ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত। তার মাঝেই নতুন পদক্ষেপ করল নয়াদিল্লি। জম্মু ও কাশ্মীরের কিশতওয়ারে চন্দ্রভাগা নদীর উপরে নতুন একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে সম্মতি দিল কেন্দ্রীয় সরকারের প্যানেল। সিন্ধুচুক্তির শর্ত অনুসারে, চন্দ্রভাগার জল পাকিস্তানের ব্যবহার করার কথা। কিন্তু পহেলগাঁও হামলার পর এই চুক্তি স্থগিত করে দিয়েছে ভারত। তার পর থেকেই চন্দ্রভাগার উপর তথা সিন্ধু উপত্যকায় একের পর এক নতুন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিশতওয়ারের দুলহস্তী স্টেজ-২ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তার মধ্যে অন্যতম।
দুলহস্তী স্টেজ-২ ২৬০ মেগাওয়াটের প্রকল্প। কেন্দ্রের পরিবেশ মন্ত্রক এই প্রকল্পের জন্য সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, চলতি মাসে পরিবেশ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন কমিটি ৪৫তম বৈঠকে প্রকল্পটির কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই প্রকল্পের আনুমানিক খরচ ৩,২০০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে বহু টেন্ডার জমা পড়েছে। টেন্ডার ডেকে শীঘ্রই কোনও সংস্থাকে প্রকল্পের বরাত দিয়ে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন:
-
ভারতীয়দের এইচ-১বি ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল কেন? উদ্বিগ্ন কেন্দ্র, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কথাও বলল বিদেশ মন্ত্রক
-
ট্রাম্পের সঙ্গে জ়েলেনস্কির বৈঠক চূড়ান্ত হতেই শত্রু দেশে হামলা রাশিয়ার! পর পর গোলাবর্ষণ, যুদ্ধের ঝাঁজ বাড়ালেন পুতিন
-
ভারতকে সতর্ক করা মার্কিন রিপোর্ট খারিজ করে পাল্টা বার্তা দিল চিন! অরুণাচলে নজর এবং পাকিস্তান-প্রীতি নিয়ে কী যুক্তি
দুলহস্তী স্টেজ-২ প্রকল্পে সম্মতি দেওয়ার আগে কেন্দ্রীয় প্যানেলের বৈঠকে সিন্ধুচুক্তির প্রসঙ্গ ওঠে। চন্দ্রভাগার জল যে চুক্তি অনুযায়ীই ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে ভাগ হয়, বৈঠকে সে কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। বলা হয়, চুক্তি অনুযায়ীই প্রকল্পটির পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে ২০২৫ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে সিন্ধুচুক্তি স্থগিত রয়েছে। প্যানেল তা-ও বিবেচনা করেছে।
কিশতওয়ারে ৩৯০ মেগাওয়াটের দুলহস্তী স্টেজ-১ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ২০০৭ সাল থেকে সক্রিয়। চন্দ্রভাগার উপরে তারই সম্প্রসারণ করতে আগ্রহী ভারত সরকার। সেই কারণে ওই প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপ পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ বার তা বাস্তবায়িত হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, স্টেজ-১ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে একটি পৃথক নালার মাধ্যমে স্টেজ-২ বিদ্যুৎকেন্দ্রে জল যাবে। এই নালা লম্বায় ৩,৬৮৫ মিটার এবং চওড়ায় সাড়ে আট মিটার। প্রকল্পটির জন্য মোট ৬০.৩ হেক্টর জমি প্রয়োজন। তার মধ্যে কিশতওয়ারের দু’টি গ্রামের ৮.২৭ হেক্টর ব্যক্তিগত জমিও রয়েছে। সরকারকে তা অধিগ্রহণ করতে হবে।
সিন্ধুচুক্তি স্থগিত করার পর থেকেই তা নিয়ে একাধিক অভিযোগ করে এসেছে পাকিস্তান। আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ভারতের বিরুদ্ধে ‘নালিশ’ করেছে। কিন্তু লাভ হয়নি। ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু ও তার উপনদীগুলির মধ্যে পূর্বমুখী শতদ্রু, বিপাশা এবং ইরাবতীর জল ভারতের প্রাপ্য। তবে পশ্চিমমুখী সিন্ধু, চন্দ্রভাগা এবং বিতস্তার জলে পাকিস্তানেরও অধিকার রয়েছে। কিন্তু পহেলগাঁও হামলার প্রতিবাদে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হিসাবে এই চুক্তি স্থগিত করে দেয় ভারত।