বিধানসভায় পাশ করা বিলে সম্মতি দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালদের নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিলে ‘সাংবিধানিক অস্থিরতা’ সৃষ্টি হবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই বিষয়ে শীর্ষ আদালতের রায়ের বিপরীত অবস্থানে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্র। সময়সীমা বেঁধে দিতে গত এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর শীর্ষ আদালতের কাছে ১৪টি প্রশ্ন পাঠিয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। সেই ‘প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্স’-এর বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলির মতামত জানতে চেয়েছিল শীর্ষ আদালত। সেই প্রেক্ষিতেই কেন্দ্রের তরফে অবস্থান জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল রাজ্যপাল আটকে রাখছেন, বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি থেকে নিয়মিত ভাবে এই অভিযোগ উঠছে। বিল নিয়ে রাজ্যপালের তরফে ঢিলেমির অভিযোগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল তামিলনাড়ু সরকার। গত এপ্রিল মাসে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল, বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলে সম্মতি দেওয়ার বিষয়ে রাজ্যপালকে এক মাসের মধ্যে এবং রাষ্ট্রপতিকে তিন মাসের মধ্যে পদক্ষেপ করতে হবে। এরপর কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে লিখিত ভাবে শীর্ষ আদালতকে জানানো হয়েছে, এই সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার অর্থ, ভারতীয় সংবিধানে আইনসভা, সরকার ও বিচার বিভাগের ক্ষমতার মধ্যে যে সুক্ষ ভারসাম্য রয়েছে, তাকে হারানো। শাসন পরিচালনার একটি অঙ্গকে এমন ক্ষমতা দিয়ে দেওয়া, যার অধিকার তাদের নেই। এমন হলে ‘সাংবিধানিক অস্থিরতা’ তৈরি হবে বলেও যুক্তি দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আরও জানিয়েছেন, বিলে সম্মতির প্রক্রিয়ায় ‘সীমাবদ্ধ কিছু সমস্যা’ থাকতে পারে। কিন্তু এই কারণে রাজ্যপালের উচ্চ ক্ষমতাকে কিছুতেই লঘু করা যায় না। তাঁর যুক্তি, রাষ্ট্রপতি কিংবা রাজ্যপালের কাজের বিষয়টি নিয়ে ঘাটতির অভিযোগ উঠলে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক ভাবে তা মেটানোর পদ্ধতি রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ‘বিচার বিভাগের অনধিকার হস্তক্ষেপের’ প্রয়োজন নেই।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২০০ অনুযায়ী, বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলে রাজ্যপাল সম্মতি দিতে পারেন, রাষ্ট্রপতির মতামতের জন্য বিলটি তিনি আটকে রাখতে পারেন। পুনর্বিবেচনার জন্য বিলটি বিধানসভায় ফেরত পাঠাতেও পারেন। কিন্তু বিলটি ফের পাশ হলে রাজ্যপাল তা আটকে রাখতে পারেন না।
তবে গত ১২ এপ্রিল তামিলনাড়ু মামলায় রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে এই প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এরপর বিধানসভায় বিল পাশে রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির মতামত জানানোর ক্ষমতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ ২০০ এবং ২০১-এর বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে এ মাসের ১৯ তারিখ থেকে বিষয়টির শুনানি শুরু হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)