ফেলেছে কেন্দ্র। এর মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীর, মহারাষ্ট্র, ছত্তীসগঢ়, মিজ়োরাম, তেলঙ্গানা এবং তামিলনাড়ুর একটি করে প্রশিক্ষণকেন্দ্র কালো তালিকায় পড়েছে। ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ অনুসারে, ইতিমধ্যে সব রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রিন্সিপাল সচিবকে এবং এই প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা আধিকারিককে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্র। যে প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলি প্রকল্পের নিয়ম মানছে না বলে অভিযোগ, সেগুলির বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে।
আরও পড়ুন:
প্রতিবেদন অনুসারে, রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, প্রকল্প কী ভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, তার উপর ধারাবাহিক ভাবে নজরদারি চালানো হয়েছে। ওই নজরদারির প্রেক্ষিতে মন্ত্রক এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন পর্ষদ ১৭৮টি ‘ট্রেনিং সেন্টার’ এবং ‘ট্রেনিং পার্টনার’কে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। ওই ‘ট্রেনিং সেন্টার’ এবং ‘ট্রেনিং পার্টনার’দের থেকে টাকা পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপও শুরু হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন পর্ষদের মুখপাত্রের সঙ্গে বেশ কয়েক বার যোগাযোগের চেষ্টা করে ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’। তবে প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলিকে কালো তালিকায় ফেলা বা টাকা পুনরুদ্ধারের বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তথ্যের অধিকার আইনের আওতাতেও নিয়ম ভাঙা প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলির বিষয়ে ওই সংবাদমাধ্যম তথ্য চেয়েছিল জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন পর্ষদের কাছে। তবে গোপনীয়তা এবং তদন্তের স্বার্থের কথা উল্লেখ করা তারা কোনও তথ্য দেয়নি। তবে ১৮টি রাজ্যের আঞ্চলিক দক্ষতা উন্নয়ন দফতরের বেশ কয়েক জন আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ওই সংবাদমাধ্যম। তাঁদের অনেকেই জানিয়েছেন, এমন কালো তালিকাভুক্ত প্রশিক্ষণকেন্দ্রের তালিকা তাঁরা পেয়েছেন। ওই নিয়ম ভাঙা প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলির কার্যক্রমও বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।