E-Paper

গঙ্গা চুক্তির বাধা জলবায়ু বদল ও মমতার আপত্তি

গত ৩০ বছরে জলবায়ু পরিবর্তন এবং ভৌগোলিক পরিবর্তনের যে প্রভাব জলস্রোতে পড়েছে, তা-ও এই চুক্তি রূপায়ণের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪ ০৮:০২
Mamata Banerjee.

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিন দশকের পুরনো গঙ্গা চুক্তির নবীকরণের ক্ষেত্রে তৈরি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলি আপাতত ত্রস্ত রেখেছে ঢাকা এবং দিল্লিকে। এই চুক্তিতে তাঁর রাজ্যকে বঞ্চনা করা হচ্ছে বলে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিস্তার মতোই এই নদীর ক্ষেত্রেও তাঁর আপত্তি একটি বড় বাধা হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কিত বাংলাদেশ। পাশাপাশি, গত ৩০ বছরে জলবায়ু পরিবর্তন এবং ভৌগোলিক পরিবর্তনের যে প্রভাব জলস্রোতে পড়েছে, তা-ও এই চুক্তি রূপায়ণের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

গত মাসে নয়াদিল্লিতে শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় সফরের সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন, ২০২৬-এ দু’দেশের মধ্যে গঙ্গার জলবণ্টন চুক্তি নবীকরণের জন্য একটি কারিগরি আলোচনা শুরু করা হবে। সূত্রের খবর, এই আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল জলস্রোতের উপরে কী প্রভাব ফেলছে, তা একটি বড় বিষয় হতে চলেছে। উদ্দেশ্য, ২০২৬-এর চুক্তি যেন আগামী দিনেও সব দিক থেকে টেঁকসই হয়।

জলবায়ুর প্রভাব হোক অথবা জলতলের পরিবর্তন, বাংলাদেশের আশঙ্কা, চুক্তিতে যেমন রয়েছে, নবীকরণের পরে তার থেকে জলের পরিমাণ যদি সেই দেশে এতটুকুও কম যায়, তা হলে তাকে রাজনৈতিক ভাবে মেনে নেওয়া যাবে না। বাংলাদেশে ভারত-বিরোধিতা যেমন বাড়বে, হাসিনা সরকার সম্পর্কেও তিক্ততা তৈরি হবে। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এমনিতেই সে দেশে ভারত-বিরোধী মনোভাব প্রকাশ্যে এসেছিল পেঁয়াজ-সহ বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ঢাকায় রফতানি বন্ধ করার সিদ্ধান্তে।

গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তির শর্ত অনুযায়ী নদীতে ৭০ হাজার কিউসেক বা তার কম জল থাকলে দু’দেশ তা সমান ভাগ করে নেবে। জলের পরিমাণ ৭০ হাজার কিউসেক থেকে ৭৫ হাজার কিউসেক হলে ৩৫ হাজার কিউসেক পাবে বাংলাদেশ, অবশিষ্ট প্রবাহিত হবে ভারতে। প্রবাহ ৭৫ হাজার কিউসেক বা তার বেশি হলে ৪০ হাজার কিউসেক জল পাবে ভারত। অবশিষ্ট জল যাবে বাংলাদেশে। এ-ও চুক্তিতে রয়েছে ১১ মার্চ থেকে ১০মে পর্যন্ত সময়ে প্রতি দশ দিন অন্তর ভারত এবং বাংলাদেশ যাতে ৩৫ হাজার কিউসেক জল পায়, তা নিশ্চিত করা হবে।

সাম্প্রতিক বেশ কিছু সমীক্ষায় উঠে এসেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী তিন দশকে গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্রের জলতলের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের পরে নদীগুলিতে হঠাৎই প্রবাহ কমে আসতে পারে। ফলে নিম্ন অববাহিকার মানুষের পানীয় জল, সেচ ও জলবিদ্যুৎ তৈরিতে টান পড়তে পারে। ফলে এই চুক্তি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে বলেই দাবি বাংলাদেশ সরকারের।

এই ভৌগোলিক কারণগুলির পাশাপাশি তিস্তা চুক্তির পরে গঙ্গা নিয়েও মমতা সরকারের অনমনীয় মনোভাবও চিন্তায় রেখেছে ঢাকাকে। যদিও বিষয়টি তাদের হাতে নেই। এক সূত্রের বক্তব্য, “চুক্তি নবীকরণের জন্য হাতে মাত্র ১৮ মাস সময় রয়েছে। মমতার ভূমিকা এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।” আপাতত তৃণমূল সরকারের বক্তব্য, গঙ্গা চুক্তিতে রাজ্য সরকারও পক্ষ। কিন্তু নবীকরণের বিষয়ে রাজ্য সরকারকে কিছুই জানানো হয়নি। এই চুক্তি বাবদ রাজ্য সরকারের পাওনা টাকাও বকেয়া রয়েছে। গঙ্গায় ড্রেজ়িংয়ের কাজও বন্ধ, যা বাংলায় বন্যা এবং ভাঙনের প্রাথমিক কারণ হয়ে উঠেছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mamata Banerjee TMC India Bangladesh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy