Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

কোভিশিল্ডের পরীক্ষা চলবে, জানাল কেন্দ্র

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সাপ্তাহিক সাংবাদিক বৈঠকে আজ এই কথা জানিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:৫০
Share: Save:

সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ডের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগে এক স্বেচ্ছাসেবক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে দাবি করলেও প্রাথমিক তথ্য খতিয়ে দেখার পরে ওই টিকার পরীক্ষা বন্ধ করার কোনও প্রয়োজন দেখা যাচ্ছে না। টিকা তৈরির সময়সীমার উপরেও এই ঘটনার কোনও প্রভাব পড়বে না। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সাপ্তাহিক সাংবাদিক বৈঠকে আজ এই কথা জানিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ।

চেন্নাইয়ের বাসিন্দা, বছর চল্লিশের ওই স্বেচ্ছাসেবক সিরামের কাছে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে দাবি করেছিলেন, গত ১ অক্টোবর টিকা নেওয়ার দশ দিন পর থেকেই মাথা ধরা, আলো ও শব্দে বিরক্তির মতো সমস্যার পাশাপাশি লোকজনকে চিনতেও সমস্যা হচ্ছিল তাঁর। পাল্টা ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করে সিরাম। আজ বিবৃতি দিয়ে সিরাম দাবি করেছে, তাদের টিকা ‘কোভিশিল্ড’ একেবারেই নিরাপদ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম। ওই স্বেচ্ছাসেবকের স্বাস্থ্যের বিষয়ে তারা উদ্বিগ্ন। কিন্তু তাঁর অসুস্থতার সঙ্গে এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কোনও যোগ নেই।

কেন্দ্রের বক্তব্য, যোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের। আইসিএমআর-এর ডিরেক্টর বলরাম ভার্গব বলেন, ‘‘টিকা বা ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়লে তা গুরুতর বলে মেনে নেওয়াও হয়। কিন্তু দুইয়ের মধ্যে যোগ আছে কি নেই, সমস্ত তথ্য বিচার করে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ডিসিজিআই। বিচার্য পাঁচটি বিষয় সংক্রান্ত কাগজপত্র ইতিমধ্যেই তাঁদের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।’’

ওই স্বেচ্ছাসেবকের স্ত্রী একটি চ্যানেলকে বলেন, ‘‘এমন একটা ঘটনা ঘটেছে দেখেও টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বন্ধ করা হল না কেন? কেন ওঁরা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হবেন না? স্বেচ্ছাসেবকদের আবার টিকা দেওয়ার আগে কেন সেটি সম্পর্কে তাঁদের জানানো হবে না?’’ তিনি জানান, বিপণনের পেশায় যুক্ত তাঁর স্বামী একজন সৃষ্টিশীল মানুষ। কিন্তু এখন তিনি কাজকর্মই করতে পারছেন না। একটি মার্কিন সংস্থার কাজ তাঁর হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। টিকা নেওয়ার পরে দু’সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। অথচ অনলাইনে টাকাপয়সার সামান্য লেনদেনও করতে পারছেন না ওই ব্যক্তি।

আইসিএমআর প্রধান কিন্তু জানিয়ে দিয়েছেন যে, বর্তমান ঘটনাটির ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যালোচনায় এমন কিছু পাওয়া যায়নি, যার জেরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বন্ধ করে দিতে হবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব এই ঘটনার গভীরে ঢুকতে চাননি। তবে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, সারা বিশ্বেই চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আগে একটি সম্মতিপত্রে সই করতে হয় স্বেচ্ছাসেবকদের। ওই ফর্মটিতে সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়ে বলা থাকে। সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবক সেটি বুঝতে পারলে তবেই সই করানো হয়। দ্বিতীয়ত, টিকা বা ওষুধের পরীক্ষা হয়ে থাকে বিভিন্ন রাজ্যের হাসপাতালে তৈরি পরীক্ষাকেন্দ্রে। প্রতিটি কেন্দ্রে স্বতন্ত্র এথিকস কমিটি থাকে, যারা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ঘটনা নজরে এলে ৩০ দিনের মধ্যে জিসিজিআই-কে জানায়। এ ছাড়া, তথ্য-সুরক্ষা ও নজরদারি সংক্রান্ত বোর্ডও থাকে।

সিরামের দাবি, সমস্ত নিয়ম মেনে, সব পক্ষের উপস্থিতিতেই গবেষণা চালিয়েছে তারা। বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘‘নিরাপদ প্রমাণিত না-হলে কখনওই ওই টিকা সাধারণ মানুষের জন্য আনা হবে না। টিকার বিষয়ে ভুল তথ্য দেওয়া হচ্ছে। সংস্থার ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে। সুনাম ও মান অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’ স্বেচ্ছাসেবকের স্ত্রীর বক্তব্য, আর্থিক বা অন্য কোনও ভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্য তাঁদের নেই। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টা সবাই জানুক, এটাই আমাদের প্রাথমিক দাবি। বলা হচ্ছে, এই টিকার দিকে তাকিয়ে

রয়েছে ভারত। আইনি নোটিস পাঠিয়েই আমরা কিছুটা মুনাফা করে নিতে পারতাম। কিন্তু আমাদের হৃদয় সেটা চায়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Covishield
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE