Advertisement
E-Paper

টানা তিন দিন ধরে অক্লান্ত দৌড়! কিশ্তওয়াড়ে একাই ৬০ জনকে বাঁচালেন অ্যাম্বুল্যান্স চালক রশিদ

গত ১৪ অগস্ট মচৈল মাতা মন্দির দর্শনের জন্য কয়েকশো পুণ্যার্থী হাজির হয়েছিলেন চশোতীতে। বিকট শব্দে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসে কয়েক ফুট উঁচু পাথর আর কাদার স্রোত।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৫ ১৭:৪৮
Chasoti Ambulance driver Arif Rashid’s heroic act, saves more than 60 pilgrims in Kishtwar flood, ferries bodies for 3 days

কিশ্তওয়াড়ে ধ্বংসের ছবি। ছবি: পিটিআই।

টানা তিন দিনের অক্লান্ত পরিশ্রম। কখনও পুণ্যার্থীদের উদ্ধার করে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠানো। কখনও আহতদের হাসপাতালে নিয়ে ছোটা। পরক্ষণেই আবার হাসপাতাল থেকে বিপর্যস্ত এলাকার দিকে রওনা দেওয়া। এ সবের চোটে তিন দিন ধরে চোখের পাতা এক করতে পারেননি বছর বত্রিশের যুবক। একাই ৬০ জন পুণ্যার্থীকে বাঁচানো সেই আরিফ রশিদই এখন চশোতীর ‘নায়ক’!

১৪ অগস্ট। ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় দুপুর সাড়ে ১২টা। আচমকা হুড়মুড়িয়ে বিপর্যয় নেমে আসে জম্মু-কাশ্মীরের কিশ্তওয়াড়ের চশোতী গ্রামে। সে সময় অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নেমে পথে দাঁড়িয়ে দু’দণ্ড জিরিয়ে নিচ্ছিলেন রশিদ। হঠাৎ বিকট শব্দে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসে কয়েক ফুট উঁচু পাথর আর কাদার স্রোত। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দৌড়োতে শুরু করেন রশিদেরা। যতক্ষণে নিরাপদ এলাকায় পৌঁছোন, তত ক্ষণে ভয়াবহ সেই হড়পা বানে ভেসে গিয়েছে সব কিছু। নদীর ও পারের সেতুটি আর নেই। কয়েক মিনিট আগেও যেখানে অস্থায়ী খাবারের দোকান এবং ঘরবাড়ি ছিল, সেখানে এখন কয়েক ফুট কাদামাটির আস্তরণ। আশপাশের বহু মানুষ চাপা পড়ে গিয়েছেন সেই ধ্বংসস্তূপের নীচে। গোটা এলাকায় শুধু চিৎকার আর গোঙানির শব্দ!

মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন রশিদ। হড়পা বানে বিধ্বস্ত এলাকায় ফের ছুটে গিয়ে হাত লাগান উদ্ধারকাজে। সংবাদমাধ্যম টাইম্‌স অফ ইন্ডিয়াকে তেমনটাই জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। কাদামাটির নীচে চাপা পড়া এক প্রৌঢ়ার কেবল হাত এবং মুখ দেখা যাচ্ছিল। কাদা সরিয়ে হাত দিয়ে রশিদ তাঁকে টেনে বের করে আনেন। সেই শুরু। তার পর তিন দিন ধরে একটানা ৬০-এরও বেশি পুণ্যার্থীকে উদ্ধার করেছেন চশোতীর অ্যাম্বুল্যান্স-চালক। সরিয়েছেন মৃতদেহের স্তূপ। কখনও আবার আহতদের পৌঁছে দিয়েছেন হাসপাতালে।

প্রথম দু’ঘণ্টা একাই কাজ করছিলেন। জীবিতদের কাঁধে তুলে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া, আহতদের অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে ভাঙাচোরা এক কিলোমিটার রাস্তা ধরে গাড়ি চালিয়ে সেনাছাউনিতে পৌঁছে দেওয়া, তার পর ফিরে এসেই ফের ছুট। তখনও রশিদের সহকর্মী সুনীল কুমার নিখোঁজ। রশিদ ভেবেছিলেন, ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে রয়েছেন সুনীলও। এর কিছু ক্ষণ পর সুনীলের ফোন আসে। ঘটনাস্থল থেকে দূরে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন তিনিও। রশিদকে ফোনে পেয়ে ঘটনাস্থলে ফেরেন সুনীল। দু’জনে মিলে লেগে পড়েন কাজে। সন্ধ্যায় যখন এনডিআরএফ ও সেনার যৌথ উদ্ধারদল সেখানে পৌঁছোয়, তত ক্ষণে ৩০ জনেরও বেশি পুণ্যার্থীকে উদ্ধার করে ফেলেছেন দু’জনে।

গত ১৪ অগস্ট মচৈল মাতা মন্দির দর্শনের জন্য কয়েকশো পুণ্যার্থী হাজির হয়েছিলেন চশোতীতে। পুণ্যার্থীদের জন্য অস্থায়ী শিবিরও খোলা হয়েছিল। আবহাওয়া যে খুব দুর্যোগপূর্ণ ছিল, তা নয়। কিন্তু আচমকা মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে হড়পা বান নামায় কেউ নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে পারেননি। ফলে একের পর এক ঘরবাড়ি, পুণ্যার্থীদের অস্থায়ী শিবির হড়পা বানের গ্রাসে চলে যায়। শুরু হয় উদ্ধারকাজ। এনডিআরএফ ও সেনার দলের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তিন দিন ধরে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধারকাজ চালান রশিদের মতো স্থানীয়েরাও।

রশিদ কিজিয়াই গ্রামের বাসিন্দা। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ২০২২ সালে যোগ দেন ১০৮ অ্যাম্বুল্যান্স সার্ভিসে। মাসিক বেতন ১৪,০০০ টাকা। অবিবাহিত যুবকের বাড়িতে রয়েছেন বাবা-মা, দাদা এবং বৌদি। সেই রশিদের নামই এখন ফিরছে কিশ্তওয়াড়ের মানুষের মুখে মুখে।

KISHTWAR Cloud burst Flash flood
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy