Advertisement
১১ মে ২০২৪

এনআরসি-তে নরম, কেন্দ্র অনড় এনপিআর-এ

পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলে ইতিমধ্যেই এনপিআর তৈরির প্রস্তুতি-প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়েছে। তৃণমূল, সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, এনপিআর-এর ভিত্তিতেই আগামী দিনে গোটা দেশে এনআরসি তৈরি হবে।

নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ। ফাইল চিত্র

নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:১৯
Share: Save:

দেশ জুড়ে বিক্ষোভের জেরে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে সুর নরম করলেও ‘ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার’ (এনপিআর)-এর কাজ বন্ধ করছে না নরেন্দ্র মোদী সরকার।

তাদের বক্তব্য, ২০২১-এর জনগণনার সঙ্গেই পূর্ব পরিকল্পনামাফিক এনপিআর-এর পরিমার্জনা ও সাম্প্রতিকতম তথ্য সংযোজনের কাজ করা হবে। আগামী বছরের এপ্রিল থেকেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে আদমসুমারি এবং এনপিআর পরিমার্জনের কাজ শুরু হয়ে যাবে। ২০২০-র সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই কাজ চলবে। আগামী সপ্তাহে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এর জন্য প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা মঞ্জুর হতে পারে। আদমসুমারির জন্য ৮,৭৫৪ কোটি টাকা এবং এনপিআর পরিমার্জনায় ৩,৯৪১ কোটি টাকা খরচ হবে।

পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলে ইতিমধ্যেই এনপিআর তৈরির প্রস্তুতি-প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়েছে। তৃণমূল, সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, এনপিআর-এর ভিত্তিতেই আগামী দিনে গোটা দেশে এনআরসি তৈরি হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে বিজেপির নেতারা বারবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, অসমের মতো গোটা দেশেই এনআরসি হবে এবং তার মাধ্যমে বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা হবে। তাই এনপিআর তৈরির প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়া জরুরি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক শীর্ষ সূত্রের অবশ্য দাবি, সংবিধান অনুযায়ী নাগরিকত্বের বিষয়টি কেন্দ্রের আওতায় পড়ে। ফলে কোনও রাজ্যই এনপিআর তৈরির কাজে বাধা দিতে পারে না।

ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনপিআর) কী

• এ দেশের বাসিন্দাদের পরিচিতি বহনকারী সার্বিক তথ্যভাণ্ডার।

• কোনও এলাকায় গত ছয় মাস ধরে বসবাসকারী ও পরের ছয় মাস সেখানেই থাকতে পারেন, এমন বাসিন্দার তথ্য নেওয়া হয়।

• ২০২১-এর আদমসুমারির সময় অসম বাদে অন্যত্র এনপিআর-এর জন্য তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হবে ২০২০-র এপ্রিলে। চলবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

• এনপিআর-এ নাম নথিভুক্ত করা ও তথ্য জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।

• ২০১১ সালে আদমসুমারির সময় প্রথম বার এনপিআর তৈরি হয়। ২০১৫-য় তা পরিমার্জন হয়।

এনআরসি-র সঙ্গে এনপিআর-এর ফারাক কী?

• এনপিআর-এ কে এ দেশের নাগরিক, কে নন, তা যাচাই করা হচ্ছে না। এনআরসি হলে নাগরিকত্ব যাচাই হবে

এনপিআর-এ আগে কী কী তথ্য চাওয়া হয়েছে?

১। নাম

২। বাড়ির বা পরিবারের প্রধানের সঙ্গে সম্পর্ক

৩। বাবার নাম

৪। মায়ের নাম

৫। লিঙ্গ

৬। বিবাহিত কি না

৭। বিবাহিত হলে স্বামী বা স্ত্রীর নাম

৮। জন্মস্থান

৯। জন্মতারিখ

১০। ঘোষিত নাগরিকত্ব

১১। বর্তমান ঠিকানা

১২। বসবাস কত দিন ধরে

১৩। স্থায়ী ঠিকানা

১৪। জীবিকা

১৫। শিক্ষাগত যোগ্যতা

২০২১-এর এনপিআর-এ অতিরিক্ত যে সব তথ্য চাওয়া হতে পারে

১। বাবা-মায়ের জন্মস্থান

২। বাবা-মায়ের জন্মতারিখ

৩। শেষ ঠিকানা

৪। পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড, আধার সংখ্যা (ঐচ্ছিক)

৫। মোবাইল নম্বর

এখন দেশ জুড়ে বিক্ষোভের মুখে মোদী সরকার এনআরসি-র বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে দাবি করলেও সরকারি কর্তারা বলছেন, এনপিআর-এর ভিত্তিতেই ভবিষ্যতে ‘ন্যাশনাল রেজিস্টার অব ইন্ডিয়ান সিটিজেন’ বা সর্বভারতীয় এনআরসি তৈরি হতে পারে। এনপিআর-এ এ দেশের বাসিন্দাদের নাম নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সেখানে নাগরিকত্ব যাচাই করা হয় না।

তবে সরকারি সূত্রের খবর, এ বার এনপিআর তৈরির সময় বাবা-মায়ের জন্মের স্থান ও তারিখ জানতে চাওয়া হবে। ২০১১-য় যখন প্রথম বার এনপিআর তৈরি হয়, তখন এই সব তথ্য চাওয়া হয়নি। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, সে সময় ১৫টি বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। এ বার ২১টি তথ্য চাওয়া হবে। বাবা-মায়ের জন্মের স্থান, তারিখ ছাড়াও শেষ ঠিকানা, পাসপোর্ট, আধার, প্যান, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার কার্ড, মোবাইল নম্বর চাওয়া হতে পারে। এনপিআর থেকেই যে এনআরসি-এর ভিত তৈরির কাজ শুরু হয়ে যাবে, এই সব তথ্য সংগ্রহ করা থেকে তার ইঙ্গিত মিলছে বলে অনেকের দাবি।

আরও পড়ুন:শিশুর মৃত্যু বারাণসীতে, তপ্ত বিহারও, উত্তরপ্রদেশে নিহত বেড়ে ১৬

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তব্য, এনপিআর জরুরি ভিত্তিতে পরিমার্জন করা দরকার। এক, অপরাধীদের গতিবিধির উপরে নজর রাখা এবং দুই, সঠিক ভাবে সরকারি প্রকল্প তৈরি ও রূপায়ণের জন্য। কিন্তু সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির অভিযোগ, ‘‘নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি, এনপিআর—সবই একে অপরের সঙ্গে জড়িত। এনপিআর তৈরি করে আগে সন্দেহজনক নাগরিকদের চিহ্নিত করা হবে। তার পরে এনআরসি এনে তাঁদের বাদ দেওয়া হবে।’’

তাৎপর্যপূর্ণ হল, কংগ্রেস এখনও এনপিআর-এর বিরোধিতা করছে না। কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যে এনপিআর-এর কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়নি। মনমোহন সরকারের আমলেই প্রথম ২০১১-তে আদমসুমারির সঙ্গে এনপিআর তৈরির কাজ হয়। তার পর ২০১৫ সালে তাকে ‘আপডেট’ করা হয়। কংগ্রেস নেতাদের অবশ্য যুক্তি, এনপিআর তৈরির জন্য সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল বাজপেয়ী সরকার। ২০০৩-এর ১০ ডিসেম্বর এ বিষয়ে ‘সিটিজেনশিপ (রেজিস্ট্রেশন অব সিটিজেনস অ্যান্ড ইস্যু অব ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ড) রুল’ জারি হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NRC NPR CAA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE