মণিপুর নিয়ে আলোচনা হলেও লোকসভায় বিতর্কের কেন্দ্রে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক হিংসা!
মণিপুরে আরও ছ’মাস রাষ্ট্রপতি শাসন জারির প্রস্তাব আজ এনেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। তা নিয়ে বলতে গিয়ে তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার যখন সরকারকে আক্রমণ শানাচ্ছিলেন, সে সময়ে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। জবাবি বক্তব্যেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই বলেন, মণিপুরের অশান্তির চেয়ে অনেক বেশি মানুষ পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসায় মারা গিয়েছেন। বিতর্কের শেষে প্রস্তাবটি লোকসভায় পাশ হয়। সৌমিত্রের আচরণের প্রতিবাদে আগামিকাল সকাল থেকে লোকসভায় বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা রয়েছে তৃণমূল-সহ অন্য বিরোধী দলগুলির।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি অশান্ত মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়েছিল। অগস্টে তার মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। তাই নতুন করে আজ রাষ্ট্রপতি শাসন জারির প্রস্তাব আনে সরকার। তৃণমূলের কাকলি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী গত দু’বছরে একাধিক দেশে গেলেও, মণিপুরে যাওয়ার সময় পাননি।’’ মণিপুর (ইনার) সাংসদ এ বিমল আকৌইজামের মতোই কাকলিও দ্রুত বিধানসভা নির্বাচনের দাবি করে বলেন, “ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট হোক মণিপুরে।”
কাকলির বক্তব্যের সময়ে প্রতিবাদ জানাতে উঠে দাঁড়ান বিজেপির সৌমিত্র। তাঁকে বলতে শোনা যায়, তৃণমূল সাংসদদের হাতে বিজেপি কর্মীদের রক্ত লেগে রয়েছে। ফি দিন বিজেপি কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। তৃণমূলের অভিযোগ, ওয়েলে নেমে কাকলির দিকে তেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন সৌমিত্র। তখন কাকলিকে ঘিরে ফেলেন তৃণমূলের মহিলা সাংসদেরা। কাকলিকেও বলতে শোনা যায়, ও (সৌমিত্র) আসলে পাগল। প্রবল হইচই শুরু হয়ে যায়। স্পিকারের আসনে থাকা কংগ্রেস সাংসদ কুমারী শৈলজার কাছে সুরক্ষার দাবি করেন কাকলিরা। শৈলজা বলেন, শুধু আপনাদের নয়, গোটা লোকসভার সুরক্ষার দরকার। ক্ষুব্ধ শৈলজা অধিবেশন মুলতুবিকরে দেন।
এর পরে তৃণমূল ও অন্য বিরোধী মহিলা সাংসদেরা স্পিকার ওম বিড়লার ঘরে যান। তাঁরা স্পিকারকে জানান, লোকসভায় মহিলাদের অধিকার, নারী সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। এনসিপি-র সুপ্রিয়া সুলে বলেন, অথচ, অধিবেশন কক্ষেই মহিলাদের সুরক্ষা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন স্পিকার। পরে কাকলি দাবি করেন, বিজেপির অনেক সাংসদ তাঁর কাছে ব্যক্তিগত ভাবে দুঃখপ্রকাশ করে যান।
জবাবি বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, গত চার মাসে মণিরপুরে একটিও হত্যার ঘটনা ঘটেনি। ওই শান্তি ধরে রাখতেই আরও ছ’মাস রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তৃণমূলকে লক্ষ্য করে নিত্যানন্দ বলেন, ‘‘মণিপুর হিংসায় আড়াইশো জন মারা গিয়েছেন। কিন্তু তৃণমূলের শাসনে পশ্চিমবঙ্গে আড়াইশোর অনেক বেশি মানুষ রাজনৈতিক হিংসায় মারা গিয়েছেন। মহিলাদের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। তাই তৃণমূলের উচিত উস্কানি না দেওয়া।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)