Advertisement
০১ মে ২০২৪
Cheetah

চিতা এসে আমাদের কী লাভ, প্রশ্ন গ্রামবাসীদের

প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে সুদূর নামিবিয়া থেকে আটটি চিতা এনে ছাড়া হল মধ্যপ্রদেশের কুনো-পালপুর ন্যাশনাল পার্কে। শিবপুরী-শেওপুরের অধিবাসীদের কিন্তু হেলদোল নেই।

মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানে নামিবিয়ার চিতা। পিটিআই

মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানে নামিবিয়ার চিতা। পিটিআই

সংবাদ সংস্থা
শেওপুর শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:৪২
Share: Save:

সাত দশক পরে চিতারা ‘ফিরল’ ভারতে। ফিরল তাঁদেরই এলাকায়। শিবপুরী-শেওপুরের অধিবাসীদের কিন্তু হেলদোল নেই। ‘আমাদের দিন বদলায় নাকো মিতে’, এটাই সার বুঝেছেন ওঁরা। আর এক দল ভীত, ত্রস্ত। কারণ তাঁদের দিন খুব দ্রুতই বদলে যাবে, উচ্ছেদের খাঁড়া এগিয়ে আসবে, এই আশঙ্কায় ভুগছেন বাগচা গ্রামের অধিবাসীরা।

প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে সুদূর নামিবিয়া থেকে আটটি চিতা এনে ছাড়া হল মধ্যপ্রদেশের কুনো-পালপুর ন্যাশনাল পার্কে। নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, এই চিতারা এলাকার উন্নয়নের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠবে। কিন্তু এলাকাবাসীরা তা মনে করছেন কি?

যেমন শিবপুরী আর শেওপুরের মধ্যবর্তী গ্রাম কাকরা। সরকার বলছে, চিতাকে কেন্দ্র করে পর্যটনের যে উন্নতি হবে, তার সুফল পাবে এই এলাকা। কিন্তু সেটা হতে অন্তত ২০-২৫ বছর সময় লাগবে। তার আগে? এখন? রাজ্য সরকারের পরিসংখ্যানই বলছে, শেওপুর জেলাতেই অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা ২১ হাজার। কাকরা গ্রামের মানুষ সরাসরিই বলছেন, ‘‘চিতা এসে আমাদের দিন বদলাবে না।’’ কাকরার মতোই ন্যাশনাল পার্ক লাগোয়া ২৩টি গ্রাম এবং ৫৬ হাজার মানুষ নিত্য দারিদ্রের সঙ্গে লড়ছেন, অপুষ্টিতে ধুঁকছেন। চিতা তাঁদের জন্য কোনও আশার আলো বয়ে আনছে না এই মুহূর্তে।

আশা তো দূর, আশঙ্কাই বরং সম্বল হয়েছে শেওপুরের বাগচায়। ন্যাশনাল পার্কের সীমানার অভ্যন্তরে এই একটি গ্রামই টিকে ছিল উচ্ছেদের থাবা থেকে। চিতারা এসে তাঁদের ভিটেছাড়া হওয়ার ভয় আবার নতুন করে উস্কে দিয়েছে। ‘‘চিতাই আসুক বা সিংহ, আমরা জন্মভিটে ছেড়ে নড়ব না’’, বাগচার অধিবাসী গুট্টু আদিবাসী কঠিন গলায় বলেন। কিন্তু সফল হবেন কি? ৭৪৮ বর্গ কিলোমিটার কোর এলাকা-সম্বলিত কুনো-পালপুর অরণ্য থেকে জনবসতি হঠানোর কাজ গতি পেয়েছে পুরোদমে। বাগচার অধিবাসীরা ভিটে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, ক্ষতিপূরণের জন্যও লড়ছেন। গুট্টুর ছেলে-সহ অন্তত ৭০টি নাম ক্ষতিপূরণের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে বলে অভিযোগ।

১২৮ ঘরের এই গ্রামটির লড়াই অনেক দিনের। ১৯৮১ সালে কুনো-পালপুর অভয়ারণ্য বলে ঘোষিত হয়। কথা ছিল, গুজরাতের গির থেকে সিংহ নিয়ে আসা হবে এখানে। ১৯৯৮ থেকে ২০০৩-এর মধ্যে ২৪টি গ্রাম উচ্ছেদ হয়। সিংহেরা অবশ্য আসেনি। কিন্তু ২০১৮তে কুনো-পালপুর ন্যাশনাল পার্কের তকমা পেল। বাগচা গ্রাম উচ্ছেদ করার তোড়জোড় আবার শুরু হল নতুন করে।

বাগচার অধিবাসীরা মূলত সহরিয়া জনজাতির, বিশেষ ভাবে বিপন্ন জনজাতির তালিকায় রয়েছেন তাঁরা। বন দফতর বলছে, কাউকেই বঞ্চিত করা হবে না। ন্যায্য প্রার্থীরা সকলেই ক্ষতিপূরণ পাবেন। কিন্তু এত আয়োজন যার জন্য, সেটা সফল হবে তো? পরিবেশবিদদের একাংশ কিন্তু এ দেশে আফ্রিকান চিতার ভবিষ্যৎ নিয়েও সন্দিহান। তাঁরা মনে করাচ্ছেন, ভারতীয় বন্যপ্রাণ আইন (১৯৫২) অনুযায়ী নতুন প্রজাতির প্রাণী এ দেশের অরণ্যে আনা যায় না। যে কারণে মোদী সরকার চিতা প্রকল্পকে ‘রিইন্ট্রোডাকশন’ বা পুনঃপ্রবর্তন বলে বর্ণনা করেছে। কিন্তু যে চিতা ভারতে লুপ্ত হয়েছিল, সে ছিল এশীয় চিতা। তার জায়গায় যে এল, সে আফ্রিকান চিতা। ঘাসজমিতে তার বাস। অরণ্য কেটে এখন তার জন্য সেই আবাস তৈরি করতে হচ্ছে। চিতার সংখ্যা বাড়লে অরণ্যের চরিত্র পরিবর্তন করার প্রয়োজনও বাড়বে। সেটা পরিবেশের পক্ষে ভাল হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cheetah Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE