ক্ষমতায় এসে জমি আইন সংশোধন করে সংস্কারের সাহসিকতা দেখাতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তা নিয়ে ঘরে-বাইরে প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়ে শেষমেশ ষোলো আনা পিছু হটতে বাধ্য হল তাঁর সরকার। আজ যৌথ সংসদীয় কমিটিতে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ায় নতুন জমি বিলের ছ’টি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী তুলে নিল বিজেপি। ফলে সংস্কার প্রক্রিয়াও বড় ধাক্কা খেল বলে মনে করছে দল।
দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে শতাব্দী প্রাচীন জমি আইন সংশোধন করেছিল ইউপিএ সরকার। কিন্তু তা নিয়ে তীব্র আপত্তি ছিল শিল্পমহলের। কারণ, এই আইন অনুযায়ী শিল্প সংস্থার জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে গেলে ৮০ শতাংশ জমির মালিকের সম্মতি প্রয়োজন। সরকার-বেসরকারি যৌথ প্রকল্পের জন্যও ন্যূনতম ৭০ শতাংশের সম্মতি দরকার। শিল্পমহলের অভিযোগ, এই ভাবে জমি মালিকদের সম্মতি জোগাড় করে জমি কেনা প্রায় অসম্ভব কাজ। সরকারি আমলারাও স্বীকার করছিলেন, নতুন আইনকে সামনে রেখে জমি অধিগ্রহণ করা এখন দুঃসাধ্য ব্যাপার।
ঠিক এই প্রেক্ষাপটেই সাহস দেখাতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঠিক যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার একদা শিল্প সংস্থার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপে জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বুদ্ধবাবুর মতো মোদীর সঙ্গেও জনাদেশ রয়েছে। তিনি শিল্প করিডর, পরিকাঠামো, প্রতিরক্ষা কারখানা, আবাসন, গ্রামীণ পরিকাঠামো ও সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষমতা সরকারের হাতে এনে রাতারাতি বার্তা দিতে চেয়েছিলেন শিল্পমহলকে। সেই সঙ্গে এ-ও পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন, এই সব ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণের জন্য কৃষকদের প্রাক-সম্মতি নেওয়া হবে না। একই সঙ্গে এ সব ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণের ফলে কত লোকের জীবিকার উপর প্রভাব পড়ল, তারও সমীক্ষা করা হবে না। এ ছাড়াও বেসরকারি যে কোনও কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য সরকারই জমি পাইয়ে দিতে পারবে। বর্তমান আইন অনুযায়ী পাঁচ বছরের মধ্যে কাজ শুরু করা বাধ্যতামূলক ছিল, তা-ও বদলে আইনটিকে বিনিয়োগের অনুকূল করতে চেয়েছিল মোদী সরকার।